Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আধা ঘণ্টার সড়কে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা

মো. মোবাশ্যারুল ইসলাম সবুজ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:০৩ পিএম | আপডেট : ১২:২৭ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

ভালুকা-গফরগাঁও সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে। ফলে ঘরেফেরা মানুষের ভোগান্তি সীমাহীন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে ছোট-বড় যানবাহন। আধা-ঘণ্টার সড়কটি পাড়ি দিতে সময় ব্যয় হচ্ছে দু’থেকে আড়াই ঘণ্টা। যেন দেখার কেউ নেই। এ রাস্তা দিয়ে সংসদ সদস্য নিজ বাড়িতে যাতায়াত করে থাকেন, তারপরও তিনি কোন প্রকার সংস্কারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভালুকা-গফরগাঁও সড়কের বেহাল দশায় যাত্রী দুর্ভোগের কথা বলে বুঝানো কঠিন। কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন সড়কটিতে যাতায়াতের কি বিড়ম্বনা। ২১কি.মি সড়কটি মাত্র আধা ঘণ্টা বা একটু বেশি সময়ে পাড়ি দেয়ার কথা থাকলেও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় অতিক্রম করতে হয়। সড়কটিতে প্রতি নিয়তই বিকল হয় গাড়ি, ঘটে দুর্ঘটনা। জেলা সদর কিংবা রাজধানীর সাথে সড়ক যোগে যোগাযোগের জন্য দু’উপজেলার একমাত্র রাস্তা এটি ফলে বলার অপেক্ষা রাখে না রাস্তাটি কতোটা গুরুত্ব বহন করে। ভালুকা ও গফরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিক্ষণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস, পিকআপ বা টেম্পু, সিএনজিযোগে ঢাকা, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন ওই সড়ক হয়ে। চলাচল করে পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপূরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষও। এ ছাড়াও প্রতিদিন বালিসহ অন্যান্য মালামালবাহী অসংখ্য ট্রাক, পিকআপ সীমাহীন ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত করে ওই সড়কে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ভালুকা থেকে গফরগাঁও পর্যন্ত ওই সড়কটির প্রায় সবটুকুর সিলকুট, কার্পেটিং ওঠে খানা-খন্দক ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই। বৃষ্টিতে এ বছর আরও ভয়বহ রূপ ধারণ করেছে। বর্তমানের অবস্থা এতই নাজুক যে ওই সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাই দুষ্কর। অসুস্থ মানুষের যাতায়াত করা তো দূরের কথা এই পথে কোন সুস্থ মানুষ চলাচলেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় অপারগ হয়ে প্রতি মুহূর্তেই দুর্ঘটনা আশঙ্কা ও মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই ওই সড়ক হয়ে যানবাহন চলাচল করতে হয় যাত্রী সাধারণকে। রাস্তাটি বেশ কয়েক স্থানে মাছের খামারে রাস্তা ভেঙে সরু হয়ে গেছে। ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে চলাচলকারী বাস চালক নাজমুল হক জানান, ভালুকা থেকে গফরগাঁয়ের দূরত্ব মাত্র ২১কিলোমিটার। এই রাস্তাটুকু যেতে প্রায় দুই থেকে সোয়া দুই ঘণ্টা সময় লাগে। রাস্তাটি যানচলাচল অযোগ্য হওয়ায় গাড়ির স্টিায়ারিংএ বসে সর্বদাই আতঙ্কের মাঝে থাকতে হয়, কখন গর্তে পড়ে গাড়ি বিকল অথবা ঝাঁকি খেয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। গত কয়েক দিন পূর্বে গর্তের মধ্যে মাল বোঝাই ট্রাক আটকে উল্টে গিয়ে মাছের খামারে পড়ে যায়। অধ্যাপক ডা.এম আমান উল্লাহ এম,পি সাহেবের গ্রামের বাড়িতে এ রাস্তা দিয়ে যেতে হয় তিনি রাস্তার এ ভয়াবহ অবস্থা দেখেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না এটা খবই দুঃখজনক। ভালুকা থেকে নিয়মিত গফরগাঁও যাতায়াতকারী ৪র্থ শ্রেণীর এক সরকারি কর্মচারী বলেন, ‘সড়কটির কি যে অবস্থা তা বলে বুঝানো যাবে না। সড়কটি দিয়ে একদিন আসা-যাওয়া করলে পর দিন আর যেতে মন চায় না। এরপরও আমারা অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী সীমাহীন কষ্ট শিকার করে ওই সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করি। সেলিম নামের এক যাত্রী জানান, ‘এই বুঝি গেলাম, এই আশঙ্কায় ভালুকা-গফরগাঁও সড়কে বাসে যাতায়াত করার সময় প্রতি মুহূর্তে আল্লার নাম মুখে উচ্চারণ করে যেতে হয় বাসের যাত্রী সাধারণকে। কারণ, ভাঙাচোরা সড়কে যে কোন সময় বাসটি পড়ে যেতে পারে পার্শ্ববর্তী মাছের খামারে।’ উপজেলার টুংরাপাড়া গ্রামের রিক্সা চালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ওই রাস্তায় রিক্সা চালাইয়া সংসার চালাইতাম। কিšুÍ সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে এক ক্ষ্যাপ দিলে সারা দিন আর রিক্সার পেডেলে পাও দিবার মনে ধরে না।’ উপজেলার ধীতপুর গ্রামের ভ্যান চালক উসমান আলী বলেন, ‘আগে সারাদিনে বিভিন্ন মাল লইয়া কয়েকটা ক্ষ্যাপ দিতাম। আর অহন একটা ক্ষ্যাপ লইয়া গেলেই জানডা বাইর অইয়া যাইবার চায়’। সড়কের নিয়মিত যাত্রী আবদুর রহমান বলেন, ‘বাসে বা অন্য যানবাহনে করে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করার সময় গাড়ির দোল খাওয়া দেখে মনে হয় বুঝি অধিক মাত্রায় ভূ-কম্পন হচ্ছে।’ ওই সড়কের যাত্রী হাতেম আলী, সিরাজ উদ্দিন, আবুল কাশেমসহ অনেকেই জানান, বছর তিনেক আগে ওই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিছু কাজ করার পর অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে সওজের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভাগীয় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে প্রয়োজনীয় মেরামত কাজ সম্ভব হবে। এখন কেবল বিভাগীয় রুটিন মেইন্টেনেন্সের মাধ্যমে সড়কটির সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ সড়কটির যে অবস্থা তাতে রুটিন মেইন্টেন্যান্স করে এ সড়কটি টিকিয়ে রাখা কঠিন। ড্যাবলপম্যান্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুমোদন ছাড়া এ সড়কটির স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে সওজ সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ