Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন গ্রাম ইউনিয়ন ও উপজেলার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচন

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরা এখন গ্রামের মাঠে। তারা চষে বেড়াচ্ছেন গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলার সব জনপদ। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন নেতারা। নির্বাচিত হলে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচনে শুধু চেয়ারম্যান পদে নন, মাঠে নেমেছেন সদস্যপদ প্রার্থীরাও। জেলার সাতটি উপজেলা, ৭৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার এক হাজার ৬১ জনপ্রতিনিধি ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্য। জেলার ১৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। জানা যায়, বিগত এরশাদ সরকারের আমলে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রথম মনোনীত চেয়ারম্যান ছিলেন অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১১ সালে আ.লীগের মনোনীত হয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসক হন জেলা আ.লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মুনসুর আহমেদ। আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে কে চেয়ারম্যান হবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা-কল্পনা। তবে এখন পর্যন্ত জানা গেছে, সাতক্ষীরার এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসছেন না বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী। সে ক্ষেত্রে এ নির্বাচন আ.লীগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এজন্য চেয়ারম্যানের পদ নিয়েই দলের মধ্যে চলছে গ্রুপিং। দলের হাইকমান্ড কাকে মনোনয়ন দেবে, না দেবে, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান প্রশাসক ও জেলা আ.লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ। তরুণ ছাত্রলীগ নেতৃত্ব থেকে উঠে আসা মুনসুর আহমেদ দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে পরপর চারবার চেয়ারম্যানের পদ জয়লাভ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের পরিচয় দেন তিনি। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে তা প্রত্যাহার করে নেন মুনসুর অহমেদ। ১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত টানা ১৯ বছর জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থেকে তিনি আ.লীগের দ্বিতীয় অভিভাবক হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ দলের সভাপতি হন ২০১৫ সালে। এরপর ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের প্রশাসক মনোনীত হন তিনি। তবে, তাকে নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। এমনকি আ.লীগের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তুষ্টিও বিদ্যমান। এদিকে নির্বাচনে আগ্রহী হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ও তালা-কলারোয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার শেখ মুজিবুর রহমান রাজধানী ঢাকায় বসবাস করায় জনগণ থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। তবে দলের প্রতি তিনি নিবেদিতপ্রাণ। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হতে পারলে জেলার উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন সাতক্ষীরার রাজনীতিতে ক্লিন ইমেজধারী নেতা মো. নজরুল ইসলাম। ২০০৪ থেকে এখন পর্যন্ত পরপর দুবার জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলকে সংগঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন। দলের জন্য পুরো সময় ব্যয় করেছেন তিনি। তবে তার আপন ভাই হাবিবুর রহমান জেলা জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এবং তার গর্ভধারিণী মা জামায়াতের রুকুন হওয়ায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিতর্ক রয়েছে চরম পর্যায়ে। তিনি কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ১৯৯৫ সালে জেলা আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সাতক্ষীরা সদর আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেন। নবম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে তা প্রত্যাহার করে নেন। ২০০৯ সালে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারিকে অর্ধেক ভোটে হারিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনি উন্নয়ন সম্প্রসারণে আরো সময় দেবেন বলে জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য জোর প্রচারণায় রয়েছেন ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ সদস্য, স্বাধীনতা-পরবর্তী তিনবারের সংসদ সদস্য এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত ঢাকা নগর আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাতক্ষীরার সৈয়দ কমাল বখত সাকির একমাত্র ছেলে সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা, পরে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এবং বর্তমানে জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি স্পিকার সৈয়দ জালালউদ্দিন হাশেমীর পৌত্র। দাদা ও বাবার রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিচয়ে তিনি সবার কাছে পৌঁছানোর সুযোগ পেয়েছেন। নির্বাচিত হলে তিনি জেলার উন্নয়নে মনোযোগী হবেন বলে জানান। দলে তার রয়েছে প্রচুর ইমেজ। জেলা আ.লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু আহমেদ স্থানীয় দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। ১৯৬৯ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, ১৯৭২ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত যশোর সিটি কলেজ ভিপি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আটক হন। ১৯৭৬ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু আহমেদ ১৯৮০ সালে সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও ১৯৮৩-তে সভাপতি হন। এ সময় তিনি সাতক্ষীরা সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতার পেশায় যোগ দিয়ে অধ্যক্ষ পদে অবসর নেন। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত পরপর দুবার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তিনি। রাজনৈতিক আন্দোলনে তিনি অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে কাজ করেছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনি উন্নয়ন সম্প্রসারণে ব্রতী হবেন। তবে, সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল দখল করা নিয়ে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতির সঙ্গে দা-কুমড়ো সম্পর্ক রয়েছে তার। যেটি ভোটে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইদুর রহমান। একজন কৃষকদরদি ও ভূমিহীন নেতা হিসেবে তিনি ১৯৮৮ সালে বাঁকাল ইসলামপুরে ভূমিহীন উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৯৮-তে দেবহাটা কালীগঞ্জে ভূমিহীন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে সাড়া জাগান কাজী সাঈদ। প্রশাসনের দুর্নীতি এবং ভূমি মালিকদের শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তিনি ১৯৯৬ সালে ফের কারাবরণ করেন। কাজী সাঈদ বলেন, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া সাতক্ষীরায় বহুমুখী উন্নয়ন দেখাতে তিনি ভোটপ্রার্থী হতে চান। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য জেলা স্বাচিপ সভাপতি ডা. মোকলেছুর রহমান, জেলা শ্রমিক লীগ নেতা ছাইফুল করিম সাবুসহ বেশ কয়েকজন নেতা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে মাঠে নেমেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ