Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তালায় মাছ চাষে ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক সারসহ অপদ্রব্য

এমএম হায়দার আলী, তালা (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ নভেম্বর, ২০১৬, ৯:৩৩ পিএম

তালা উপজেলায় একদিকে জলাবদ্ধতা অন্যদিকে অসংখ্য মৎস্যঘেরগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিক সার, মেডিসিন, গবাদিপশু, মানব বিষ্ঠা ব্যবহার করে মাছ উৎপাদনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র চরম হুমকির মুখে পড়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার বিলাঞ্চলের হাজার হাজার বিঘা জমিতে প্রায় দেড় যুগ ধরে বাগদা-গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে আসছে। যে মাছ চাষের সফলতা হিসেবে সাতক্ষীরা জেলা সাদা সোনা (চিংড়ি) নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে মির্জাপুর, বারাত, খরাইল, তেঁতুলিয়া বিলে অবস্থিত মৎস্যঘেরসহ একশ্রেণীর মৎস্যচাষীরা মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অপদ্রব্য ব্যবহার করে কয়েক বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত মাছ উৎপাদন করে আসছে। সংশ্লিষ্ট মৎস্য অধিদপ্তর এ ঘটনার সত্যতাও স্বীকার করেছে। ইসলামকাটি এলাকার ইসমাইল গাজী, মোকসুদপুর গ্রামের অনিল কৃষ্ণসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, এবছরও একইভাবে মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তাদের মৎস্যঘের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আকাশে-বাতাসে পচা দুর্গন্ধ ভাসছে। রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করতে মুখে কাপড় দিচ্ছে। জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও অপদ্রব্য ব্যবহার করে মাছ চাষ করায় পানির রং নীল বর্ণ ধারণ করাসহ বিষক্রিয়া হয়ে বেশিরভাগ মাছ মারা গেছে। যে কারণে দিন দিন দুর্গন্ধ প্রকট হচ্ছে। এ বিষয়ে তালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাদিউজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সঠিকভাবে মাছ চাষের জন্য ইতোমধ্যে ৪ শত কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তারপরও এক ধরনের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মৎস্য ঘেরের পানিতে রাসায়নিক সার সালফার, বিভিন্ন কোম্পানির মোটাতাজাকরণ খাবার ব্যবহার করছে। ঐ সমস্ত খাবারে ডিএআর নম্বর পর্যন্ত নেই। ইতোমধ্যে পাটকেলঘাটা ও তালা বাজারে বিভিন্ন মৎস্য খাদ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ীকে ডিএআর নম্বর ছাড়া খাদ্য বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। এদিকে উপজেলার তৈলকূপী গ্রামের মোসলের গাজী জানিয়েছেন, বাজার থেকে কাতলা ও তেলাপিয়া মাছ গত রোববার কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। রান্না করার পর ঐ মাছ প্রচ- দুর্গন্ধ হওয়ায় তা খেতে পারেননি। তবে বড় মাছের লোভ সামলাতে না পেরে পরিবারের অনেকেই পেটের অসুখে ভুগেছে। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ গাজী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মাছের ব্যবসা করে আসছি। বর্তমান পাইকারি বাজার বিনেরপোতা ও দলুয়ায় বেশিরভাগ মাছই অপদ্রব্য দিয়ে চাষ করা, যে কারণে মাছ ক্রয়ের সময় সচেতনতা অবলম্বন করতে হয়। তালা উপজেলা সদর হাসপাতালের টিএইচও প্রতাপ কাশ্যপী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন বেশিরভাগ মৎস্য ঘেরে পোল্ট্রি ফিড ব্যবহার করা হচ্ছে। পোল্ট্রি ফিডে প্রচুর পরিমাণ ক্রোমিয়াম থাকে। যা মানবদেহে ৮০-১২০ পর্যন্ত সহনশীল। কিন্তু পোল্ট্রি খাদ্যে উৎপাদিত মাছের জায়গা বিশেষ ক্রোমিয়াম ৯০০ থেকে ১৪০০ পর্যন্ত রয়েছে যা মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। এধরনের উৎপাদিত মাছ মানবদেহে প্রবেশ করলে নার্ভ সমস্যাসহ মস্তিষ্কের চরম ক্ষতি হয়। এর ফলে মানুষের স্বাভাবিক গ্রোথ বাধাগ্রস্তসহ ক্যান্সারও হতে পারে। সবমিলিয়ে এখানকার মাছ চাষের সুনাম ধরে রাখাসহ জনস্বাস্থ্য উন্নতির লক্ষ্যে স্থানীয় সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ