Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ফটিকছড়িতে উপজেলা আনসার-ভিডিপি ও নির্বাচন অফিসারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা!

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২২, ৯:৫৭ পিএম

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে কাজের বুয়াকে ধর্ষণের দায়ে দুই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে এক কাজের বুয়া। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম এবং সাবেক উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবিরসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে মামলাটি দায়ের করে এ কাজের বুয়া। প্রায় ৪৫ দিন পূর্বে ধর্ষণ ঘটনাটি ঘটলেও এ ব্যাপারে ফটিকছড়ি থানায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ঘটনাটি প্রকাশ্যে চলে আসে এবং ফটিকছড়ি থানা পুলিশ অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে।

ভিক্টিম জরিনা সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম এবং সদ্য সাবেক উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির উপজেলা কমপ্লেক্সের অদূরে একটি যৌথ বাসায় ব্যাচেলর হিসেবে থাকতো। সেখানে রান্না-বান্নাসহ বুয়ার কাজ করতো স্বামী পরিত্যক্তা জরিনা এবং শিখা শীল। গত রমজান শুরুর এক সপ্তাহ পূর্বে; অর্থাৎ ২৭ মার্চ বেলা ৩টা নাগাদ অপর কাজের বুয়া শিখা শীল মোবাইলে জরিনাকে ডেকে পাঠায় উপজেলা আনসার-ভিডিপি এবং নির্বািচন কর্মকর্তার বাসায়। কিছুক্ষণ পর সেখানে পৌঁছে জরিনা দেখতে পায় আনসার সদস্য মুহাম্মদ এয়াকুব আলী ও বুয়া শিখা শীল ড্রয়িং রুমে বসা এবং উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা সাইদুল ও নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন নিজ নিজ কক্ষে শুয়ে আছে। নির্বাচন অফিসের জনৈক দালাল নাঈম, জাবেদ ও সায়েম কর্তৃক আনা দই-তরমুজসহ অন্যান্য রসালো খাদ্য জরিনাকে খেতে দেয়া হয়। বেলা ৪টা নাগাদ হঠাৎ উপজেলা আনসার-ভিডিপি অফিসার মোঃ সাইদুল ইসলাম তাকে জোর করে ধরে নিয়ে তার রুমে ঢুকায় এবং উপর্যুপরি তিন বার ধর্ষণ করে। পরে জরিনাকে কোলে নিয়ে তিনি তার পাশের রুমে থাকা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের রুমে পৌঁছে দেন। নির্বাচন অফিসার মুহুর্তেই ২টি ট্যাবলেট খেয়ে নিয়ে কাজের বুয়া জরিনার উপর হামলে পড়ে এবং ৫ দফা তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় আনসার সদস্য এয়াকুব কক্ষের বাইরে পাহারারত ছিল। ধর্ষণ শেষে রক্তাক্ত জরিনাকে ভয় দেখানো হয় কাউকে না জানাতে এবং লোভ দেখানো হয় টাকা-পয়সা দেয়ার। পরে আনসার সদস্যদের সহায়তায় তাকে স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে নিয়ে চিকিৎসা করে তার বাসায় পৌঁছিয়ে দেয়।

কাজের বুয়া জরিনা আরো বলেন, তাদের এ লোমহর্ষক ঘটনার পর থেকে তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। আনসার সদস্যদের মাধ্যমে তাকে পাহারা দেয়া হয়- যাতে সে কোথাও যেতে না পারে। তবে আনসার সদস্য মোহাম্মদ সেলিমের মাধ্যমে তার চিকিৎসা বাবদ ৩ দফে ২২ হাজার টাকা পাঠায় দুই কর্মকর্তা। পরে কাজের বুয়া বাসা থেকে বেরুতে চাইলে দুই কর্মকর্তা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে তাদের সাথে কৌশলে সমঝোতা করে বাসা থেকে বের হয়ে নাজিরহাটস্থ একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ অন্যান্য চিকিৎসা করায় জরিনা এবং অসুস্থ শরীর নিয়ে গত ১১ মে দুপুরে উপজেলা পরিষদে পৌঁছে চেয়ারম্যান হোসাইন মোঃ আবু তৈয়ব ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নাহারকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা জরিনাকে নিয়ে ইউএনও মোঃ সাব্বির রাহমান সানি’র কাছে নিয়ে যান। তারা বক্তব্য শুনার পর জরিনাকে আইনের আশ্রয় নিতে বললে ধর্ষিতা জরিনা বুধবার বিকেলেই ফটিকছড়ি থানার ওসির কাছে গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করে। বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলে জানানো হলে সন্ধ্যায় ফটিকছড়িতে ছুটে যান চট্টগ্রামের এডিশনাল এসপি (উত্তর) কবির আহমদ, হাটহাজারী সার্কেলের এডিশনাল এসপি শাহাদাৎ হোসেন। অর্ধরাত গ্রীন সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকে ওসি। শেষতক লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে ওসি এবং প্রাথমিক তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গন্য করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ফটিকছড়ি থানার ওসি মোঃ মাসুদ ইবনে আনোয়ার।

এ ঘটনা সম্পর্কে অভিযুক্ত উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। অন্যদিকে সাবেক উপজেলা নির্বাচন অফিসার এবং বর্তমানে রামগড় উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির মুঠোফোনে বিষয়টি সম্পর্কে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ