Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভয়নগরে গুরুত্বপূর্ণ অর্ধশত সড়ক গিলে খাচ্ছে মৎস্য ঘের

বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা মহাবিপাকে সরকারের হাজার কোটি টাকা পানিতে

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ অর্ধশতাধিক সড়ক মৎস্য ঘেরে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোথাও কোথাও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। ১৬ ফুট প্রশস্থ সড়ক মৎস্য ঘেরে বিলীন হতে হতে কোথাও ২ ফিট টিকে আছে। আবার কোথাও সড়কের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোর সাথেই খনন করা হয়েছে শত শত বিঘার ঘের। যার পানির তোড়ে সড়ক ভেঙে বিলীন হচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা পানিতে গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা ঘের মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বড় বড় মাছ উপহার পেয়ে এবং বিশেষ কায়দায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা উল্টো তাদের নানারকম সুযোগসুবিধা দিয়ে রীতিমত পাহারাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে এসকল পথ দিয়ে চলাচলকারী মানুষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রভাবশালী এসকল ঘের মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। মৎস্য ঘেরের মাঝের রাস্তা বিলীন হয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ডুমুরতলা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেদভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এছাড়া রাস্তা না থাকায় বৃদ্ধরা বাড়ির বাইরে কোথাও যেতে পারেননা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ।
সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে এসকল গ্রামের প্রায় প্রতিটি সড়কের গাঁ ঘেষে খনন করা হয়েছে বড় বড় মৎস্য ঘের। আর এসকল ঘেরে বিলীন হচ্ছে অর্ধশতাধিক সড়ক। বিশেষ করে উপজেলার আন্ধা টু বেদভিটা ভায়া বলারাবাদ, ডুমুরতলা টু বেদভিটা ভায়া বলারাবাদ, কোটা পশ্চিমপাড়া হতে বেদভিটা স্লুইচ গেট, দিঘলিয়া টু ডহরমশিয়াহাটি এবং নওয়াপাড়া টু মশিয়াহাটি ভায়া কালিবাড়ি টু মণিরামপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির ডুমুরতলা হতে হাটগাছা সুজাতপুর পর্যন্ত সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ মৎস্য ঘেরে বিলীন হয়ে গেছে। একের পর এক স্থানীয় এলাকাবাসী ও পথচারীরা অভিযোগ করলেও তা কর্ণপাত করছেন না ঘের মালিকরা। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে এ ব্যাপারে ঘের মালিকদের সতর্কতামূলক চিঠি দিয়ে দায় সেরেছেন কর্মকর্তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য ঘেরের মালিকরা কোটি কোটি টাকা উপার্জন করলেও সড়কের পাশে কোন পাইলিং না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বারবার সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কগুলো সংস্কার করলেও সংস্কারের কিছুদিন না যেতেই ফের মৎস্য ঘের গিলে খাচ্ছে।
ডুমুরতলা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিরাট চন্দ্র রায় বলেন, তাদের স্কুলে বেদভিটা গ্রামের অনেক ছেলে মেয়ে আসে। কিন্তু আন্ধা টু বেদভিটা এবং ডুমুরতলা টু বেদভিটা সড়কের তিন-চতুর্থাংশ মৎস্য ঘেরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শিশুদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। অভয়নগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক হুসাঈন সাগর জানান, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে দেখছি মৎস্য ঘেরের কারণে অসংখ্য সড়ক চলাচলের অনুপযোগি হয়ে গেছে। ১৬/১৮ ফিট প্রশস্থ সড়ক ভেঙ্গে ২/৩ ফিট টিকে আছে। মোটরসাইকেল নিয়েও যাতায়াত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি প্রতিটি এলাকায় সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করে আসছি। কিন্তু মৎস্য আইনে এ ব্যাপারে কোন শাস্তির বিধান না থাকায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবে এলজিইডি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা যেকোন সাধারণ মানুষ এদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সড়ক সংশ্লিষ্ট ঘের মালিকদের তালিকা তৈরি করছেন। তালিকা সম্পন্ন হলে আমরা উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়কে নিয়ে ঘের মালিকদের সাথে বসবো। যেসব ঘের মালিকদের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরকেই সড়ক সংস্কারের জন্য বলা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ