Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অস্তিত্ব সঙ্কটে বিরেন্দ্র খাল

লক্ষ্মীপুরে মালিকানা নিয়ে বিরোধ

এস এম বাবুল (বাবর), লক্ষীপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত বিরেন্দ্রখাল খালটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ও রামগঞ্জ-সোনাপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের উদাসিনতায় ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। খালটির পুরো অংশ জুড়ে ময়লা আবর্জনা, কচুরিপানা, কচুগাছ জন্মানোসহ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় প্রচন্ড দূর্গন্ধে খালের পাশে বসবাসকারীদের মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ময়লা আবর্জনার পানির কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধিসহ পঁচা গন্ধে স্থানীয়দের বসবাস দায় হয়ে পড়েছে। খালটির মালিকানা নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোধ রয়েছে।

নব্বইরদশকেও রাজধানীর সাথে রামগঞ্জ উপজেলার বাণিজ্যিক যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ছিল বিরেন্দ্র খাল। দুশ’ বছরের পুরানো এ খাল দিয়ে মেঘনা নদী হয়ে ছোট-বড় ট্রলারে পণ্যসামগ্রী আনা- নেয়া করতো ব্যবসায়ীরা। প্রবাহমান পানি এখানকার কৃষি জমির সেচের কাজে ব্যবহার হতো। পরবর্তী সময় অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী খালটি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন হাট-বাজার ও আবাসিক এলাকার পতিত আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে খালটি প্রবাহমান স্রোতধারা। এসব আবর্জনা পচে নষ্ট হয়ে গেছে পানি, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও রোগবালাই। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিরেন্দ্র খালটি প্রায় দুশ’ বছরের পুরনো। সর্বশেষ ১৯৪৭-৪৮ সালে একবার সংস্কারের পর কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি খালটি। লক্ষীপুর রহমতখালি খালের সংযোগ থেকে শুরু হয়ে বিরেন্দ্র খালটি দু’টি শাখায় বিভক্ত হয়। এর একটি শাখা রামগঞ্জ হাজীগঞ্জ হয়ে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। অপর শাখা রামগঞ্জ হাজীগঞ্জ থেকে নোয়াখালী সোনাইমুড়ি হয়ে নদীতে প্রবাহিত হয়েছে। খালের অধিকাংশই রামগঞ্জ পৌরসভার বাজার ও আবাসাকি এলাকার পাশ দিয়ে ভয়ে গেছে। বিরেন্দ্র খালটির লক্ষীপুর জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন। তবে খালটি নিয়ে উভয় বিভাগের মধ্যে জটিলতাও রয়েছে।

স্মৃতিচারণ করে স্থানীয় কয়েকজন মুরুব্বি জানান, একসময় ঢাকা থেকে মেঘনা নদী হয়ে ছোট বড় ট্রলারে করে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেয়া করতেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। রামগঞ্জ থানার সামনের ঘাটে ভিড়তো ট্রলারগুলো। এ খালটি দিয়ে কলাবাগান, মৌলভীবাজার ও সোনাপুর উত্তর বাজার এলাকায় সরকারিভাবে নির্মিত ঘাটে চাঁদপুর থেকে ট্রলারে করে আনা মালামাল নামানো হতো।

স্থানীয়রা জানান, জেলা পরিষদ থেকে অস্থায়ী লীজ নেয়ার নাম করে প্রভাবশালী মহল খালের অধিকাংশই দখল করে নির্মাণ করেছেন স্থায়ী বহুতল ভবন ও দোকানপাট, বসতঘর ও ব্রিকফিল্ড। এতে খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কমে পরিণত হয়েছে সরু ড্রেনে। অপরদিকে, রামগঞ্জ পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন হাট-বাজার ও আবাসিক এলাকায় ড্রেনেজ ও ডাস্টবিন ব্যবস্থা নেই। ওইসব স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে খালে পানির স্রোত বন্ধ হয়ে ও আবর্জনা পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, সৃষ্টি হচ্ছে ডেঙ্গুসহ মশার উপদ্রব। এতে একদিকে বাড়ছে রোগবালাই, হুমকিতে রয়েছে পরিবেশ। সংস্কার আর খননের অভাবে বর্ষাকালেও আগের মতো পানি আসেনা এক সময়ের খরস্রোতা এ খালে। খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয়রা।

সোনাপুর বাজারের বি সাহা সুইট’সর মালিক অপূর্ব কুমার সাহা জানান, খালটির কয়েক কিলোমিটার অংশ শহরের মাঝখান দিয়ে নোয়াখালী পর্যন্ত বহমান। সোনাপুর, রামগঞ্জসহ খালের পাশের ব্যবসায়ীরা দৈনন্দিন কাজের ময়লা আবর্জনা খালটিতে ফেলে আসছে। রামগঞ্জ পৌর শহরে কোন ডাস্টবিন না থাকায় খালটিতে ব্যবসায়ীরা ময়লা ফেলতে ফেলতে অনেকস্থানে ভরাট হয়ে গেছে।

রামগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ জানান, একসময়ের এতিহ্যবাহী খাল এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। রামগঞ্জ পৌরসভা ও প্রশাসনের উদাসীনতায় আজ চরম দুর্ভোগে শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এমতাবস্থায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও খাল সংস্কার করা জরুরি বলে জানান তিনি।

সোনাপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর লিয়াকত হোসেন জানান, খালের অধিকাংশ অংশে বেহালজাল, ঘের তৈরি করে মাছ চাষ ও খালের মূল অংশে স্থাপনা নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নোংরা অস্বাস্থ্যকর পুরো খালজুড়ে।

রামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল খায়ের পাটোয়ারী জানান, বিরেন্দ্র খালটির জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বিষয়ে তাদের চিঠি দেয়া হলেও সাড়া মেলেনি। খালের যে পরিস্থিতি, একা সংষ্কার করা সম্ভব নয়। এ জন্য উপজেলা প্রশাসন, খাল সংস্কারকারি সংস্থা বিআরডি ও ওয়াপদা বিভাগের যৌথ প্রচেষ্টায় খালটি পুনঃজীবিত করা সম্ভব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে হাবীবা মীরা জানান, খালটির ব্যাপারে জানতে আমি উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারকে পাঠাবো। খালটির মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরোধ রয়েছে শুনেছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ মো. শাহাজাহান জানান, ইতোমধ্যে খালটি উদ্ধার ও সংস্কার করার জন্য জেলা পরিষদ থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমরা খালটি থেকে অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারসহ ময়লা আবর্জনা পরিস্কারে অভিযান শুরু করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ