Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বোরো মৌসুমে ধানের দর পতনে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক সর্বশান্ত ঊর্ধমুখি চালের বাজারে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

উৎপাদন ব্যায় ৮শ টাকার ওপরে হলেও বিক্রী হচ্ছে সাড়ে ৬শ টাকা

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২২, ৮:৫৪ এএম

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ করেও দর পতনে এবার প্রায় সর্বশান্ত দক্ষিণাঞ্চলের ২০ লক্ষাধিক বোরা চাষি। পাশাপাশি ভরা মৌসুমেই চালের বাজারে ঊর্ধমুখি ধারায় নাভিশ্বাস উঠছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে। রবি মৌসুমে বৃষ্টির অভাবের সাথে ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধিতে এবার সেচব্যায় বেড়ে বোরোতে প্রতিমন ধানের উৎপাদন ব্যায় ৮শ টাকায় পৌছেছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার ২০ লক্ষাধিক কৃষক প্রতিমন বোরা ধান সাড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকার মধ্যে বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ এখন মধ্যম মানের এক মন চালের দাম আড়াই হাজার টাকার ওপরে। এবার ভড়া রবি মৌসুমে বৃষ্টি না হলেও মাঠে মাঠে যখন ধান পেকে আসছিল, তখনই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে প্রবল বর্ষণে দক্ষিনাঞ্চলের মাঠে থাকা আড়াই লক্ষাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান চরম বিপর্যয়ের শিকার হয়।

আর এ সুযোগকেই কাজে লাগায় মিল মালিকদের ফরিয়ার দল। বৃষ্টিতে ভেজা ধান ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকার মধ্যেই কিনে নেয় তারা। এখনো প্রতিদিনই বৃষ্টিতে ভিজছে মাঠে থাকা বোরো ধান। তবে ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার ৯৮ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের প্রায় ৮৮ভাগ বোরা ধান কর্তন সম্ভব হলেও আবহাওয়া অনুকুল না থাকায় ধান শুকানো যাচ্ছে না। ফলে কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রী করতে গিয়ে সর্বশান্ত হচ্ছেন।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টারে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। দেশে এবার ৪৮.৭৩ লাখ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে এযাবতকালের সর্বাধীক ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ হয়। ফলে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ২.১১ কোটি টনে পৌছার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে দক্ষিনাঞ্চলে সহ সারা দেশে আগাম বৃষ্টির পাশাপাশি হাওড় এলাকায় বণ্যায় বিপুল পরিমান বোরো ধান বিনষ্ট সহ গুনগত মানও নষ্ট হয়েছে। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে সব ক্ষতি বাদ দিয়েই এখনো হেক্টর প্রতি ফলন চালেন হিসেবে ৪ টনের ওপরে রয়েছে।

এবার বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩% ও বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ হলেও ‘অশনি’তে ভর করে আসা বৃষ্টিপাত সহ পরবর্তি বর্ষণেও অন্তত ৫ ভাগ ধান বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়া আরো অন্তত ১০ ভাগের গুনগত মান বিনষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।

এমনকি লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত আবাদ এবং ভাল ফলনেও দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকের মুখের হাসি উজ্জল হচ্ছে না । কারণ বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এবার যে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে, তার ৯৫ভাগই ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র নির্ভর। অপরদিকে বৃহত্তর ফরিদপুরের ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টরে আবাদকৃত বোরো ধানের সেচ ব্যবস্থার প্রায় ৩৫ ভাগ ছিল ডিজেল নির্ভর। ফলে মৌসুমের শুরুতে ২৩% ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবার ধানের উৎপাদন ব্যায়ে বাড়তি বোঝা যোগ করে।

উপরন্তু কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধিও এবটি বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো বোরো সহ সব ধান কর্তনের ৯৫ ভাগই কৃষি শ্রমিক নির্ভর। বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একজন কৃষি শ্রমিকের মজুরী ৭শ টাকারও বেশী। অথচ একজন শ্রমিকের পক্ষে গড়ে ৩মন ধান কাটাও সম্ভব হচ্ছেনা। এর পরে জমি থেকে গৃহস্থের বাড়ীতে পরিবহন সহ মাড়াই খরচ রয়েছে।

ফলে বীজ সংগ্রহ থেকে জমি তৈরী, চারা উৎপাদন এবং রোপন সহ সেচ, সার, বালাইনাশক আর পরিচর্জা সহ প্রতিমন ধানের উৎপাদন ব্যায় এবার ৮শ টাকা বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। কিন্তু টানা ৪ মাসের কষ্টের সে ধান বিক্রী হচ্ছে সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ টাকা মন দরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘এতদিন কৃষকরা নিজের হাড়ভাঙা খাটুনি আর শ্রম দিয়ে ধান উৎপাদন করত বলে কিছুটা পুষিয়ে নিলেও এবার তাও একটা সম্ভব হয়নি না ডিজেলের মূল্য সহ কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির ফলে’। এ থেকে পরিত্রানে কৃষক পর্যায়ে সেচ ব্যায়ের ওপর ভর্তূকি প্রদান সহ ধান কর্তনে যান্ত্রিক সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট ওয়াকিবাহল মহল। নচেত, আগামী রবি মৌসুমে বোরো আবাদে কৃষকদের আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে বলেও মনে করছেন মহলটি। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে অনেকটাই ব্যহত করার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতিকেও ঝুকির মুখে ফেলবে বলেও মনে করছেন কৃষিবীদগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ