বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও নৈরাজ্য ছাড়াও লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল রোববার ময়মনসিংহ এবং মাগুরায় বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহের সমাবেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা প্রতিবেশির বন্ধুত্ব চাই, সৎ বন্ধু চাই। কিন্তু কর্তৃত্ব মানব না। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন,মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। দেশ কারো বাবার না। অপরদিকে মাগুরার সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক। সমাবেশ চলাকালে মাইকের ব্যবহার নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে আহত হয় দুইজন।
আমাদের ময়মনসিংহ ব্যুরো জানায় : বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতা জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তবে দেশের সরকারে থাকবে তা ঠিক করবে দেশের জনগণ। আমরা প্রতিবেশির বন্ধুত্ব চাই, সৎ বন্ধু চাই। কিন্তু কর্তৃত্ব মানব না। দিল্লী থেকে মানসিংহ এসে পরাজিত হয়েছিল এই ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে।
সিদ্ধান্ত নিন দেশের মানুষের সাথে থাকবেন, না লুটপাটকারিদের সাথে থাকবেন। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন,মানুষের চোখের ভাষা বুঝুন। দেশ কারো বাবার না।
গতকাল রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় রোডস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিরোধী নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে তিনি আরো বলেন, দেশের মেঘা প্রকল্প থেকে দশ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অথচ তিনি কানে শুনেন না, চোখেও দেখেন না। ফলে দেশের গুনবতি প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশিরা আর বহন করতে পারছেন না। তারা তাকে গাড় থেকে নামাতে চান।
তাই নতুন করে শপথ নেওয়ার কিছু নেই জানিয়ে এই বিএনপি নেতা দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবদিক থেকে প্রস্তুতি নিন। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি, দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, আগামী বাংলাদেশ কোন পথে যাবে, ফয়সালা হবে রাজপথে। যার যার এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে দুর্গ গড়ে তুলুন। নিরবে আর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করা হবে না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেশের সংবিধান আমাদের অধিকার দিয়েছে। সরকারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও সাংবিধানিক অধিকার। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আর আমরা মার খাব না, যেখানে আক্রমণ হবে সাথে সাথে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য নির্দেশ দিতে হবে না।
এ সময় সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শ্রীলংকা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানে মানে কেটে পড়েন। দেশের মালিকানা জনগনের কাছে ফেরত দিন। দেশের দ্রব্যমূল্যের বেড়েছে, লুটপাটের কারণে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন দেশে এখন আর সভা-সমাবেশে বাঁধা নেই। এর পরদিনই ড.মোশাররফ হোসেনের সমাবেশে হামলা হয়েছে। মূলত তারা যা বলে, তার উল্টো বুঝতে হবে। এটাই আওয়ামীলীগ।
সবাই বলছে, আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না। ইভিএম দিয়ে লাভ কি ? আমরা আওয়ামীলীগের অধীনে নির্বাচন করব না এবং সেই নির্বাচন হতে দিব না। জনগণ বার বার চেয়ে চেয়ে দেখবে এটা ঠিক নয়, এখন সময় হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। এ সময় যৌথভাবে সভা পরিচালনা করে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ আমজাদ আলী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. ওয়ারেস আলী মামুন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার, শাহ নূরুল কবীর শাহীন, এড. আবুল বাসার আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু, এড.ফাত্তাহ খান, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, শাহ শিব্বির আহমেদ ভুলু, এড. এমএ হান্নান খান, দক্ষিণ জেলা কৃষক দলের আহবায়ক লিটন আকন্দ প্রমুখ।
স্টাফ রিপোর্টার মাগুরা থেকে জানান : দেশব্যাপী বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও চাল ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মাগুরা জেলা বিএনপি’র বিক্ষোভ সমাবেশে মাইকের ব্যবহার নিয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাড.ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল, জেলা ছাত্র দলের সভাপতি আব্দুর রহিম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কুতুব উদ্দিন রানা আহত হয়েছে। জেলা বিএনপি আহবায়ক আলী আহম্মদ এ তথ্য জানান। সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বক্তব্য রাখার সময় এ ঘটনা ঘটে। জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, কতৃত্ববাদী এ স্বৈরাচারী সরকারকে গণআন্দেলেনে হটিয়ে নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে নির্বাচন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কোন স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতা ছাড়ার ইতিহাস নেই , তাই সবাইকে আন্দোলনে নেমে আজ দেশ বাঁচাতে হবে। তিনি তার বক্তব্য রাখা কালে পুলিশের লঠি চার্জের নিন্দা জানান। মাগুরা জেলা বিএনপির আহবায়ক আলী আহাম্মদের সভাপতিত্বে গতকাল রোববার সকালে জেলা বিএনপির ইসলামপুরপাড়া কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আহসান হাবীব কিশোর, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মাগুরা ১ আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন খান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর হোসেন, খান হাসান ইমাম সুজা, বিএনপি পৌর কমিটির সভাপতি কুতুব উদ্দিন, সাবেক সদর থানা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম তুষার,জেলা যুবদল সভাপতি অ্যাড, ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল, সৈয়দ মাহবুর আলী মিল্টন গোলাম জাহিদ, ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম। পরবর্তীতে ভায়না মোড়ে ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিমের নেতৃত্বে মিছিল বের করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মাগুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, সমাবেশের প্রধান অতিথির আগমনের সময় তাদের নিজেদের মধ্যে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পুলিশের সাথে কোন ঘটনা ঘটেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।