পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমদানির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রফতানি বাড়ছে না। এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই থেকে এপ্রিল) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ৩৭৯ কোটি ডলার বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
একটি দেশের আমদানি ও রফতানির মধ্যকার সম্পর্ক হলো বাণিজ্য ঘাটতি। ইতিবাচক ভারসাম্যকে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বলে। তখন আমদানির থেকে রফতানি বেশি হয়। নেতিবাচক ভারসাম্যকে বলা হয় বাণিজ্য ঘাটতি, যা রফতানির থেকে আমদানি বেশি হলে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের (প্রথম ১০ মাস) একই সময় ছিল এক হাজার ৮০১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।
আমাদের দেশে আমদানির তুলনায় পণ্য রফতানি কম হওয়ায় বরাবরই বাণিজ্য ঘাটতি থাকে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর ব্যাপক হারে বেড়ে যায় আমদানি। এতে আমদানি-রফতানির মধ্যে বড় ব্যবধান তৈরি হয়। এসব কারণে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।
চলতি অর্থবছরের আলোচিত সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) রফতানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর বিপরীতে আমদানি বেড়েছে ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে চার হাজার ১১০ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে দেশ ব্যয় হয়েছে ছয় হাজার ৮৬৬ কোটি ডলার। আমদানি থেকে রফতানি বাদ দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার।
সেবা খাতেও বেড়েছে ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে সেবা খাতে আয় হয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। এর বিপরীতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১১৪ কোটি ডলার। সে হিসাবে এ খাতে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩১৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২১৫ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আলোচিত সময়ে ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৬৫ কোটি ডলার। আর সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের (২০২০-২০২১) একই সময়ে এ স‚চকে ৭৪৯ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
সর্বনিম্ন রফতানি আয় : টানা নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রফতানি আয় এসেছে সদ্য বিদায়ী মে মাসে। মে মাসে ৩৮৩ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-জুন) গত আগস্টের পর এটিই একক মাস হিসেবে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ৪ হাজার ৭১৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। পণ্য রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক। এর পরই হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও প্রকৌশল পণ্য।
মে মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা ১৮৮ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের (২০২১ সালের) একই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২১৭ কোটি ডলার। ফলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
অবশেষে সেই শঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতির বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে দেশের রফতানি আয়ে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে ৩৮৩ কোটি (৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই আয় গত ৯ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে কম এসেছে ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৮৩ কোটি ডলার। এপ্রিলে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৮৬ কোটি ডলার। গত বছরের মে মাসে আয় হয়েছিল ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের আগস্টে পণ্য রফতানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকে প্রতি মাসেই ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রফতানি দেশে এসেছে। সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
গতকাল বৃহস্পতিবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গেল মাসে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাত থেকে আট দিন কারখানা বন্ধ ছিল। এ সময় উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ কারণে স্বাভাবিক মাসের তুলনায় মে মাসের অন্তত ৮ দিনের রফতানি কম যোগ হয়েছে।
করোনা মহমারির মধ্যে ২০২১ সালের মে মাসে কম রফতানি আয় দেশে এসেছিল, ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা চলতি বছরের মে মাসের চেয়ে ২৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। সার্বিক রফতানি আয়েও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাবে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে পণ্য রফতানি থেকে সব মিলিয়ে ৪৭ দশমিক ১৭ বিলয়ন ডলার আয় হয়েছে, যা গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেশি এসেছে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা এমনটিই আশঙ্কা করছিলাম। যুদ্ধের কারণে আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সে কারণে এখন সেখানকার মানুষদের খাদ্যের জন্য বেশি খরচ করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তারা পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে রফতানি আয়ে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পশ্চিমা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি ও ক্রমাগত উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির জেরে রফতানিতে ভাটা পড়েছে উল্লেখ করে দেশের বৃহৎ রফতানি খাত নিট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এক্ষেত্রে আমরা বায়ারদের সাথে নিয়মিতই কথা বলছি। অর্ডারও কমে আসছে আমাদের। এখন কিন্তু ইনকুয়ারি কম। আস্তে আস্তে এটা কমার দিকেই যাচ্ছে। আমাদের বর্তমানে যে গ্রোথটা চলছিল সামনের দিকে তা কমে যাবে।
তিনি বলেন, অনেকদিন যাবতই একথাটা আমরা বলে আসছি, রফতানি আয় বর্তমানে যা হচ্ছে তা আরও কমবে। অন্যদিকে সরকার যেভাবে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে, তাতে কিন্তু আমাদের খরচ বেড়েই চলছে এবং আরও বাড়বে। ফলে এটা সমন্বয় করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে যাবে। বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। দেখা যায় গ্যাসের বিল ঠিক সময়ে দিতে পারিনি, তিতাস গিয়ে লাইন কেটে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল দিতে পারিনি, ডিপিডিসি গিয়ে লাইন কেটে দিয়েছে। এর ফলে অটোমেটিক অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বারবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পাননি বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।