পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিল্পপতি শাহনেওয়াজসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে র্যাবের মামলা
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : খুলনার রূপসায় হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স শাহনেওয়াজ সি ফুড প্রাইভেট লিঃ’র আড়ালে দেশের খ্যাতনামা কোম্পানির নকল ওষুধ তৈরি করে বাজারে বিক্রয়ের অপরাধে শিল্পপতি কাজী শাহনেওয়াজ (৬৮)সহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১২/১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে র্যাব-৬। গতকাল মঙ্গলবার র্যাব-৬’র ডিএডি মোঃ নাজমুল হুদা বাদী হয়ে ১৯৭৪ সনের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-গ (১) (গ) ধারায় রূপসা থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন (যার নং-০৪)।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নকল ওষুধ তৈরি চক্রের মূল হোতা কাজী শাহ নেওয়াজকে রূপসা থানা পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন ফরাজী তাকে কাস্ট্ররি ওয়ারেন্ট (সিডব্লিউ) মূলে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাকে খুলনা জেলা কারাগারে হস্তান্তর করে। খুলনার ওই মাছ কোম্পানিতে চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি নকল ওষুধ রাজধানীর মিডফোর্ড এবং খুলনার হেরাজ (ওষুধের) মার্কেটে সরবরাহ করা হতো বলে জানিয়েছে র্যাব ও ওষুধ প্রশাসন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, ঢাকার ৭৩, শান্তিবাগ মসজিদ রোডের বাসিন্দা মৃত সাইফল্লাহ’র ছেলে মোঃ জাকির হোসেন (৪৮), খুলনার বাগমারা পূর্ব রূপসা এলাকার মোঃ আনোয়ার হোসেন বেগের ছেলে স্টোরকিপার মোঃ হাবিবুর রহমান শেখ (৪৫), সিরাজগঞ্জের মোঃ স্বপন শেখের ছেলে সজিব শেখ (৩৫)সহ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ১২/১৩ জন সহযোগীর আসামি করা হয়েছে।
র্যাব সূত্র জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর বিকেল থেকে র্যাব-১ ও র্যাব-৬ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে খুলনার রূপসা থানাধীন জাবুসা চর রূপসায় অবস্থিত মেসার্স শাহনেওয়াজ সি ফুড প্রাইভেট লিঃ-এর ভিতরে নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালায়। এসময় কারখানাটি থেকে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস্’র ফ্লুক্লক্স ক্যাপসুল দুই হাজার ৬০০ পিচ, আড়াই লাখ খালি খোসা ও পাউডার, কার্টুন ফ্লুক্লক্স ৫০০ গ্রাম পাঁচ বস্তা, অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস্’র রেনিডিট ১৫০ গ্রাম এক বস্তা, ট্যাবলেট কনপ্রেরেট ৪ হাজার পিচ, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস্’র ফয়েল ফ্লুক্লক্স ৫০০ গ্রাম আড়াই কেজি, প্রিন্স ফার্মাসিউটিক্যালস্ এন্ড হার্বাল ইন্ডাস্ট্রিজ’র টেস্টি স্যালাইনসহ ৩ লাখ ৫০ হাজার ক্যাপসুলের খালি খোসা ও বিভিন্ন ওষুধ তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে র্যাব।
খুলনায় র্যাব-৬ অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, কারখানার ভেতর থেকে অপসোনিন, রেনিডিট, স্কয়ার, এসিআই, অ্যাকমিসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের ওষুধের মোড়ক ও লেবেল পাওয়া যায়। এখানে ভেজাল ওষুধ তৈরি করে ঢাকার মিটফোর্ডের ওষুধের মার্কেটে সরবরাহ করা হতো। এখানে শুধুমাত্র চালের গুঁড়া দিয়ে রাবারের মোড়কে ক্যাপসুল তৈরি করত চক্রটি। একই সঙ্গে খাবার স্যালাইন, বেবি লোশন, শ্যাম্পু, ভারতীয় মুভ তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে ওই কারখানা থেকে।
ঢাকা থেকে আগত ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক মোঃ মনির হোসেন জানিয়েছেন, ভেজাল ওষুধ তৈরি করে ঢাকার মিটফোর্ডের ওষুধের মার্কেটে ও খুলনার হেরাজ মার্কেটে সরবরাহ করা হতো বলে জানা গেছে। ওদের ওষুধ মানবদেহের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক ও প্রাণঘাতীও হতে পারে।
কে এই কাজী শাহনেওয়াজ : কাজী শাহনেওয়াজ খুলনার বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি। তিনি খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, শাহনেওয়াজ গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক শিল্পপতি কাজী শাহনেওয়াজ একাধিকবার সিআইপি পুরস্কার নিয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মানে।
নড়াইলের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার পিতা মরহুম আলহাজ কাজী ফজলে আর রহমান। তার নিকট আত্মীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, ১৯৬৪/৬৫ সালের দিকে খুলনায় আসেন তিনি। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে খুলনা জেলা শাখার সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা-পরবর্তী কৃষিমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজের সংস্পর্শে এসে লাইসেন্স পারমিট সংগ্রহ শুরু করেন। শাসক দলের সদস্য ও ডোনার হিসেবে খ্যাত শাহনেওয়াজের তুলিবুলি নামে খুলনা-ঢাকা পরিবহনের ব্যবসা ছিল। সে সময়েই জনতা ব্যাংক খুলনা করপোরেট শাখা থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে সর্বপ্রথম মিডিয়ায় আসেন তিনি। ১৯৮০ সালের পর খুলনার ৬৬, রূপসা স্ট্যান্ড রোডে বিলাশ বহুল বাড়ি করেন তিনি। খুলনার অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক শিবসা’ নামক পত্রিকার প্রশাসক-সম্পাদক ওই কাজী শাহনেওয়াজ।
টক অফ দ্য খুলনা : শিল্পপতি কাজী শাহনেওয়াজ নামে-বেনামে কত সম্পত্তির মালিক; সে হিসাব নেই তার নিজেরও। একজন মানুষের জীবনে কত টাকার প্রয়োজন? বিপুল ধন-সম্পদের মালিক হবার পরও কেন এই প্রাণঘাতী নকল ওষুধের কারখানা খুললেন তিনি? এমনি শত প্রশ্ন গতকাল ছিল খুলনাবাসীর মুখে মুখে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে চায়ের দোকান অলিগলিতে গ্রাম-গঞ্জেও খুলে গেছে ধর্ণাঢ্য কাজী শাহনেওয়াজের মুখোশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। নিজ নিজ ভাষায় ঘৃণ্য এ অপরাধের বিচার চাইল রাষ্ট্রের কাছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক গাজী আলাউদ্দিন আহমদ ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এরশাদ শিকদারকে যখন ধরা হয়েছিল, তখন সেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছিল। তার মতো কাজী শাহনেওয়াজের সুবিধাভোগী মিডিয়াতেও আছে। তাই অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্নকারী এই অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করতে হুমকি-ধমকি ও লোভ-লালসা উপেক্ষা করে আমার প্রিয় নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগকে, যেমনটি হয়েছিল (ফাঁসির দ-প্রাপ্ত) এরশাদ শিকদারের বেলায়। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধীর সাজা সুনিশ্চিত না হবে ততক্ষণ ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হবে সাংবাদিকদের।’
নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আজিজুল হাসান দুলু লিখেছেন, এ জগতে হায় সেই বেশি চায় যার আছে ভুরি ভুরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।
নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফকরুল আলম লিখেছেন, এই লোক খুলনা ক্লাব, চিংড়ি রপ্তানিকারক সমিতি থেকে আজীবনের জন্যে বহিষ্কার করার আহ্বান জানাচ্ছি। খুলনার বার (আইনজীবী সমিতি) সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার কোনো মামলা উকিল সাহেবরা করবেন না। এটাই জনগণের দেয়া শাস্তি।
সাংস্কৃতিক কর্মী কামরুল ইসলাম কাজল লিখেছেন, খুলনার কলঙ্ক।
চিত্রনায়িকা জান্নাতুল ফেরদাউস পিয়ার মা স্কুল শিক্ষক মাহবুবা চৌধুরী লিখেছেন, ‘মানুষ হত্যার চেয়েও জঘন্য খারাপ। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
বিএনপি নেতা কাজী মাহমুদ আলী লিখেছেন, মানুষ হত্যা তার পুরাতন ব্যবসা। তুলিবুলি পরিবহন থেকে শুরু। আওয়ামী ঘরানার এই নরপশুর বিচার এই সরকারের আমলে হবে কিনা সে বিষয় আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে..!
উত্তরে স্ট্যাটাসের স্বত্বাধিকারী গাজী আলাউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, শাহনেওয়াজকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। ফলে সরকারি দলের কেউ তার মতো অপরাধীর পক্ষে তদবির করে নিজেদের ক্ষতি করবে না বলে প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।