পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে ২৫ জুন। চিরচেনা পদ্মা পাড়ের ঘাট তখন হয়ে উঠবে দৃষ্টিনন্দন। হারিয়ে যাবে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেরও গুরুত্বও। কেউ আর এই পথে আসবে না সচরাচর। সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। দূর হবে যুগ-যুগের ভোগান্তি।
তবে ঘাটকে ঘিরে যাদের সংসারের চাকা ঘুরছে তাদের কী হবে? যুগ যুগ ধরে আগলে রাখা পেশা হঠাৎ করেই ছাড়তে হবে তাদের! সংসারের চলতে থাকা চাকার গতি হঠাৎ করেই তখন কমে আসবে। তাই সেতু চালুর আনন্দের পাশাপাশি পেশা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিচ্ছে তাদের কপালে। শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের হকার ছয়ফুল আকনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিবচরের বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটকে ঘিরে যারা জীবিকা নির্বাহ করছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ হচ্ছেন ঘাটের হকার শ্রেণির মানুষ। যারা লঞ্চ, ফেরিতে ঘুরে ঘুরে যাত্রীদের কাছে ঝালমুড়ি, ছোলা, সিদ্ধ ডিম, সিঙ্গারা, নারকেলচিড়া, শসা, দইসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন। প্রতিটি লঞ্চে নানান জিনিস নিয়ে তিন থেকে চারজন হকার উঠেন। ঘাটের পন্টুনে ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করেন অনেক হকার। লঞ্চ, স্পিডবোট এবং ফেরিঘাটে ঘুরে ঘুরে অসংখ্য হকারশ্রেণি নানা রকম দ্রব্যাদি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রীই তাদের ক্রেতা। যাত্রীদের খুশি করে বিক্রি করাই তাদের কাজ। সেতু চালু হলে থাকছে না ঘাটের ব্যবহার। আর যাত্রী না থাকলে ব্যবসায়ও বন্ধ তাদের।
ঘাটের হকাররা জানান, সেতু চালু হওয়ার খবর আনন্দের। এই সেতুর কারণেই আমাদের পদ্মাপাড়ে আজ এত উন্নয়ন। রাস্তা-ঘাট হওয়ায় ঘরে যেতে এখন আর কাদাপানি মাড়াতে হয় না। সব মিলিয়ে উন্নয়নের জোয়ার বইছে এই অঞ্চলে। তবে সেতু চালু হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ঘাটের ওপর নির্ভর করে যুগযুগ ধরে চলা এই ব্যবসা হঠাৎ করেই থেমে যাবে। আর এটাই বাস্তবতা। কিছুটা মন খারাপ হলেও সেতু চালু আনন্দের বিষয়। বিকল্প পেশা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে।
বাংলাবাজার ঘাটের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের উভয় ঘাটেই রয়েছে অসংখ্য হকার। যারা একমাত্র ঘাটের নৌযানে ঘুরে ঘুরে বেচাবিক্রি করে থাকেন। লঞ্চ, ফেরি ও স্পিডবোটের যাত্রীরাই হকারদের একমাত্র ক্রেতা। পদ্মাপাড়ের এলাকার খেটে খাওয়া মানুষেরাই ঘাটে হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের মধ্যে মুখরোচক খাবার বিক্রেতাদের সংখ্যাই হবে কমপক্ষে ২০০ জন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, কেউবা রাত অবধি নৌযানে ঘুরে ঘুরে নানান খাবার-দাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ, দেড়শতাধিক স্পিডবোট, ৫৭টি ফেরি বর্তমানে চলছে। এ সকল নৌযানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নিয়মিত পার হন।
এই যাত্রীদের ওপর নির্ভর করেই হকার শ্রেণির ব্যবসা। বাংলাবাজার ঘাটের একাধিক হকারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিকল্প পেশা নিয়ে সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই তাদের অনেকের ভাবনা চলছিল। অনেকে বাড়ির কাছাকাছি ছোট্ট দোকানও দিয়েছেন বলে জানান। নিয়মিত চাসহ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করছেন পরিবারের অন্য কেউ। ঘাট বন্ধ হয়ে গেলে ওই ব্যবসায় নিজে সময় দেবেন।
কেউ কেউ কৃষিকাজে নিয়মিত হবেন। পাশাপাশি পদ্মায় মাছ শিকার তো আছেই। এছাড়া অনেকেই শহরমুখী হবেন। সেতুকে ঘিরে পদ্মার পাড়ে একাধিক গ্রামীণ বাজার তৈরি হওয়াসহ বাজারের অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মার পাড়ের নদী শাসন বাঁধসহ সেতু এলাকার অনেকটাই পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে। বিকেলের দিকে অসংখ্য মানুষ আসেন ঘুরতে। সেক্ষেত্রে জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু না কিছুর ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ঘাটে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হকারি করেন কমলদে, কাঁঠালবাড়ী এলাকায় তার বাড়ি। ঘাটকে ঘিরেই তার বেড়ে ওঠা। সেতু চালু হবে, এ নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই তার। তবে ঘাট বন্ধ হয়ে যাবে তাতে ব্যবসাও বন্ধ, তাই কপালে চিন্তার ভাঁজও রয়েছে। তিনি জানান, ঘাট এলাকার হকারদেরও পুনর্বাসন করা উচিত সরকারের। হঠাৎ করেই পেশা বদল করা যায় না। দীর্ঘদিনের পেশা বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়তে হবে। হকারদের তালিকা করে সহজ শর্তে ঋণ দিলে নতুন কিছু করতে পারবো।
পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। যা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে প্রমত্তা পদ্মার বুকে। এখন ওপর দিয়ে যাওয়ার দিন গুনছেন যাত্রীরা। ঘাট এলাকার যুগ যুগ ধরে চলা ভোগান্তি থেকে বাঁচবে যাত্রীরা। বাঁচবে সময়ও। তাই সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। ঢাকা যেন এখন হাতে মুঠোয়!
এই অবস্থায় বহু হকার তাদের পেশা ধরে রাখতে ইতোমধ্যেই যোগাযোগ শুরু করছেন, রাজবাড়ী দৌলতদিয়া- পয়েন্ট এবং আরিচা পয়েন্টের হকার বন্ধুদের সাথে।
ইনকিলাবের রাজবাড়ি জেলাসংবাদদাতা নজরুল ইসলাম জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে নতুন নতুন হকার দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ হকারের বাড়ী, শিবচর পাচ্চর বাজার, কাঠালবাড়ুয়া বাজার, ফেরীঘাট সংলগ্ন কুতুবপুর ইউনিয়নে। এরা দৌলতদিয়ার বন্ধু হকারদের সাথে যোগাযোগ করে এই ঘাটে কাজ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।