Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রয়ত্ব নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতায় রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ যাত্রী পরিবহন বিপর্যয়ের মুখে

শত শত কোটি টাকার নৌযান ইজারাদারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২২, ৩:২৩ পিএম

রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন উদাশীনতা অবহেলা ও অজ্ঞতায় রাজধানী সহ চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে নিরাপদ যাত্রী পরিবহন ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাধারন যাত্রীগন জিম্মী বেসরকারী নৌযান ব্যাবসায়ীদের কাছে। অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি’র হাতে নতুন পুরনো ৭টি যাত্রীবাহী নৌযান থাকার পরেও ঢাকার সাথে চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে দক্ষিনাঞ্চলের দৈনিক রকেট স্টিমার এখন চলছে সপ্তাহে মাত্র দুদিন। আর ব্যায়বহুল দুটি নৌযান পরিচালনে প্রতি ট্র্রিপে লোকশান হচ্ছে প্রায় ৩লাখ টাকা।

অথচ সংস্থার হাতে ৪টি ব্যায় সাশ্রয়ী ও যাত্রী বান্ধব প্যাডেল জাহাজ থাকলেও ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে ইজারা দেয়ার পরে অবশিষ্ট ৩টি দীর্ঘদিন বসিয়ে রেখে এখন ইজারা প্রদানে দরপ্রস্তাব আহবান করেছে সংস্থাটি। রেলওয়ে থেকে নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করা স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি সোনার গাঁ’র পেছনে অরো ১০ কোটি টাকা ব্যায়ের পরে একইভাবে বিনা দরপত্রে আরেকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারাদার নৌযানটি আবার সরকারী অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে মধ্যসত্ত ভোগীর ভ’মিকায় রয়েছেন।

কিন্তু নিরাপদ যাত্রী সেবা প্রদানের লক্ষে গঠিত রাষ্ট্রয়ত্ব বিআইডব্লিউটসি এখন তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সড়ে গিয়ে কতিপয় ইজারাদারের সেবায় ব্যাস্ত বলেও অভিযোগ যাত্রী সাধারনের। ফলে বেসরকারী খাতের খামখেয়ালী ও নৈরাজ্যের কাছেই ক্রমাগত জিম্মী হয়ে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীগন। এমনকি অতি সম্প্রতির ঈদুল ফিতরের আগে ও পড়ে সংস্থাটি রাজধানীর সাথে দক্ষিনাঞ্চলের নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে কোন বিশেষ সার্ভিস দুরের কথা নিয়মিত সার্ভিসও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় আগ্রহ দেখায়নি। শুধুমাত্র ঈদের আগে ও পড়ের তিনদিন করে ব্যায়বহুল ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’র সাহায্যে যাত্রী পরিবহন করেই সব দায়িত্ব শেষ করেছে সংস্থাটি।

ফলে ঈদে ঘরে ফেরা ও পরবর্তী সময়ে কর্মস্থলমুখি যাত্রীরা অঘোষিতভাবেই বেসরকারী নৌযান মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। প্রতিটি বেসরকারী নৌযান ধারন ক্ষমতার তিনগুনেরও বেশী যাত্রী পরিবহন করলেও ভাড়াও আদায় করেছে বেশী। অথচ বিঅইডবিøউটিসি’র জাহাজে যাত্রী ছিলনা সঠিক পরিচালন সময়সূচী প্রনয়নে ব্যার্থতার কারণে।
রাষ্ট্রয়ত্ব সংস্থাটির বিদ্যমান ৪টি প্যাডেল জাহাজ তৈরী হয় ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে। বাস্পীয় প্যাডেল হুইল এসব নৌযানে ১৯৮০ থেকে ৮২’ সালে হাইড্রালিক গীয়ার সহ মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন সংযোজন করে পরিপূর্ণ পুণর্বাসন করা হয়। কিন্তু গীয়ারে ত্রæটির কারণে মাত্র ৩ হাজার ঘন্টা চলার পরেই নৌযানগুলো বিকল হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে ১৯৯৫Ñ৯৬ সালে মেকানিক্যাল গীয়ার সংযোজন সহ আরেক দফা পূণর্বাশন করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চালু করা হয়। ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ পুণর্বাসন করা হয় ২০০২ সালে। দীর্ঘদিন ‘পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ’ জাহাজগুলো অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে যাত্রী পরিবহন করছিল।
কিন্তু বছর চারেক আগে আকষ্মিকভাবেই কোন ধরনের দরপত্র আহবান ছাড়াই মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে পিএস অষ্ট্রিচ জাহাজাটি দীর্ঘ মেয়দী ইজারা প্রদান কর হয়। অপরদিকে পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ জাহাজ দুটিও নানা অজুহাতে বসিয়ে রেখে ইজারার লক্ষ্যে প্রথম দফার দরপত্র আহবানের পরে দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতি চলছে। পিএস মাহসুদ জাহাজটিও ৩ বছর বসিয়ে রেখে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে মেরামত শেষে গত মার্চে যাত্রী পরিবহনে ফিরলেও মাস খানেকর মাথায়ই তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০১৪ সালে ‘এমভি বাঙালী’ ও ২০১৫ সালে ‘এমভি মধুমতি’ নামের দুটি স্ক্র-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করে সংস্থাটি। কিন্তু এসব নৌযান যেমনি যাত্রী বান্ধব নয়, তেমনি এর পরিচালন ব্যায় প্যাডলে জাহাজগুলোর প্রায় আড়াইগুন বেশী। কিন্তু যাত্রী ধারন ক্ষমতা কম। ফলে ব্যায়বহুল এদুটি নৌযানের পেছনেই ২০১৪ সাল থেকে সংস্থাটিকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশী পরিচালন লোকশান গুনতে হয়েছে। নিট লোকশানের পরিমান আরো বেশী।
কিন্তু এরপরেও সংস্থাটির একটি মহল ব্যায়বহুল এসব নৌযান পরিচালনে রহস্যজনকভাবে আগ্রহী বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে গত এক দশকে সংস্থাটির যাত্রীসেবা ইউনিটে লোকশান হয়েছে প্রায় দুশ কোটি টাকা। তবে এ লোকশানের মধ্যে এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’র লোকশানই সিংহভাগ বলে জানা গেছে। উপরন্তু ১৯৯৬ সালের পড়ে প্যাডেল জাহাজগুলোর মূল ইঞ্জিন ও প্যাডেলর মেজর ওভারহলিং সহ তলা থেকে উপরীকাঠামোর পরিপূর্ণ কোন মেরামত না হওয়ায় যোড়াতালী দিতে গিয়ে বিপুল অর্থ ব্যায় হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অথচ ৪টি প্যাডেল জাহাজের মূল ইঞ্জিন সহ এর অবকাঠামোর পরিপূর্ণ পূণর্বাশনের মাধ্যমে তা আরো অন্তত ২৫ বছর নির্বিঘেœ ও নিরপদে পরিচালন সম্ভব বলে মনে করছেন একাধিক কারিগরি বিশেষজ্ঞ। তবে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ৪০ বছরের অধিক বয়সী কোন নৌযানের সার্ভে সনদ দিতে রাজী নয় বলেই এসব প্যাডেল জাহাজ যাত্রী পরিবহনে দেয়া হচ্ছে না বলে দাবী সংস্থাটির কারিগরি ও বানিজ্য পরিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহলের। কিন্তু পিএস অস্ট্রিচ বেসরকারী ইজারায় দেয়ার পরে তা কিভাবে চলাচলের অনুমতি লাভ করেছে সে প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে। কিন্তু এসব নৌযানের পরিপূর্ণ পুণর্বাসনের পরেও কেন তা যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়া হবে না সে বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে যাত্রী সাধারনের মধ্যে।
তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংস্থাটি এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী জাহাজ দুটিও বেসরকারী খাতে ইজারা প্রদানের লক্ষে এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। এলক্ষ্যে আহবানকৃত দরপ্রস্তাবে মাসে সর্বোচ্চ ৫Ñ৬লাখ টাকার প্রস্তাব পাওয়া গেছে। ফলে অদুর ভবিষ্যতেই হয়ত রাষ্ট্রয়ত্ব এ সংস্থাটির যাত্রীসেবা (?) পরিপূর্ণভাবেই ইজারাদারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পাড়বে বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
এসব বিষয় নিয়ে বুধবার বিআইডবিøউটসি’র চেয়ারম্যান, পরিচালক-কারিগড়ি ও পরিচালক-বানিজ্য’র সাথে সেলফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ