Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবারো লোকসানে দিশেহারা আলু চাষিরা

মুন্সীগঞ্জে আলু চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কৃষক : জমি ও গোলায় আলুতে পচন

মঞ্জুর মোর্শেদ, মুন্সীগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

মুন্সীগঞ্জের প্রান্তিক আলু চাষিরা পরপর দু’বছর ন্যায্য মূল্য পায়নি। জমিতে এবং গোলায় রাখা আলুতে পচন ধরায় কৃষক এবারও আর্থিকভাবে লোকসান গুনছে। জমিতে আলু পচছে বিক্রিও করতে পারছে না। আবাদের শুরুতে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষক দুশ্চিন্তায় পরেছে। পরপর দু’বছর লোকসানে পরে কৃষক এখন দিশেহারা। দুশ্চিন্তা ভর করেছে আগামীতে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে। আবাদের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় জওয়াদের প্রভাবে জমিতে চাষ বিলম্বিত হওয়ায় ফলন কম এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ১শ’ হেক্টর কম। বিলম্বিত চাষে উৎপাদন কম হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিকটন। কৃষক প্রতি বছর লোকসানের মুখে পরে আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ক্ষুদ্র প্রান্তিক আলু চাষিরা আগামীতে আলুচাষের বিকল্প চাষাবাদের চিন্তা ভাবনা করছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিক ঝুকি নিয়ে আলু চাষ করে। প্রতিবছর চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও লাভের আশায় আলু চাষে তৎপর হয়ে ওঠে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আলু মৌসুমে জেলায় ৩৭ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরে ৯ হাজার ৬৮০ হেক্টর, টংগীবাড়ীতে ৯ হাজার ৫শ’ হেক্টর, শ্রীনগরে ২ হাজার হেক্টর, সিরাজদিখানে ৯ হাজার ১৫১ হেক্টর, লৌহজেং ৩ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং গজারিয়ায় ২ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ লক্ষ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। ঘূর্ণিঝড় জওয়াদের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে ফলন কম হওয়ায় উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৮০ মেট্রিকটন যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিকটন কম।
ধলাগাঁও বাজারের আলু ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ দেওয়ান বলেন, গত আলু মৌসুমে জমিতে আলু বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পাইনি। এবার ন্যায্য মূল্য পাবার আশায় অনেক কষ্ট এবং দার-দেনা করে বৃষ্টির পূর্বে দুই কানি জমিতে আলু লাগিয়ে ছিলাম। ঘূর্ণিঝড় আমার সব শেষ করে দিয়েছে। নতুন করে আলু আবাদে খরচ অনেক বেড়ে যায়। আলু বিক্রি করতে করতে না পারায় হিমাগারে রেখে দিয়েছি।
হোগলাকান্দি গ্রামের বাচ্চু মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, প্রায় ৫ একর জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। প্রায় দেড় লক্ষ্য টাকা লোকসানতো হয়েছেই সাথে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকেও হারিয়েছি। আলু বিক্রি করতে না পেরে জমিতে ¯ূ‘পাকারে নাড়া দিয়ে ঢেকে রাখি। সেই আলু দেখতে গিয়ে সর্প দংর্শনে মেয়ে মাহমুদা আক্তারের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, প্রতি মনে খরচ প্রায় সাড়ে ৫শ’ টাকা সেখানে বাজার দর মাত্র সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা। আগামীতে আলু চাষ ছেড়ে দিবো।
আলু ব্যবসায়ী জামাল শেখ জানান, আলু জমিতে কীটনাশকের সাথে দূত বর্ধনশীল ওষুধ ছিটানো হয়। এসব আলু পচে যাওয়ায় দেশিয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায় না হিমাগারে রাখতে হয়। আলু ব্যবসাযী পলাশ বেপারী জানান, উত্তরাঞ্চরের আলু আগে উঠে যাওয়ায় সেখানকার আলু দিয়ে হিমাগারের ৬০ শতাংশ পূর্ণ হয়ে যায়। এ কারণে এ অঞ্চলের কৃষকের সব আলু হিমাগারে রাখা যায় না। জেলার ৬৮টি হিমাগারে প্রায় ৫ রাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। চলতি মৌসুমে হিমাগারের ভাড়াও বৃদ্ধি করা হয়েছে। মোল্লাকান্দি গ্রামের দেরোয়ার হোসেন হোসেন বলেন, আলু বিক্রি করতে না পারায় জমিতে রাখি। সে আলু পচে যাওয়ায় এ বছর প্রায় এক লক্ষ টাকা লোকসান হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম জানান, এখানকার কৃষক প্রধানত ডায়মন্ড জাতের আলু চাষ করে। এ জাতের আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষন করা যায় না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কার্ডিনাল আলু লাগানোর জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়। এ জাতের আলু দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চিপিস তৈরি করা যায়, সংরক্ষণও করা যায় দীর্ঘদিন। আলু জরুরি ভিত্তিতে রফতানি করা এবং এর বহুবিধ ব্যবহার প্রয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ