Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাঁশের সাঁকোতেই আটকে আছে জীবন

৫০ বছরেও মেলেনি পাকা সেতু

তারাকান্দা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

“নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস, নদীর ওপার বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, যাহা কিছু সুখ সকলি ওপাড়ে।” কবির কবিতার সাথে মিল রেখে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের গোয়ালাকান্দা এবং হীরারকান্দার মানুষের ভাবনাটা মনে হয় এমনই। এই দুই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে রাংসা নদী। তার উপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোতে আটকে গেছে তাদের জীবন। স্বাধীনতার পর এতবছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি একটি পাকা সেতু।
কথা দিয়েছেন অনেকে, মিলেছে আশ্বাস। এলাকার বাসিন্দারা আশায় বুক বেঁধেছেন কত শতবার। সব হতাশায় পর্যুবসিত হয়েছে। বারবার এই এলাকার মানুষ হয়েছেন আশাহত। দুপাড়ে ২০ গ্রামের মানুষ জীবিকার তাগিদে আত্মীয়ের বাড়িতে, হাটবাজারে যেতে প্রতিনিয়তই পাড়ি দেয় বাঁশের নড়বড়ে এই সাঁকোটি। ঊভয়পাড়ে রয়েছে জমিজমা। কষ্টের এই ফসল পরিবহনের নেই কোন উপায়। সবচেয়ে অবহেলিত হীরারকান্দায় সাঁকো পেরিয়েই চলছে জীবন। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা কোন ধরনের আধুনিক অবকাঠামোই গড়ে উঠেনি এই গ্রামটিতে। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা আটকে গেছে যেন একটি পাকা সেতুর অভাবে।
হীরারকান্দা গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম নারায়ণপুর, দর্জিগাতি, পলাশিয়া, ধলীরকান্দা, শাশীকান্দার বাসিন্দারা এই সাঁকোটি পেরিয়েই গোয়ালাকান্দায় পৌঁছে। তারপর উপজেলাসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি গোয়ালাকান্দাসহ শিঙ্গেরকান্দা, রামপুর, মানিকদি, সাদিপুর, খলিশাজান, পারুলীতলা, নাগডরা, চাড়িয়া থেকে মানুষজন এই সাঁকোটি পেরিয়েই আসেন হীরারকান্দা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে। প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক লোক আশা যাওয়া করেন এই সাঁকোটি পেরিয়ে।
হীরারকান্দায় নেই কোন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা বা শিক্ষাবান্ধব কোন স্থাপনা বা হাটবাজার। প্রতিনিয়তই তাদের এই সাঁকোটি পেরিয়ে আসতে হয় গোয়ালাকান্দায়। ছোট ছোট স্কুলের ছেলে মেয়েরা ঝুঁকি নিয়েই পার হয় এই সাঁকোটি। উৎপাদিত ফসল কাঁধে উঠিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এ যেন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। অসুস্থ রোগীকেও কাঁধে চড়িয়েই পার করতে হয় সাঁকোটি। আবার মাঝে মাঝে সাঁকোটির বাঁশের পাটাতন ভেঙ্গে ঘটে দুর্ঘটনা।
হীরারকান্দা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কিতাব আলী জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দুটি বাঁশ জড়িয়ে তৈরী সাঁকোতে নদী পারাপার করেছেন। ভারী কোন কিছুই পরিবহন করা সম্ভব হয়না। কয়েকদিন আগে এখানে দুর্ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছেন। যাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
একই গ্রামের যুবক এমদাদুল হক (৩০) বলেন, জন্মের পর থেকেই এই সাঁকোটি পার হয়ে উপজেলাসহ দেশের সর্বত্র যাতায়াত করছি। আমাদের এই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের হাজারো মানুষের স্বপ্ন বাঁধা পড়েছে বাঁশের নড়বড়ে সাঁকোতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই সাঁকোটি পেরিয়েই হাজারো মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। এদিকে, ১৭ মে তারাকান্দা উপজেলা প্রশাসনের মাসিক মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে বলে জানা গেছে। অচিরেই একটি পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেবে প্রশাসন এমনটিই মনে করছে জনসাধারণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ