পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যানজট আর কোলাহলময় রাজধানীতে স্নিগ্ধতা সুযোগ মেলে শুধুমাত্র ভোরেই। ভোরের আকাশের রঙ নাকি হয় ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল আর নীল। তবে ছিনতাকারীদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃতির এই বিশেষ সময়টুকুও উপভোগ করার তেমন একটা সুযোগ হয় না রাজধানীবাসীর। কাকডাকা ভোরের বুকে ছিনতাই আতঙ্ক। এমনকি ছিনতাইয়ের এসব ঘটনায় জীবন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ৫০ থানার শতাধিক স্থানে ৫ শতাধিক ছিনতাইকারী তৎপর রয়েছে। চক্রটি ৩ থেকে ৪ জনের ছোট দলে ভাগ হয়ে অপরাধ সঙ্ঘটিত করে। ছিনতাইয় করতে বেশিরভাগ ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। কখনও কখনও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া পরিচয় দিয়ে তারা মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়।
ইনকিলাবের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভোরে পুলিশি নিরাপত্তায় অনেকটা ঢিলেঢালা থাকার সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইয়ের প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্র বা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। ছিনতাইকারীরা কখনও মোটরসাইকেল, কখনও প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস নিয়ে পথচারী বা রাস্তায় অপেক্ষমাণ ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট, মূল্যবানসামগ্রী, ভ্যানিটি ব্যাগ, হাত ঘড়ি ও গলার চেইন ছিনিয়ে নেয়।
গতকাল বুধবার টিকাটুলি র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। ফলে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সবাই মাদকাসক্ত। র্যাব অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত মঙ্গলবার ৭ জুন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত র্যাব-৩ এর কয়েকটি দল একযোগে রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের ৪৪জন সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
সম্প্রতি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ছিনতাই ঠেকাতে থানা পুলিশসহ সকল সেক্টরকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে সূত্র জানায়, ডিএমপির আটটি ক্রাইম জোনে ছিনতাইয়ের স্পটগুলোতে সাধারণত ছিনতাইকারীরা ভোরের দিকে অনেকটা বেপরোয়া থাকে। এরমধ্যে মোহাম্মদপুরের কলেজ গেট থেকে রিং রোড, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে মিরপুর-১, আগারগাঁও সংযোগ সড়ক, খিলক্ষেত থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক, কালশী রোড, মৌচাক মার্কেট থেকে মগবাজার, সদরঘাট থেকে সূত্রাপুর, সদরঘাট থেকে দয়াগঞ্জ, ওয়ারী, উত্তরা থেকে আব্দুল্লাহপুর, ঝিগাতলা থেকে রায়েরবাজার, ঝিগাতলা থেকে শঙ্কর, মিরপুরের রূপনগর বেড়িবাঁধ, গুলিস্তান থেকে পল্টন, সার্ক ফোয়ারা থেকে রমনা পার্ক, কাঁটাবন থেকে নীলক্ষেত, পলাশী থেকে আজিমপুর এবং যাত্রাবাড়ীর দোলাইরপাড় থেকে শ্যামপুর এলাকায় টানা পার্টি বেশি সক্রিয়।
এসবের মধ্যে রমনা, পল্টন, হাইকোর্ট মোড়, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুর রোড, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড ও মৌচাক এলাকায়ও সাদা গাড়ি নিয়ে টানা পার্টি সক্রিয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভোরে রাস্তায় পুলিশের টহল থাকে না। নির্ধারিত চেকপোস্টেও থাকে না পুলিশ। কিছু এলাকায় রাত ও ভোরে চেকপোস্ট থাকলেও সেখানে ট্রাফিক পুলিশের মতোই কেবল গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করা হয়। সেই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠে ছিনতাইকারীরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে পুলিশ সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ভুক্তভোগী অনেকের অভিযোগ, ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রতিকারও মেলে কম। কারণ ঘটনার পর অনেকে থানায় অভিযোগ বা মামলা করতে গিয়ে হতাশ হন। আর থানা এ ধরনের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের এলাকা ভালো দেখানোর মানসিকতায় রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র মতে, রাজধানীতে ৩০টির বেশি চক্র রয়েছে, যারা শুধু মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। মোবাইল সেট তারা আইএমই নাম্বার পরিবর্তন করে বিক্রি করে দেয়। সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ ভোরে মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় আলোচিত দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তার কাছে যে টাকা ছিল, সেগুলো নিতে না পারলেও ছিনতাইয়ের উদ্দেশেই এ ছুরিকাঘাত করা হয়। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ৪ জুন মাহমুদ হোসাইন নামে এক ব্যক্তি শাহবাগ থেকে রিকশায় সেগুনবাগিচা যাচ্ছিলেন। তিনি রমনা পার্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে তার কাছে থাকা মূল্যবান সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, পুরাতন থেকে নতুন নতুন ছিনতাইকারীর জন্ম হচ্ছে। পুলিশের সবসময়ই মনিটরিং আছে। শুধু ঘটনা ঘটলেই নয়, সব সময় মনিটরিং করা হয়। সব ঘটনার তদন্তও গুরুত্বের সঙ্গে করা হয়। ছিনতাইসহ সব ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার এবং নগরীবাসীদের নিরাপত্তায় পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ডিএমপির ৬টি বিভাগের তালিকা অনুযায়ী উত্তরা বিভাগে ৫২, মিরপুর বিভাগে ৫৬, গুলশান বিভাগে ৯৭, রমনা বিভাগে ১১৬, তেজগাঁও বিভাগে ১২২ ও ওয়ারী বিভাগে দেড় শতাধিক ছিনতাইকারী সক্রিয় রয়েছে। এদের বেশিরভাগই মাদকসেবী। ডিএমপি এবং সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন খাতার তথ্য বলছে, ২০১২ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সহস্রাধিক ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। এই ১০ বছরে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন অর্ধশত ব্যক্তি। কোন কোন থানা এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের হাতে একাধিক খুনও সঙ্ঘটিত হয়েছে।
রাজধানীতে ওই ১০ বছরে ঘটে যাওয়া খুনের মামলার নথিপত্রে দেখা যায়, চারটি খুন হয়েছে ভোরের দিকে। ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার সময় দু’জন নারী এবং একজন শিশু খুন হয়। নগদ টাকা নিয়ে ফেরার সময় ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন তিনজন। যাত্রীবেশে গাড়িতে তুলে আরও চারজনকে খুন করে সঙ্ঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয়ার সময় দু’জন চালক খুন হন। এছাড়াও খুন হয়েছেন ঢাকার বাইরে থেকে আসা ব্যাবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে ভোরে ছিনতাইকারীদের বাঁধা দিয়ে খুন হয়েছেন এমন বেশ কয়েকটি ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার পর পুলিশের বেশি তৎপরতা দেখা যায়।
পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্রিয় রয়েছে থানা পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা। সক্রিয় পাঁচ শতাধিক ছিনতাইকারীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মাদক ও ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের অবস্থান জিরো টলারেন্স।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন ছিনতাই স্পট চিহ্নিত করে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে বাড়ানো হয়েছে টহল। গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সঙ্ঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে র্যাবের অভিযানে অনেক ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।