Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙন রোধে নদীশাসনপূর্বক টেকসই বাঁধ চায় উপকূলবাসী

খুলনায় ভিটেহারা হাজারো মানুষের মানববন্ধন

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গতকাল খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দাকোপে ভাঙন রোধে নদীশাসনপূর্বক টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে এক বিশাল মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দাকোপ উপজেলা আইনজীবী কল্যাণ সমিতি ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি এতে একাত্মতা প্রকাশ করে। সমাবেশে বক্তারা উপজেলার দুটি পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান মেঘা প্রকল্প জননিরাপত্তায় কাজে আসবে না উল্লেখ করে উপকূলবাসীকে বাঁচাতে নদীশাসন ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সূত্রমতে, সুন্দরবনের কোলঘেঁষে যাদের বসবাস, ঝড়ঝঞ্ঝা-জলোচ্ছ্বাস আর জলে কুমির পাশের জঙ্গলে বাঘের সাথে লড়াই করে যাদেরকে বেঁচে থাকতে হয় এমনই জনপদের নাম খুলনার দাকোপ। এমন নির্মম বাস্তবতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর আওতায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এতে নেই নদী ভাঙন রোধের বিষয়টি। নদী ভাঙন রোধ না করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে অভিযোগ এলাকার সচেতন মহলের। প্রকল্প কর্মকর্তাদের বক্তব্য, এটি নির্ধারণ করবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। নদী ভাঙন দাকোপবাসীর এক অভিশাপ। এই অভিশাপে পড়তে হয় তাদের প্রতিনিয়ত। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার আঘাতে ল-ভ- হয়ে পড়ে দাকোপ উপজেলা। আইলার পর দীর্ঘদিন ডুবে ছিল ৩২ নম্বর পোল্ডার। এটা বিবেচনা করে জলবায়ু ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ইত্যাদির কবল থেকে রক্ষাকল্পে একটি সমীক্ষা করা হয়। আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের মাধ্যমে সম্পাদিত সমীক্ষার আলোকে বিশ্বব্যাংক উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭টি পোল্ডারের বাঁধসমূহকে উন্নয়ন ও পুনর্বাসন করার নিমিত্তে অর্থ সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়। এর জন্য বিশ্বব্যাংকের সম্পূর্ণ অনুদানে কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোজেক্ট, ফেজ-১ (সিইআইপি-১) ২০১৩ সালের পয়েলা অক্টোবর তারিখে একনেক সভায় অনুমোদন হয়। যার প্রথম ফেজের আওতায় দাকোপ উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে উন্নয়ন কাজ হবে। দুই পোল্ডারের উন্নয়ন করা হবে প্রায় একশ কিলোমিটার রাস্তা, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। দাকোপের ৩২ নম্বর পোল্ডারে সুতারখালী ও কামারখালী নামে দুটি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে বসতি প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের। আর ৩৩ নম্বরের পাঁচটি ইউনিয়ন হলো দাকোপ, বাজুয়া, কৈলাশগঞ্জ, বাণীশান্তা ও লাউডোব। এখানেও ৬০ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। বছরের বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো এলাকা বিলীন হয় নদীগর্ভে। এতে করে ভাঙে ঘরবাড়ি, ভাসে ফসলের ক্ষেত। তাই একটি টেকসই বেড়িবাঁধ এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। সাথে সাথে নদীর ভাঙন রোধ করাও এখানকার মানুষের অন্যতম দাবি। কিন্তু যেভাবে প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে তাতে নদী ভাঙন রোধ না করে শুধু বেড়িবাঁধ উন্নয়ন করা হবে। আর এখানেই যত বিড়ম্বনা। এ প্রসঙ্গে এলাকার প্রবীণ মানুষ ও সমাজসেবক এম এ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের বরাবরের দাবি বেড়িবাঁধ উন্নয়ন, একই সাথে নদী ভাঙন রোধ। কেননা দাকোপের ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডার বড় বড় নদী দ্বারা বেষ্টিত। ৩২ নম্বর পোল্ডারকে ঘিরে আছে শিবসা, ভদ্রা ও ঢাকী নদী। আর ৩৩ নম্বর পোল্ডারের চারপাশে আছে চুনকুড়ি, পশুর, ঢাংমারী ও ভদ্রা নদী। এমন কোনো মাস পাওয়া ভার যে মাসে এই দুই পোল্ডারের কোনো না কোনো স্থান ভাঙে না। তাই নদী ভাঙন রোধ না করে যদি শুধুমাত্র বেড়িবাঁধ উন্নয়ন করা হয় সে বাঁধ বছর না ঘুরতেই ভেঙে যাবে। তাই একটি টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রথমে প্রয়োজন ব্লক বা জিও ব্যাগের মাধ্যমে নদীশাসন করা তারপর বেড়িবাঁধ ঠিক করা। আর তা না হলে প্রকল্পের সকল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে দাকোপের ৫নং সুতারখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মাসুম আলী ফকির বলেন, বিশ্বব্যাংকের যে বড় কাজ হচ্ছে তাতে আমরা খুবই আশান্বিত। কারণ ৬০ এর দশকে এই বাঁধ তৈরি হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় কাজ। তবে এই প্রকল্পের সাথে নদী ভাঙন রোধের বিষয়টি না থাকায় আমরা খুবই হতাশ। তিনি আরও বলেন, নদী বেষ্টিত এই জনপদে নদী ভাঙন রোধ না করে রাস্তা উন্নয়ন করা হলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বিষয়টি অবগতির জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও প্রেরণ করা হয়েছে কিন্তু এখনও কোনো সুরাহা হয়নি বলেও জানান তিনি। এ নিয়ে সিইআইপি-১ প্রকল্পের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, আমরা শুধু ডিজাইন করা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ডিজাইন করেছে আলাদা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সে কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যদি নতুনভাবে নদী ভাঙন রোধসহ বেডিবাঁধ উন্নয়ন করার প্রস্তাব দেয় এবং সেটা যদি অনুমোদিত হয় তাহলে অবশ্যই প্রকল্পের কাজ নতুনভাবে হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রকল্পের প্রথম ধাপে খুলনা ও বাগেরহাট জেলার চারটি পোল্ডারে ৬৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, গতকাল মানববন্ধনে আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার হোসেনের অদূরদর্শিতার কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কে এম ইকবাল হোসেন, সুতারখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুম ফকির, চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল কাদের, মেয়র সনদ কুমার বিশ্বাস,  দাকোপ সমিতির আহ্বায়ক কিংশুক রায়, দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সভাপতি আলহাজ শেখ আবুল হোসেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভদ্রা সরকার, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায়, উপজেলা আ’লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান রণজিত কুমার রায়, আব্দুল্লাহ ফকির, পঞ্চানন ম-ল, জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও সমাজসেবক ফরিদ আহম্মেদ প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ