Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নড়াইলের সুপারি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়

বাড়ছে বাণিজ্যিক চাষাবাদ

নড়াইল জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নড়াইলে দিন দিন বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে সুপারির চাষ। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার সুপারির হাট জমে উঠেছে। নড়াইলের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সুপারি যাচ্ছে নোয়াখালি, লক্ষি¥পুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের অন্তত ২০টি জেলায়। এসকল হাটকে সামনে রেখে জেলার প্রায় ২ হাজার মৌসুম  ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত বছরের তুলনায় এবছরে সুপারির দাম বেশি তাই বেশ খুশি স্থানীয় সুপারি চাষিরা। নড়াইল কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব থেকেই সুপারি উৎপাদন হতো। কিন্তু তখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ হত না। তখন শুধু জেলার বিভিন্ন বসতভিটার চারপাশে, বিভিন্ন পতিত জমিতে, ঘের অথবা পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে সুপারি গাছ ছিল। সুপারির ফলন ভালো হওয়ায় ও বাজারে সুপারির দাম ভালো থাকায় জেলার চাষিরা দিনে দিনে সুপারি চাষের দিকে আগ্রহ দেখায়। গত ১০ বছর পূর্ব থেকে জেলার চাষিরা স্বল্প পরিসরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সুপারির চাষ শুরু করে। আর এ চাষে লাভবান হওয়ায় দিন দিন সুপারি চাষ বাড়ছে। কৃষকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও, কৃষক নেতা ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় মোট প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়। তবে কৃষি  বিভাগ বলছে, জেলায় সুপারি বাগান অনেক থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে ৬৫০ হেক্টর জমিতে এ চাষ করা হয়েছে। জেলার তিনটি উপজেলাতেই এ চাষ ভালো হয়। তবে সদরে ও লোহাগড়া উপজেলাতে সুপারি চাষ অনেক বেশি। সাধারণত বেলে-দোয়াশ মাটিতে সুপারি চাষ ভালো হয়। জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু করে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সুপারির চারা লাগানো হয়। ৫ ফুট বাই ৫ ফুট দূরত্ব রেখে প্রতিটা চারা লাগাতে হয়। চারা লাগানোর ৭-৮ বছর পর থেকে ফল আসা শুরু হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে গাছে ফুল আসে ফুল থেকে ফল হয় এরপর আশ্বিন-কার্তিক মাসে পরিপক্ব সুপারি গাছ থেকে পাড়া হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ২.৬৮ মে.টন সুপারি উৎপাদন করা হয়। সুপারি গাছে তেমন কোনো রোগ হয় না। তবে সুপারি পাকার আগে কোনো কোনো গাছে সুপারিতে পোকা লাগে। এক প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ করে সেটি দমন করা যায়। একটি গাছ থেকে অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ বছর একভাবে ফল (সুপারি) পাওয়া যায়। নড়াইলে বিভিন্ন  হাটে-বাজারে সুপারি বেচাকেনা হয়। তবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট হলো সদরের রূপগঞ্জ হাট এবং লোহাগড়া উপজেলার এ্যাড়েন্দা বাজার। রূপগঞ্জ বাজারে প্রতিদিনই সুপারি বেচাকেনা হয়, তবে রোববার ও বৃহস্পতিবারে বড় পাইকারি হাট বসে। এ্যাড়েন্দা বাজারে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবারে সুপারির বড় পাইকারি হাট বসে, এ হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি কিনে নিয়ে যায়। এ্যাড়েন্দা বাজারের ব্যবসায়ী জয়নুল আবেদিন জানান, স্থানীয়ভাবে ২০০ পিস সুপারিতে এক কুড়ি হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি কুড়ি সুপারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে সুপারি ক্রয়  করে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করি। লাভ ভালো হয়। লক্ষি¥পুর জেলার রায়পুর উপজেলার চরবাবরি গ্রামের সুপারি ব্যবসায়ী মো. নওশার জানান, সে ১৪ বছর যাবৎ নড়াইল থেকে সুপারি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় করে। তিনি প্রতি মৌসুমে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক সুপারি নড়াইলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রয় করেন। লাভ ভালো হয়। চাষিরা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। চারা লাগানোর  প্রথম ২-৩ বছর একটু কষ্ট করতে হয়। তখন ছোট চারা গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলার ভয় থাকে। প্রথমদিকে জমিতে স্বল্প পরিমাণ সারও দিতে হয়। ৫-৬ বছর পর গাছে ফল আসে। একবার ফল আসলে একাধারে অন্তত ৪০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফল আসার পরে তেমন কোনো খরচ হয় না। প্রতিটা গাছ থেকে বছরে আকারভেদে ৩শ’ থেকে  ৫শ’ পিস সুপারি পাওয়া যায়। নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জানান, এ জেলার মাটি সুপারি চাষের জন্য খুব উপযোগী। এখানে অনেক আগে থেকে প্রচুর সুপারি গাছ ছিল। সুপারি একটি লাভজনক ফল হওয়ায় জেলার অনেক চাষিরা তাদের পতিত জমিতে সুপারির বাগান করছেন। আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। দিনে দিনে এ চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ