Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারি ব্যাংকগুলো ভোগাচ্ছে গোটা ব্যাংক খাতকে

বিআইবিএমের আলোচনা সভায় বক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তুলনায় মূলধন পর্যাপ্ততার হার (সিআরএআর) অনুপাত কাক্সিক্ষতমাত্রায় না থাকায় পুরো ব্যাংক খাতের মূলধন অনুপাত কমে যাচ্ছে। এতে দুর্বল দেখাচ্ছে গোটা ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য। আবার রাষ্ট্রায়াত্ত এই ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বছরের পর বছর করের টাকায় মূলধন পুনর্ভরণ করছে সরকার। এক্ষেত্রে মূলধন পুনর্ভরনের বিকল্প উপায় অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, মূলধন পুনর্ভরণ না করেও বিকল্প উপায়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে সরকারি ব্যাংকগুলো। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরস্থ’ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘ব্যাসেল-৩ : বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তারা এসব পরামর্শ দেন। বিআইবিএম আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএম’র অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। এতে দেখা যায়, ২০১৫ সাল শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভারিত সম্পদের তুলনায় মূলধন অনুপাত (সিআরএআর) ১০.৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ৬.৩৫ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। এই খাতের ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ঋণাত্মক ৩১.৯৫ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সিআরএআর ১২.৩৮ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকগুলোর সিআরএআর সবচেয়ে বেশি, ২৫.৬০ শতাংশ। আর ২০১০ সালে ব্যাংক খাতের গড় সিআরএআর ছিলো ৯.৯১ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকের ঝুঁকিভারিত সম্পদের ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে ধাপে ধাপে ব্যাসেল-১ নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হয়। বর্তমানে চলছে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের কাজ। ২০১৯ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বক্তারা বলেন, নীতিশাস্ত্র অনুসরণ করে ব্যাংকিং পরিচালনা করলে ঝুঁকি এমনিতেই কমে যায়। এজন্য নতুন কোনো উদ্যোগের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা নীতিশাস্ত্র ভুলে যাওয়ার কারণেই এ খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়াকেই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণ হিসেবে উল্লেখ বক্তারা বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার মূলে রয়েছে সঠিকভাবে ঝুঁকি মূল্যায়ন না করা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ ঝুঁকি নীতিমালার অপব্যবহারের অভিযোগও তোলেন ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে। বক্তারা বলেন,
ঋণ বিতরণসহ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উপর রাজনৈতিক চাপ কম থাকে। কিন্তু সরকারি ব্যাংকগুলোর উপর রাজনৈতিক চাপ থাকার কারণে অধিকাংশ সময়ই সঠিকভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। তারা আরো বলেন, আস্থা ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে ব্যাংকিং খাত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকগুলোর উপর আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রেটিং নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আলোচকরা। তারা বলেন, ক্রেডিট রেটিং যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে কেন? তাদের ধারণা অর্থের বিনিময়ে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলো ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণমান ভালো দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। মূল কাজের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বেশকিছু সেবামূলক কাজ করতে গিয়ে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও বিআইবিএমের ‘এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার’ অধ্যাপক এসএ চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৪৫টি সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার কাজে জড়িত। এই কাজগুলো তারা অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে। অথবা একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে সেই কম্পানির মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারে। এর ফলে তারা মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বেশি মনোযোগী হতে পারবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ