Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরের ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে ঐক্যের আহ্বান

আবদুল আউয়াল ঠাকুর | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৫৯ পিএম

মাদারীপুর জেলার চ-িবর্দীর পীর মাওলানা আলী আহমাদ চৌধুরীর দাওয়াতে যাওয়ার আগ্রহ সামাল দিতে পারিনি। তিনি নিজে এসে তার ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার দাওয়াত গ্রহণ করার আরো একটা বড় কারণ ছিল, এ সুবাদে ওই অঞ্চলে একবার ঘুরে আসা। সময়মতো তিনি কর্মসূচির কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। সাথে ছিলেন সহকর্মী বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। তিনিই মূলত যাওয়ার সব আয়োজন করেন। ফজরের নামাজের পর আমরা যাত্রা শুরু করি। পথে আমাদের সাথে যুক্ত হন কওমী নিউজের সম্পাদক-প্রকাশক এ কে এম আশরাফুল হক। তিনে মিলে আমরা যাত্রা করি। পীর  সাহেবের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি না থাকায় পদ্মার ওপারে গিয়ে কোনো ধরনের বেগ না পেয়েই পৌঁছে যাই সম্মেলনস্থলে। বেশ দূর থেকে মাইকের আওয়াজ শুনেই বোঝা যাচ্ছিল সম্মেলন চলছে। সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হলে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পীর সাহেবের কক্ষে। তিনি হয়তো আগে থেকেই জেনেছিলেন আমাদের আগমনের কথা। তিন দিনের সম্মেলনের এটি ছিল দ্বিতীয় দিন। সে কারণেই হয়তো দেখা গেল বড় মাঠটি ভরে রয়েছে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ওলামা-মাশায়েকে। তারা শুধু আসেনইনি, তিন দিনের সম্মেলনে তাদের অভিমতও ব্যক্ত করেছেন। সম্মেলনস্থলে যেতে যেতে রাজধানীর বাইরের দৃশ্য অনেক দিন পর দেখারও সুযোগ হলো। বিশেষ করে পদ্মার অবস্থা দেখার সুযোগ হলো। যারা মাওয়া দিয়ে সাধারণভাবে অর্থাৎ নিজস্ব পরিবহন ব্যতীত যাতায়াত করে তারা পদ্মা পাড়ি দিতে স্পিডবোটই ব্যবহার করে। স্পিডবোটে পদ্মা পাড়ি দেয়ার মধ্যে ঝুঁকি থাকলেও প্রধানত সময় বাঁচাতে এর কোনো বিকল্প নেই। ফেরিতে যেখানে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে সেখানে স্পিডবোটে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিট সময়ের প্রয়োজন হয়। যারা নতুন তাদের জন্য এটা এক ধরনের বাড়তি অভিজ্ঞতাও। যাই হোক, আমরাও স্পিডবোটের শরণাপন্ন হলাম। যাত্রার সুবিধা-অসুবিধা যাই থাকুক জনপ্রতি ভাড়া দেড়শ টাকা। এর বাইরে রয়েছে এক ধরনের মাস্তানি। দেখে মনে হয়েছে, ঘাটের নিয়ন্ত্রণ হয়তো পুরোপুরি বেসরকারি। টাকা তোলার বেলায় কড়াকড়ি যদিও যাত্রী নিরাপত্তার ব্যাপারটি খুবই অবহেলিত। প্রতিদিনের আয়ের সাথে সরকারের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা জানা নেই। তবে যাত্রীদের দেখভালে সরকারি কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। এই ঘাট দিয়ে নারী-শিশু-বয়স্কসহ অনেকেই যাতায়াত করলেও তাদের ওঠা-নামার বিষয়টি দেখভাল করার কেউ নেই। ফলে প্রতি মুহূর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অনেকে হয়তো অভিজ্ঞতার আলোকে সামলে নেন। যাদের সে অভিজ্ঞতা নেই তারা পড়েন নানা ভোগান্তিতে। সরকারি ঘোষণা ঠিক থাকলে এখনো পদ্মা সেতু হতে অনেক বাকি। এতটা সময়ে এ ঘাট দিয়ে যারা যাতায়াত করবেন তাদের এই ঝুঁকির মধ্য দিয়েই চলতে হবে যদি না পরিস্থিতির কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয়। স্বচক্ষে দিনের আলোতে পদ্মা দেখার সুযোগ নিয়েছি। স্পিডবোট হওয়ায় একেবারে পদ্মার পানির স্পর্শ পেয়েছি। আগেই একজন বলছিলেন, আল্লাহর মহিমার কথা। সাধারণভাবে আমরা হয়তো পানির মধ্যে রয়েছি বলে এর  আলাদা বৈশিষ্ট্যের কথা ভুলে থাকি। অথচ দেখুন, একই পানি যখন গঙ্গায় থাকে তখন সেই পানির ইলিশ মাছ পশ্চিমবাংলার  মানুষেরও পছন্দ নয়। অথচ যখন পদ্মা বা তার কোনো শাখা নদীতে পাওয়া যায় তখন তার স্বাদ ঘ্রাণ হয় অপূর্ব। এমনকি আমাদের দেশেও পদ্মার বাইরে যেসব নদ-নদী রয়েছে সেসব নদ-নদীর ইলিশ পদ্মার ইলিশের মতো সুস্বাদু নয়। এই যে বৈশিষ্ট্য এর আলোচনা সম্মেলনেও উঠেছিল, তবে ভিন্নভাবে। পদ্মার পানি আল্লাহর রহমত এসব নিয়ে আলোচনা করতে করতেই আমরা স্পিডবোটে উঠে পড়লাম। সকালের মিষ্টি রোদে পদ্মার ঢেউয়ের খেলা বেশ ভালোই লাগছিল। পরনের পোশাক খানিকটা ভিজে গেলেও তা কোনো বড় ব্যাপার মনে হয়নি বরং পদ্মার পানির স্পর্শ আর পদ্মার ঢেউয়ের দোলা বিভোর করে রেখেছিল। ব্যাপারটি ছিল উপভোগের, আনন্দের। যাওয়ার সময়ে জোয়ার ছিল। তখনও পদ্মায় ড্রেজিং চলতে দেখেছি। তখন পদ্মার সবটা বোঝা যায়নি। ফেরার পথ বিকালে দেখা গেল সকালে যেখানে পানি ছিল বিকালে দেখা গেল চর। মনটা বিষিয়ে উঠল। ভাবলাম আসলেই হয়তো এই রহমত থেকে আমরা বঞ্চিত হব প্রতিবেশীর বৈরী পানিনীতি এবং আমাদের ব্যর্থতার কারণে। কথাটা আরো বেশি হৃদয়ে গেঁথে গেছে পদ্মার ওপারে গিয়ে। সেখানকার লোকেরাই বলছিল, যেভাবে সব আয়োজন হচ্ছে তা দেখে আশঙ্কা, হয়তো পদ্মা আর থাকবে না। যাই হোক, পদ্মার ওপারে এখন সড়ক উন্নয়নের এক মহাযজ্ঞ চলছে। দেখে একদিকে ভালো লেগেছে যে উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করা গেল, অন্যদিকে আশঙ্কা পদ্মাশ্রয়ী মানুষগুলোর কথা ভেবে। আমরা কী আর ‘পদ্মার ঢেউ রে’ বলে সেই বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান শুনতে পাব, নাকি বালি-রুক্ষতা আমাদের গ্রাস করবে। এই চিন্তায় থাকতে থাকতেই একসময় পেরিয়ে গেলাম পদ্মা।
সম্মেলনের আয়োজক মাওলানা আলী আহমাদ চৌধুরীর    আলোচনা করার কথা ছিল শেষ দিন। নিয়মানুযায়ী হয়তো তিনি সেটাই করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ওলামা-মাশায়েখ যারা আলোচনা করেছেন তারা সকলেই শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গত বিবেচনাতেই থাকতে পারেন না। তাদের  অনেকেই পীর সাহেবের কিছু কথা শুনতে আগ্রহী থাকায় পীর সাহেব এই সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করলেন ঠিক জোহরের নামাজের জামাতের পূর্বক্ষণে। তার ভাষায় ওলামা-মাশায়েখের ঐক্যই এই সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য। এটাই সময়ের দাবি। তিনি এই আলোচনায় সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও বিশ্ব এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান নানা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সফল করতেই আলোচকরা তাদের সুচিন্তিত অভিমত দিয়েছেন। সময়ের অভাব ও অনিবার্য ব্যস্ততার কারণে পীর সাহেবের অনুরোধ সত্ত্বেও সম্মেলনের শেষ অবধি থাকা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় দিনের সম্মেলনে দেশের বিশিষ্ট যে সকল আলেম আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তাদের অনেকের আলোচনা শোনার সুযোগ হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই বর্তমান সময়ের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেই আলোচনা করেছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনাও। একজন আলোচক সমবেত শ্রোতাদের কাছে জানতে চাইলেন রাষ্ট্র ধর্ম রক্ষায় তারা সম্ভাব্য যা কিছু করণীয় তা করতে রাজি কিনা? সমবেত শ্রোতাসহ সকলেই দুই হাত তুলে তাদের সমর্থন জানিয়ে দিলেন। এই আলোচনার সূত্র ধরেই আরেকজন বললেন, পঞ্চম সংশোধনীতে জাতীয় বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আল্লাহর ওপর গভীর আস্থা  ও বিশ্বাস যুক্ত করা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা তুলে দেয়া হয়েছে। এর ফলে জাতীয় বৈশিষ্ট্যে মারাত্মক আঘাত এসেছে। এই আলোচনার জের ধরেই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি বিনির্মাণে ও একটি সুস্থ সমাজ গঠনে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। মূলত আইয়ামে জাহেলিয়া অর্থাৎ ইসলাম-পূর্বকালে যে মানবতাবিরোধী সামাজিক অবস্থা বিদ্যমান ছিল, দেখা যাবে, এখনকার সমাজের বাস্তবতাও প্রায় অনুরূপ। ওই সমাজে মেয়ে সন্তানকে জীবিত কবর দেয়াকে  অনেকে সম্মানজনক মনে করত। এখনও আজকের সমাজে নারীকে সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে না। প্রকৃত প্রস্তাবে নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আল্লাহর রাসূল (স:)। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে সে ভাগ্যবান যার প্রথম সন্তান কন্যা। মানুষের প্রকৃত মর্যাদাও তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ সমাজে মানুষের মর্যাদার স্বীকৃতি না থাকাতেই সমাজ সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, সমাজে যারা প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত তারাই ইসলামের বাণীর অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার করছে। এই সূত্র ধরেই আলোচনায় উঠে আসে দুনিয়াব্যাপী ইসলামের বিজয়ের কথা। কার্যত এ কথাই সত্যি যে, একটা সময় ছিল যখন সমাজ থেকে সকল মূল্যবোধের অবসান হওয়ার ফলে সে দুনিয়ার মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক অতৃপ্তি দানাবেঁধে বসেছিল। আধ্যাত্মিক সংকট তাদের মনোবলকে ক্ষুণœ করেছিল। ইসলাম সেই শূন্যতা পূরণে সহায়তা করেছিল। আর সে কারণেই দুনিয়ার মানুষ নিজেদের সামগ্রিক কল্যাণার্থেই ইসলামকে গ্রহণ করেছিল। দুনিয়ার একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ঢেউ লেগেছিল তৎকালীন এ অঞ্চলেও। সে কারণেই এ অঞ্চলে সংস্কৃতির মূল উপাদান হচ্ছে ইসলাম। এ আলোচনাকে আরো বিস্তৃত করেন মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। তিনি ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, রাসূলের হিজরতের আগেই এ অঞ্চলে সাহাবিদের আগমন ঘটেছিল। এই অঞ্চল হয়েই তারা চীন গিয়েছিলেন। এ অঞ্চলের যে জায়গাটি থেকে তারা মিষ্টি পানি সংগ্রহ করেছিলেন সে জায়গার নাম তারা দিয়েছিলেন খুলনা যার অর্থ হচ্ছে আমরা উৎফুল্ল। তিনি বিশ্লেষণ করে বলেন, সাহাবিদের আগমনের কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। সে কারণে বাংলাদেশের আলেমদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব¡ অনেক বেশি। সারা দুনিয়ার প্রেক্ষিত ও বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবেই। আর সে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠায় মূল আক্বিদার ভিত্তিতে আলেম সমাজের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এটাই  এখন সময়ের দাবি।
বোধকরি সময়ের এই আলোচনাই এখন সব কিছু ছাপিয়ে উঠেছে। আজকের বিশ্ব পরিস্থিতির মূল্যায়নে এটা পরিষ্কার যে, দুনিয়ার সর্বত্রই মূল্যবোধের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ব্যভিচার, অবিচার, অন্যায়, সামাজিক অপরাধ সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। এর অর্থ হচ্ছে, সমাজ এখন আর আল্লাহর প্রদর্শিত পথে নেই। বর্তমানে যা ঘটছে অতীতেও তা ঘটেছে। পার্থক্য অতীতে এসব অপরাধের জন্য অনেক জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এরপর আবার নবী রাসূল পাঠানো হয়েছে। এখন নবুয়তের দরজা বন্ধ। তাই মানুষকে শেষ নবী প্রদর্শিত পথেই চলতে হবে। আর এই পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব হচ্ছে ওলামা-মাশায়েখের। আজও পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত আজানের আওয়াজ শোনা যায়। বিশ্বাসীর সংখ্যাও অগণিত। সমাজে যখন ধর্মের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, মানুষকে সত্য-ন্যায়ের পথে ডাকার কেউ ছিল না তখন আল্লাহর রাসূল (স:) সকল ভয়ভীতি-প্রলোভন অস্বীকার করে, পায়ে দলে ইসলামের বাণী প্রচার করেছেন এবং ইসলামকে বিজয়ী করেছেন। আর তার সাথে যারা ছিলেন তারা এতটাই শক্তিমান ছিলেন যে, তাদেরই কেউ আটলান্টিকে ঘোড়া ভাসিয়ে বলেছিলেন, এরপর যদি বিশ্ব থাকত তাহলে আমরা সেখানেও পৌঁছে যেতাম। আজকের ভাবনার মূল বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে মাদারীপুরের সম্মেলনে। পবিত্র কোরআন এবং বিদায় হজে রাসূল স্পষ্টভাবেই বলেছেন, যত দিন মুসলমানরা আল্লাহর কোরআন ও রাসূলের সুন্নাহ আঁকড়ে থাকবে ততদিন তাদের পতন হবে না। আজ যদি বিশ্বের দিকে তাকানো যায় তাহলে দেখা যাবে, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর, কাশ্মীর, মিয়ানমার, ইউরোপীয় বিশ্বসহ সর্বত্রই মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে অথচ এর প্রতিকারের কোনো পথ-পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে এদেশেও মুসলমানদের বাস্তবতা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ইসলাম যেহেতু এই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার মূল ভিত্তি, তাই এখানে আঘাত করা গেলে অন্য কোথাও কিছু করার দরকার নেই। সে প্রেক্ষিত বিবেচনাতেই আলেম সমাজের ভূমিকা বিশ্লেষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সত্যি হচ্ছে, সকলেই আল্লাহ রাসূলের কথা বলছেন অথচ তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই বরং অনৈক্য প্রবল। তারা একে অপরকে দুষছেন। ইসলামবিরোধী মহল এ থেকে একদিকে যেমন মজা লুটছে, অন্যদিকে ইসলামের বিপক্ষে তা কাজে লাগাচ্ছে। সে কারণেই মাদারীপুরের সম্মেলনে যেমনি পীর সাহেব তেমনি আলোচকরাও  আলেম সমাজের ঐক্যের ওপর সমধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। কোথায় এবং কী কারণে অনৈক্য তাও খুঁজে বের করতে আহ্বান জানিয়েছেন। সঙ্গত আলোচনাতেই উঠে এসেছে লেবাসে-পোশাকে, আচার-আচরণে হয়তো অগণিত মুসলমান রয়েছে বাস্তবে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল যে রশি আঁকড়ে ধরতে বলেছেন সে ব্যাপারটি হয়তো সে রূপ নেই। এই না থাকার বিষয়টি অনুসন্ধান করা গেলেই জানা সম্ভব। মানুষকে আল্লাহ দুনিয়ার মোহে না জড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। দুনিয়াবী মোহের প্রধান উপজীব্য হচ্ছে অর্থের মোহ। বোধকরি সকল প্রলোভন এড়িয়ে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া গেলেই সকল প্রতিবন্ধকতার অন্ধকার দূরীভূত হবে। মাদারীপুরের সম্মেলনে যে আহ্বান জানানো হয়েছে তার মর্মার্থ অনুধাবনে যদি নির্মোহ হওয়া যায় তাহলেই বোধকরি বিদ্যমান সকল সমস্যার সমাধানের পথ বেরিয়ে যাবে। প্ররোচনা-প্রলোভন নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি যদি আলেম সমাজের একমাত্র কাম্য হয় তাহলেই একটি ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ