পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হিজাব ও বোরকা পরা নারীর সাংবিধানিক অধিকার বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এখানে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক সেই অধিকার সমুন্নত রাখা একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। বিভিন্ন সময় দেশের অন্তত: ১৫টি জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব ও বোরকা পরার কারণে হেনস্থার শিকার শিক্ষার্থীদের পৃথক ঘটনাকে উদ্ধৃত করে রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানিকালে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ উপরোক্ত মন্তব্য করেন। শুনানি শেষে আদালত ঘটনাসমূহ তদন্তের নির্দেশ দেন। আগামী ২ মাসের মধ্যে শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ধর্ম সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে তদন্ত বিষয়ক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আলী মন্ডল ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আহাসান আসু। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদালত থেকে বেরিয়ে অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আলী মন্ডল বলেন, রিটের প্রাথমিক শুনানির সময় আদালত মন্তব্য করেছেন যে, ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশে হিজাব-বোরকা পরা নারীর সাংবিধানিক অধিকার। পরে আদালত দেশের বিভিন্ন জেলার অন্তত: ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বোরকা পরায় হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন।
বোরকা বা হিজাব পরিধান করা শিক্ষার্থীদের আদৌ হেনস্থা করা হয়েছে কি-না এবং হেনস্থা করা হয়ে থাকলে এর পেছনে কারা দায়ী এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও তদন্তে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। রিটের পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে ১১ আগস্ট।
এর আগে বোরকা পরায় হেনস্থার শিকারের ঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত মে মাসে দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব আলম এবং মতিউল আজম আবুল খায়ের মোহাম্মদ আজিজুল্লাহ বাদী হয়ে রিট ফাইল করেন। রিটে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হিজাব পরতে বাধা দেয়া হয়- মর্মে উল্লেখ করা হয়। রিটে এসব ঘটনা তদন্তের নির্দেশ চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ঘটনাগুলোর পর পর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটের পিটিশনে দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব ও বোরকা পরার কারণে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা হওয়ার ঘটনায় প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা হেনস্থার শিকার হয়েছেন সেগুলো হচ্ছে : (১) নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বারবারপুর উচ্চ বিদ্যালয়, (২) সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ব্রজেন্দ্রগঞ্জ আর সি উচ্চ বিদ্যালয়, (৩) সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, (৪) কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ, (৫) নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, (৬) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার জোয়ারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়, (৭) চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়, (৮) গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, (৯) মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার কালকিনি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, (১০) নারায়ণগঞ্জের সোনার গাঁ কাজী ফজলুল হক উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়, (১১) সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার বিষম ডাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, (১২) ফেনীর জিয়া মহিলা কলেজ, (১৩) বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার আগৈলঝাড়া পয়সা মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, (১৪) সিলেটের কিশোরী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় এবং (১৫) চট্টগ্রামের পতেঙ্গা মাইজপাড়া মাহমুদুন্নবী উচ্চ বিদ্যালয়।
আবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হিজাব পরতে বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। যা মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ। এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় তোলে।
রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত হিজাব ও বোরকা পরাকে এক বাক্যে ‘নারীর সাংবিধানিক অধিকার’-মর্মে মন্তব্য করলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহু শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার ‘অপরাধে’ হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। বেত্রাঘাতের শিকার হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ে (জেবি) হিজাব নিষিদ্ধ করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়–য়া। চলতিবছর ২৯ মার্চ হিজাব পরিধান করে এক ছাত্রী স্কুলের শ্রেণীকক্ষে এলে ওই প্রধান শিক্ষক ছাত্রীকে হেনস্থা করেন। তাকে বেত্রাঘাতও করেন- মর্মে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ওই সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনকার মতো ২৯ মার্চ সকালে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে আসে অষ্টম শ্রেণির ঐ শিক্ষার্থীসহ ৩ জন। সকাল ১১টার দিকে অ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাস শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়–য়া তাদের ডেকে হিজাব খুলে ফেলতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। এ সময় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হিজাব খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাকে বেত্রাঘাত করেন প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনা মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেন। এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে ওই ছাত্রীর পরিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
এ বিষয়ে ঘটনার শিকার ছাত্রীর চাচা মোহাম্মদ মহিব বিল্লাহ বলেন, আমরা এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের প্রথমে বলেন, স্কুলের ভেতর হিজাব পরা যাবে না। পরে আমার ভাতিজিকে ওই স্কুল থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে উনার কাছে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট চাই। এ সময় তিনি কিছুটা নমনীয় হয়ে বলেন, আচ্ছা, আপনার ভাতিজি চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত হিজাব পরলে অসুবিধে নেই। তবে আগামী বর্ষে আর পারবে না। পরবর্তীতে এ ঘটনার কোনো বিহীত হয়নি বলে জানা গেছে। রিটে এ ঘটনাটি উদ্ধৃত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।