Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বোরো মৌসুমে ধানের দর পতনে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক সর্বস্বান্ত, ঊর্ধমুখি চালের বাজারে সাধারণ মানুষের নভিশ্বাস

উৎপাদন ব্যয় ৮শ টাকার ওপরে হলেও বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৬শ টাকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২২, ৪:০৬ পিএম

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ করেও দর পতনে এবার প্রায় সর্বশান্ত দক্ষিনাঞ্চলের ২০ লক্ষাধিক বোরা চাষি। পাশাপাশি ভরা মৌসুমেই চালের বাজারে ঊর্ধমুখি ধারায় নিভশ^াস উঠছে নি¤œবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে। রবি মৌসুমে বৃষ্টির অভাবের সাথে ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধিতে এবার সেচব্যায় বেড়ে বোরোতে প্রতিমন ধানের উৎপাদন ব্যায় ৮শ টাকায় পৌছেছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার ২০ লক্ষাধিক কৃষক প্রতিমন বোরা ধান সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকার মধ্যে বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ এখন মধ্যম মানের এক মন চালের দাম আড়াই হাজার টাকার ওপরে। এবার ভড়া রবি মৌসুমে বৃষ্টি না হলেও মাঠে মাঠে যখন ধান পেকে আসছিল, তখনই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে প্রবল বর্ষণে দক্ষিনাঞ্চলের মাঠে থাকা আড়াই লক্ষাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান চরম বিপর্যয়ের শিকার হয়।

আর এ সুযোগকেই কাজে লাগায় মিল মালিকদের ফরিয়ার দল। বৃষ্টিতে ভেজা ধান ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকার মধ্যেই কিনে নেয় তারা। এখনো প্রতিদিনই বৃষ্টিতে ভিজছে মাঠে থাকা বোরো ধান। তবে ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৯৮ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুুরের প্রায় ৮৮ভাগ বোরা ধান কর্তন সম্ভব হলেও আবহাওয়া অনুকুল না থাকায় ধান শুকানো যাচ্ছে না। ফলে কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রী করতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টারে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। দেশে এবার ৪৮.৭৩ লাখ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে এযাবতকালের সর্বাধীক ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ হয়। ফলে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২.১১ কোটি টনে পৌছার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে দক্ষিনাঞ্চলে সহ সারা দেশে আগাম বৃষ্টির পাশাপাশি হাওড় এলাকায় বণ্যায় বিপুল পরিমান বোরো ধান বিনষ্ট সহ গুনগত মানও নষ্ট হয়েছে। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে সব ক্ষতি বাদ দিয়েই এখনো হেক্টর প্রতি ফলন চালেন হিসেবে ৪ টনের ওপরে রয়েছে।
এবার বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩% ও বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ হলেও ‘অশনি’তে ভর করে আসা বৃষ্টিপাত সহ পরবর্তি বর্ষণেও অন্তত ৫ ভাগ ধান বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়া আরো অন্তত ১০ ভাগের গুনগত মান বিনষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
এমনকি লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত আবাদ এবং ভাল ফলনেও দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মুখের হাসি উজ্জল হচ্ছে না । কারণ বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এবার যে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, তার ৯৫ভাগই ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র নির্ভর। অপরদিকে বৃহত্তর ফরিদপুরের ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টরে আবাদকৃত বোরো ধানের সেচ ব্যবস্থার প্রায় ৩৫ ভাগ ছিল ডিজেল নির্ভর। ফলে মৌসুমের শুরুতে ২৩% ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবার ধানের উৎপাদন ব্যায়ে বাড়তি বোঝা যোগ করে।
উপরন্তু কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধিও এবটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো বোরো সহ সব ধান কর্তনের ৯৫ ভাগই কৃষি শ্রমিক নির্ভর। বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একজন কৃষি শ্রমিকের মজুরী ৭শ টাকারও বেশী। অথচ একজন শ্রমিকের পক্ষে গড়ে ৩মন ধান কাটাও সম্ভব হচ্ছেনা। এর পরে জমি থেকে গৃহস্থের বাড়ীতে পরিবহন সহ মাড়াই খরচ রয়েছে।
ফলে বীজ সংগ্রহ থেকে জমি তৈরী, চারা উৎপাদন এবং রোপন সহ সেচ, সার, বালাইনাশক আর পরিচর্জা সহ প্রতিমন ধানের উৎপাদন ব্যায় এবার ৮শ টাকা বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। কিন্তু টানা ৪ মাসের কষ্টের সে ধান বিক্রী হচ্ছে সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ টাকা মন দরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘এতদিন কৃষকরা নিজের হাড়ভাঙা খাটুনি আর শ্রম দিয়ে ধান উৎপাদন করত বলে কিছুটা পুষিয়ে নিলেও এবার তাও একটা সম্ভব হয়নি না ডিজেলের মূল্য সহ কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির ফলে’। এ থেকে পরিত্রানে কৃষক পর্যায়ে সেচ ব্যায়ের ওপর ভর্তূকি প্রদান সহ ধান কর্তনে যান্ত্রিক সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবাহল মহল। নচেত, আগামী রবি মৌসুমে বোরো আবাদে কৃষকদের আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে বলেও মনে করছেন মহলটি। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে অনেকটাই ব্যহত করার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিকেও ঝুকির মুখে ফেলবে বলেও মনে করছেন কৃষিবীদগন। ১-৬-২০২২.
===========================================
।। নিউজটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিধায় ছবি সহ পুণঃ প্রেরন/
প্রয়োজনে সম্পাদক মহোদয়কে অবহিত করা যেতে পারে।।

 

দক্ষিণাঞ্চলে তুলার আবাদ ও উৎপাদনে আশার আলো দেখাচ্ছে

নাছিম উল আলম/ দেশের কৃষিখাতে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সাড়ে ৭ লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে পাট আবাদ সম্প্রসারনের পরে এখন তুলাতেও আশার আলো দেখাচ্ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে বরগুনার আমতলীতে একটি সম্প্রসারন উপকেন্দ্র স্থাপন করে বরিশাল, ঝালকাঠী এবং পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্নস্থানে তুলা আবাদ কর্মসূচী গ্রহন করেছে। গত রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২৫-৩০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে সরেজমিনে কৃষকদের হাতে কলমে তুলা আবাদ প্রযুক্তি ও বীজ হস্তান্তর করা হয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামিম দক্ষিণাঞ্চলে তুলা আবাদ নিয়ে গবেষনা শুরু করেছেন। বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পসেও এবার গবেষনা খামারে তুলার আবাদ করেছেন ড. শামিম। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবীদ মোঃ আক্তারুজ্জামান দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদনে আশাবাদ ব্যাক্ত করে বিষয়টি নিয়ে গবেষনা সহ বোর্ডের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। যা চহিদার মাত্র ২ ভাগেরও কম বলে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রনালয় দেশে তুলার আবাদী জমি ও উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। একইসাথে দেশে উচ্চ ফলনশীল তুলার আবাদী জমি বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষিনাঞ্চলের বিশাল অনাবাদী জমিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। দক্ষিণাঞ্চলে খরিপ-২ মৌসুমে আমান ধান ঘরে তোলার পরে বিপুল পরিমান জমি অনাবাদী থাকছে। এ অঞ্চলে গত খরিপ মৌসুমে ৭ লাখ ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টরে আমন আবাদ হলেও রবি মৌসুমে বোরো আবাদের পরিমান ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। এর বাইরে শীতকালীন শাকসবজি, গম, ভুট্টা ও তরমুজ সহ আরো প্রায় ১ লাখ হেক্টরে নানা রবি ফসল আবাদ হলেও ৫ লাখ হেক্টরই অনাবাদী থাকছে।
কৃষি মন্ত্রালয় দক্ষিণাঞ্চলে রবি মৌসুমে বিপুল কৃষি জমি অনাবাদী থাকা নিয়ে যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন। এরই প্রেক্ষিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড দেশের দক্ষিনাঞ্চলে কম থেকে মাঝারী লবনাক্ত ও খরা এলাকায় তুলা চাষ সম্প্রসারনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইব্রিড জাতের তুলাচাষ শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচীর আওতায় গত বছর বরিশাল সদর ও বাবুগঞ্জ সহ ঝালকাঠীর গাবখান এলাকা এবং বরগুনার আমতলী সহ সন্নিহিত কিছু এলাকায় পরিক্ষামূলকভাবে তুলার আবাদ শুরু হয়েছে। গত বছর বরিশাল ও ঝালকাঠীতে বেশ কিছু জমিতে তুলা আবাদে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মাঝারী লবনাক্ত জমিতে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে কৃষকদের হাতে কলমে উৎপাদন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে লবন সহিষ্ঞু জাত সহ ২০টি উচ্চ ফলনশীল তুলার জাত উদ্ভাবন করেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আরো নুতন জাত উদ্ভাবন সহ চাষীদের কাছে আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি দেশে তুলার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
আর তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল ও খুলনা সহ উপক’লীয় উচু ভ’মি সহ নদী তীরবর্তি কম থেকে মাঝারী লবনাক্ত জমিতে তুলার আবাদ সম্প্রসারনে কর্মসূচী গ্রহন করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এতেকরে আগামী ১০বছরে দেশে তুলার আবাদী জমির পরিমান আরো অন্তত দশ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি করা সম্ভব বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। ২৯-৫-২০২২/ ১-৬-২০২২.
==============================
দক্ষিণাঞ্চলে সরকারী হাপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়াল

বরিশাল ব্যুরো/ দক্ষিণাঞ্চলের অস্বস্তিকর ডায়রিয়া পরিস্থিতি এখনো জনজীবনে যথেষ্ঠ উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। গত ৪ মাসে দক্ষিনাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় ৪০ হাজারেরও বেশী ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এরমধ্যে গত এক মাসের সংখ্যাটাই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। এখনো বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল ও শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে ডায়রিয়া রোগীর ঠাই হচ্ছেনা। দক্ষিনাঞ্চলের বেশীরভাগ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালগুলোই ডায়রিয়া রোগীতে ঠাশা। গত এক সপ্তাহেই এসব হসপাতালে প্রায় আড়াই হাজার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তবে এর বাইরে বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক সহ চিকিৎসকদের চেম্বার থেকেও ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঘরে বসে বিপুল সংখ্যক ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। ওয়াকিবাহল মহলের মতে, সরকরী হাপতালে ৪০ হাজার মানুষ চিকিৎসা নিলেও বেসরকারী পর্যায়ে অন্তত ৩গুন ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসা নিয়েছেন। যে পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে নেই।
তবে একাধিক সূত্রের মতে, দক্ষিণাঞ্চলে গত ৪ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে দু লাখ অতিক্রম করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল থেকে এ ব্যপারে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
গতবছরও মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্তকে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এবছরও মার্চের মধ্যভাগ থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করে। ১ জুন পর্যন্ত এ অঞ্চলে যে ৪০ হাজার ২৯৭ জনের আক্রান্তের কথা বলেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর, তার অন্তত ৩৭ হাজারই আক্রান্ত হয়েছে মধ্য মার্চের পরে।
এবারও গত বছরের মতই সর্বাধীক আক্রান্তের সংখ্যাটা বরিশালেই। ১ জুন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজারের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই বরিশাল মহানগরীতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত দ্বীপ জেলা ভোলাতেও ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ছুতে চলেছে। এপ্রিলের শেষ থেকে পিরোজপুরেও ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এসময়ে জেলাটিতে প্রতি দিন গড়ে দেড় শতাধীক ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ সরকারী হাসপাতালগুলোতে এসেছে। জেলাটিতে ইতোমধ্যে সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশী ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ জেলা উপজেলা সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। পটুয়াখালীতেও ইতোমধ্যে ৬ হাজার ৭৩ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বরগুনা জেলায়ও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীর অবস্থাও প্রায় একই। ইতোমধ্যে জেলা সদরের হাসপাতাল সহ অপর ৩টি উপজেলা হাসপাতালে প্রায় ৪ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে গত সপ্তাহখানেক ধরে দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হওয়ায় ডায়রিয়া পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুম আসন্ন হওয়ায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলায় ডায়রিয়া চিকিৎসায় ৪১৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান হয়েছে। তবে এসব টিমে সার্বক্ষনিক কোন চিকিৎসক নেই। দু-তিনটি টিমের দায়িত্বে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসা কর্মীগন প্রয়োজনে মেডিকেল টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসককে খবর দিলে তারা এসে সকটাপন্ন রোগীদের বাবস্থাপত্র দিচ্ছেন।
এদিকে বুধবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ১ হাজার সিসির প্রায় ৬৫ হাজার ব্যাগ এবং ৫শ সিসি’র ৩৭ হাজার ব্যাগ স্যলাইন মজুদ থাকলেও তা ইতোপর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় কম বলে জানা গেছে। তবে বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য জানিয়েছেন,বর্তমানে ডায়রিয়া আক্রান্তের তুলনায় পর্যাপ্ত স্যালইন মজুদ রয়েছে। উপরন্তু আরো স্যালাইন পাইপ লাইনে রয়েছে বলেও জনান তিনি। ২-৬-২০২২.
===================================
বরিশালে গাছ বিক্রী নিয়ে বাগ-বিতান্ডায় দুই বৃদ্ধের মৃত্যু

বরিশাল ব্যুরো/ বরিশালের উজিরপুরে বিরোধীয় জমির গাছ বিক্রীকে কেন্দ্র করে বাগ-বিতান্ডায় শোলক এলাকার চিত্ত দত্ত (৬২) ও আব্দুল হক সরদার (৬০) অসুস্থ হয়ে পরলে তাদের মৃত্যু ঘটে। বুধবার রাতে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ রাকিব হাসান তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,আব্দুল হক সরদার কিছুদিন পুর্বে চিত্ত দত্তের বড় ভাই মন্টু লাল দত্তের কাছ থেকে জমি কেনেন। সম্প্রতি চিত্ত দত্তের অপর ভাই শংকর দত্তের ছেলে দুর্জয় দত্ত সেই জমির ওপর থাকা কিছু গাছ বিক্রি করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সন্ধ্যায় আব্দুল হক সরদার লোকজন নিয়ে সেখানে যান এবং দুর্জয় দত্তের কাছে গাছ বিক্রীর কারণ জানতে চান। এসময় তাদের মধ্যে বাগ-বিতান্ডা শুরু হয় এবং আব্দুল হক সরদারের লোকজন দুর্জয় দত্তকে চর-থাপ্পরও দেন । বিষয়টি দেখতে পেয়ে চিত্ত রঞ্জন ঘটনাস্থলে আসেন এবং আব্দুল হক সরদারের সাথে বাগ-বিতান্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে প্রথমে চিত্ত দত্ত মাটিতে লুটিয়ে পরেন। তাৎক্ষনিক তাকে ঘটনাস্থল থেকে নিকটবর্তী বাটাজোর একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক চিত্ত দত্তকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অপরদিকে চিত্ত দত্তকে নিয়ে আসার কিছু সময় পরে আব্দুল হক সরদারও অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকেও মৃত বলে ঘোষণা করেন।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শাদ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে পুলিশ গিয়ে ঝগড়ার কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ায় উভয়ের রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে স্ট্রোকের কারনেই দুজনের মৃত্যু হতে পারে বরে চিকিৎসকদের কাছ থেকে জাননে পারেন। ২.৬.২০২২।
==================================
বরিশালে চাল মজুদ করায় পাঁচ আড়তদারকে জরিমানা

বরিশাল ব্যুরো/ প্রচলিত আইন ও সরকারের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে বরিশালে অবৈধভাবে চাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরীর অভিযোগে পৃথক অভিযানে নগরীর পাঁচ আড়তদারকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেল সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সমাপ্তি রায় ও কামরুন্নাহার তামান্নার পরিচালিত পৃথক দুইটি ভ্রাম্যমান আদালত নগরীর বাজার রোড, ফরিয়াপট্টি, সাগরদী বাজার সহ বিভিন্ন চালের আড়তে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় অবৈধভাবে চাল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী, অধিক মুনাফায় চাল বিক্রী এবং মূল্য তালিকা সংরক্ষণ না করায় তিনটি চালের আড়তের মালিককে মোট ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শাহ শোহাইব মিয়া সাংবাদিকদের জানান, একইদিন নগরীর দুইটি চালের আড়তে মুল্য তালিকা না থাকা এবং সরিষার তেলের টিনে ও আটার বস্তার বিক্রয় মুল্য কালি দিয়ে মুছে বেশি দামে বিক্রীর অভিযোগে চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আরো ৫৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।।। ২.৬.২০২২।
======================
দক্ষিণাঞ্চলে ৮৫ ভাগ মানুষ প্রথম ডোজ গ্রহন করলেও বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর হার ১০ ভাগেরও কম

মে মাসে করোনা সংক্রমন এ যাবত কালের সর্বনি¤েœ

নাছিম উল আলম/ প্রায় ১ কোটি জনসংখ্যার দক্ষিণাঞ্চলে ১২ বছরের ঊর্ধের ৮৫ লাখ মানুষের প্রায় ৭০ লাখ করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ এবং ৬০ লাখ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করলেও বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখেরও কম। যা বুষ্টারডোজ গ্রহনযোগ্য মানুষের ১০ ভাগেরও কম। এ অবস্থায়ই শণিবার থেকে দেশব্যাপী বুষ্টারডোজ ক্যাম্পেইনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার ৪২ উপজেলাতেও ব্যাপক কর্মসূচী শুরু হয়েছে। শণিবার সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ও উপজেলাগুলোতে ইউনিয়ন পর্যায়েও বুষ্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রম চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানিয়েছেন, আমরা চেষ্টা করছি এ ক্যাম্পেইনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে বুষ্টার ডোজের আওতায় আনতে। তার মতে, ৪ মাস আগে যারাই দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছেন, যেকোন কেন্দ্রে গেলেই তাকে বুষ্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নের নুন্যতম ৩টি কেন্দ্রে এসব ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এলক্ষ্যে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও বুষ্টার ডোজ প্রদানে লক্ষ্যে ব্যাবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চলমান ক্যাম্পেইনে দক্ষিণাঞ্চলে ‘এ্যস্ট্রেজেনেকা, ফাইজার ও মডার্ণা’ ভ্যাকসিনের বুষ্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ২০২১-এর ৭ ফেব্রুয়ারী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হবার পরে ৩১ মে পর্যন্ত ১৫ মাস ২৭ দিনে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় ৬৯ লাখ ৩ হাজার ৯৩৪ জন প্রথম ডোজ গ্রহন করেছেন। প্রথম ডোজ গ্রহনকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছেন আরো ৫৯ লাখ ৮২ হাজার ৩৬৯ জন। কিন্তু বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা মাত্র ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩ জন। এরমধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রথম ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩০৮ জন। আর ৪ লাখ ১ হাজার ৮৮০ জন দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহন করলেও এ নগরীতে বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা মাত্র ৯৯ হাজারের মত।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের ১০ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৮ ছাত্রÑছাত্রী গত ৩১ মে পর্যন্ত প্রথম ডোজ ও ৮ লাখ ৯ হাজার ৬৩৬ জন দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছে। এরমধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই ৯৩ হাজার ৫৯৯ ছাত্রÑছাত্রী প্রথম ডোজ ও প্রায় ৭৯ হাজার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করেছে বলে জানা গেছে।
তবে করোনা সংক্রমন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাওয়ায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়েই বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা এখনো এত কম বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলে মাত্র ৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যারমধ্যে বরিশাল মহানগরীতে দুজন ও ভোলাতে ১ জন। যা ২০২১-এর মধ্য মার্চে দক্ষিনাঞ্চলে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তে পরে এ অঞ্চলে সর্বনি¤œ সংক্রমন। গত মার্চে এ অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২০ জন। মৃত্যু হয় দুজনের। তবে এপ্রিলে ৭জনের দেহে সংক্রমন শনাক্ত হলেও কোন মৃত্যু ছিলনা। মে মাসেও কোন মৃত্যু নেই। তবে নমুনা পরিক্ষা হ্রাসের ফলেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কম বরে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন।
তবে এ অঞ্চলে ৩১ মে পর্যন্ত সর্বমোট ৫২ হাজার ৭০৭ করোনা আক্রান্তের মধ্যে বিদায়ী মে মাসে ৪২৭ জন সহ ৫১ হাজার ৪৬৫ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ইতোমধ্যে। সর্বশেষ হিসেব সুস্থতার হার ৯৯%-এর ওপরে। সর্বমোট মৃত্যু হয়েছে ৬৯০ জনের।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেব অনুযায়ী দক্ষিনাঞ্চলের মধ্যে সর্বাধীক করোনা শনাক্ত হয়েছে বরিশাল জেলায়, ২১ হাজার ২২৩ জন। এ জেলায় ইতোমধ্যে মারা গেছেন ২২৫ জন। তবে জেলায় আক্রান্ত ও মৃতের এ তালিকা ভারি হয়েছে বরিশাল মহানগরী কারণে। দক্ষিণাঞ্চলের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬%-এর এ নগরীতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ১০৩ জন।
দ্বীপজেলা ভোলাতে ৭ হাজার ৮৬৫ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯২ জনের। পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্ত ৭ হাজার ৪১ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১১০ জন। পিরোজপুরেও ৬ হাজার ৩০৬ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। দক্ষিণাঞ্চলের সর্বাধীক মৃত্যু হারের বরগুনাতে ৪ হাজার ৬৬৮ জন আক্রান্তের মধ্যে ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নমুনা পরিক্ষার তুলনায় সর্বাধীক শনাক্ত হারের ঝালকাঠীতে ৫ হাজার ৬০৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৭১ জন।।।। ৩-৬-২০২২/৪-৬-২০২.
===============================
আমিষ ভিটামিন-এ এবং শর্করা সমৃদ্ধ কাঁঠাল-এর উৎপাদন বছরে ১২ লাখ থেকে ২০ টনে উন্নীত করা সম্ভব

নাছিম উল আলম/ মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আমিষ এবং ভিটামিন-এ সহ শর্করা যোগানদানকারী সর্ববৃহৎ প্রাচীনতম ফল ‘কাঁঠাল’-এর উৎপাদন প্রায় ১২ লাখ টন হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত-এর আবাদ হলে তা ২০ লখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু ‘বারী’ উদ্বাবিত উচ্চ ফলনশীল কাঠাল বীজ ও চাড়া আবাদকারীদের কাছে পৌছাতে ‘কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’ খুব বেশী তৎপর নয়। বরিশালের রহমতপুর ও পটুয়াখালীর লোহালিয়া এবং মাদারীপুরের মোস্তফাপুরে ডিএই’র হর্টিকালচার নার্সারি থেকে সীমিত কিছু কাঠাল চাড়া বিক্রী হলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষক সহ বাগানকারীদের কাছে সে খবর খুব জানা নেই।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এত বেশী পুষ্টি উপাদান-এর যোগান আর কোন ফল-এ পাওয়া যায়না। কাঁঠাল শুধু পাকা ফল হিসেবেই নয়, কাঁচা অবস্থায় তরকারী হিসেবেও খাওয়া যায়। এমনকি আমাদের জাতীয় ফল কাঠাল-এর বীজ থেকে ময়দাও তৈরী সম্ভব। দামের দিক বিবেচনা করলে এটি এখনো অত্যন্ত সুলভ একটি ফল। তবে উৎপাদকের কাছ থেকে তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌছতে এফলের দামও কয়কগুন বাড়ে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁঠালকে শাঁসের বুনট অনুযায়ী কৃষি বিজ্ঞানীগন তিনভাগে ভাগ করেছেন। যেমনÑ খাজা, আদরসা বা দুরসা এবং গালা। অনাদিকাল থেকে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের বেশ কিছু স্থানে কাঁঠাল-এর আবাদ ও উৎপাদন হয়ে আসছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে কাঁঠাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। প্রচুর ভিটামিন, শর্করা ও আমিষ সমৃদ্ধ এ ফল স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ঠ উপকারী।
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে উচ্চ ফলণশীল ও সুমিষ্ট দুটি কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছে। ‘বারি কাঁঠালÑ১’ ও ‘বারি কাঁঠাল-২’ নামের এসব কাঁঠালে মিষ্টি বা ব্রিক্সমান ২১-২২%। ফলের ওজন ৭ কেজি থেকে সাড়ে ৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব সুস্থ গাছে ৪শ কেজি থেকে ১২শ কেজি পর্যন্ত কাঁঠাল ধরে। বারি কাঁঠালÑ১ ও বারি কাঁঠালÑ২ দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের সর্বত্রই আবাদযোগ্য বলে বারি’র বিজ্ঞানীগন জানিয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত উচু স্থানে কাঁঠালের নিরাপদ উৎপাদন ভাল বলে মনে করছেন কৃষিবিদগন। এসব উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত জাতের কাঁঠালের ফলন হেক্টরপ্রতি ৩৫Ñ৫৮টন বলে জানা গেছে। হলুদ বর্ণের সুগন্ধযুক্ত রসালো, নরম ও দুরসা প্রকৃতির এসব ফলের গাছ প্রতি ফলন ৫৫টি থেকে ১২৫টি পর্যন্ত। ১০ থেকে বার মাসের চারা বীজতলা থেকে সতর্কতার সাথে উত্তোলন করে এবং ফাটল কলম, চারা কলম ও টিস্যু কালচার পদ্ধতিতেও গাছ বপন করে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে ৫Ñ৭ বছরের মধ্যেই কাঠালের ভাল ফল লাভ সম্ভব।
চলতি মৌশুমেও দক্ষিনাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উচুস্থানে নিয়মিত সার ও সেচ প্রদান সহ পরিচর্যা করতে পারলে কাঁঠালের অত্যন্ত ভাল ফলন সম্ভব। বারি’র বিজ্ঞানীদের মতে ১ মিটার গভীর এবং এক মিটার করে দৈর্ঘ ও প্রস্থের গর্ত করে ২৫Ñ৩০কেজি কম্পোষ্ট সার, ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম টিএসপি এবং ২৪০Ñ২৬০ গ্রাম এমওপি সার মিসিয়ে গর্ত বুজিয়ে ১৫ দিন পরে মাঝখানে চারা রোপন করে চারদিকের মাটি ভালভাবে বসিয়ে চেপে দিয়ে খুটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। প্রতিবছর নির্ধারিত ও পরিমিত সার প্রয়োগ ছাড়াও ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পনের দিন অন্তর গাছের গোড়ায় তৈরি বেসিনে সেচ প্রদান করলে কাঁঠাল গাছের সুস্বাস্থ্য সহ ভাল ফলন মেলে বলে বিজ্ঞানীগন জানিয়েছেন।
অনাদীকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রামেগঞ্জের মানুষের কাছে কাঁঠাল একটি আদর্শ ফল ছাড়াও তাদের উপার্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবছরো দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে কঁঠালের ভাল ফলন হয়েছে। গৃহস্থরা ভাল দাম পাবার ব্যাপারে আশায় বুক বেঁধে আছেন। তবে ইতোমধ্যে বাজারে যে কিছু কাঠাল উঠেছে তা আকার ভেদে ১শ থেকে ৪শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে।
বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়কের পুকুরিয়া থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল হয়ে সদরপুর এবং মালিগ্রাম ও তালমা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুধারে শত শত গাছে হাজার হাজার কাঁঠাল দেখে প্রতিদিন কৌতূহলী মানুষের চোখ জুড়াচ্ছে।
ঢাকার সাভার, টাংগাইল, গাজীপুর এবং যশোর ছাড়াও উত্তরবঙ্গের নাটোর সহ কয়েকটি এলাকা থেকেও কাঁঠাল আসতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের ফলের মোকামগুলোতে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো পরিপূর্ণ বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠালের আবাদ হচ্ছে না। এমনকি এ অঞ্চলে ‘কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’ ‘বারি’ উদ্ভাবিত উন্নতজাতের কাঁঠাল চাড়া মাঠ পর্যায়ে সরবরাহে খুব বেশী তৎপরতাও লক্ষ্যণীয় নয়। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব আবাদকারীদের কাছে উন্নমানের চাড়া পৌছে দিতে। ৪-৬-২০২২.
=================================
নিজ কিশোরী কন্যার ঘাতক মা আটক
বরিশালে মায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা

বরিশাল ব্যুরো/ বরিশালে শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ছোট রাজাপুর গ্রােেম মায়ের পরকীয়া প্রেমের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় মেয়েকে শ্বাস রোধে হত্যা করেছে মা ও তার প্রেমিক। এ ঘটনায় ঘাতক মা’কে কাউনিয়া থানা পুলিশ আটক করলেও অপর আসামী পরকীয়া প্রেমিক কবির খান পলাতক। ঘাতক মা লিপি আক্তার (৩০) কাউনিয়া থানাধীন শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ছোট রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সোহরাব হাওলাদার এর স্ত্রী। শনিবার বেলা ১২ টায় বিএমপির কাউনিয়া থানায় লিখিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার।
উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, শায়েস্তাবাদের ছোট রাজাপুর গ্রামের সোহরাব হাওলাদারের স্ত্রী লিপি আক্তারের সাথে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ায় একই ইউনিয়নের রামকাঠি গ্রামের নুরু খানের ছেলে কবির খান। গত ২৭মে দুপুরে লিপি আক্তার নিজের বাড়িতে তার পরকীয়া প্রেমিক কবির খানের সাথে অনৈতিকভাবে লিপ্ত হলে মেয়ে তন্নি আক্তার (১৩) বিষয়টি দেখে ফেলে। মেয়ে এ ঘটনা তার বাবাকে বলে দেওয়ার কথা বললে মা ও তার পরকীয়া প্রেমিক মিলে মেয়ে তন্নিকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত করে তারা তন্নিকে গলায় দড়ি দিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর তন্নি আত্মহত্যা করেছে বলে বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে জানায় মা লিপি আক্তার।
এঘটনায় গত ২৭ মে কাউনিয়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদারের নির্দেশে মামলার তদন্তে গিয়ে মূল রহস্য উদঘাটন করেন কাউনিয়া থানার ওসি-তদন্ত ছগির হোসেন। উপ-পুলিশ কমিশনার আরও জানান,এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন নিহত তন্নির বাবা সোহরাব হাওলাদার। গ্রেফতারকৃত ঘাতক মাকে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। ৪.৬.২০২২।
==========================================
দলীয় প্রধানকে হত্যার হুমকি ও কটুক্তির প্রতিবাদে বরিশাল আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
বরিশাল ব্যুরো/ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে জীবন নাশের হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসাবে বরিশালে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে জেলা মহানগর আওয়ামী লীগ। শনিবার দলীয় অফিস চত্বরে সমাবেশ শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুছ এবং বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছে নেতা-কর্মীরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজ যারা ‘৭৫’এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ একথা বলেন, তারা কি বুঝাতে চাইছেন সেকথা মনে হয় নিজেরাই জানেন না। তারা বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলার আহবান জানিয়ে এর পর যদি আর কোন অগণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলে, তাহলে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ তার কঠোরভাবে জবাব দেবে বলে হুশিয়ার করে দেয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৫আগস্টে হত্যাকান্ড ঘটায়ে খুনিরা বসে নেই। ওদিন বেঁচে থাকা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে এখন আবার তাকে হত্যার হুমকি দেয়া মানে দেশকে পুনরায় অস্থিতিশীল করে পিছিয়ে দেয়া। তবে আমরা রাজপথে আছি, এসব হুমকি রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবেলা করা হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যন্যের মধ্যে বিসিসি প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু,প্যানেল মেয়র ও বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সৈয়দ আনিসুর রহমান, আনোয়ার হোসাইন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজাল হোসেন, গোলাম সরোয়ার রাজিব,জেলা আওয়ামী লীগ দপ্তর সম্পাদক কাইয়ূম খান কায়সার,মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ বাবু,জেলা আওয়ামী লীগ নেতা তারিক বীন ইসলাম সহ অন্যন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।।। ৪.৬.২০২০।
==========================

পদ্মা সহ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু চালু হতে চললেও দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুত যাত্রী পরিবহন ও সেবার মান উন্নয়নে হেলদোল নেই বিঅরটিসি’র

নাছিম উল আলম/ পদ্মা সেতু সহ আগামী মাসে দক্ষিনাঞ্চলের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চুড়ান্ত হলেও যাত্রী সেবা সম্প্রসারনে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসির কোন হেলদোল নেই। অথচ সংস্থটির সারা দেশের বাস ডিপোগুলোর মধ্যে বরিশালই পরিচালন মুনফায় প্রায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হলে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের সবগুলো জেলা থেকে রাজধানী ঢাকার দুরত্ব ১শ থেকে দেড়শ কিলোমিটার হ্রাস পাবে।
অপরদিকে, আগামী মাসেই চট্টগ্রামÑবরিশালÑখুলনা/ মোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে ‘৮ম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেত’ু এবং বরিশালÑগোপালগঞ্জÑনড়াইল-যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ‘কালনা সেতু’ চালু হচ্ছে। এরফলে বরিশাল,গোপালগঞ্জ,মাদারীপুর এবং শরিয়তপুরের সহ দক্ষিনাঞ্চলের ৯টি জেলার সাথে যশোর ও বেনাপোলের সড়ক পথের দুরত্ব ৫০ থেকে ১শ কিলোমিটার পর্যন্ত কমে আসবে।
চীন সরকারের অনুদানে বেকুঠিয়াতে ৮ম বাংলাদেশÑচীন মৈত্রী সেতু এবং জাপানী ঋনে কালনা সেতুর নির্মান কাজ প্রায় শেষ। চলতি মাসের মধ্যেই বেকুঠিয়ার কঁচা নদীর ওপর সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হচ্ছে। কালনা সেতুটিও যান চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হচ্ছে আগামী মাসেই। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় থেকে অনুরোধপত্র পেলে প্রধানমন্ত্রী আগামী মাসের যেকোন দিন ৮ম চীন-বাংলাদেশ মেত্রী সেতু ও পরবর্তিতে কালনা সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতু সহ এ ৩টি সেতুই সারা দেশের সাথে দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়নের ঐতিহাসিক মাইলফলক রচনা করতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞগন। কিন্তু এসব সেতুকে কাজ লাগিয়ে রাষ্



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ