Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখলে অস্তিত্ব সঙ্কটে কুমার নদ

অবৈধ স্থাপনার মাধ্যমে একটি গ্রুপ হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

আড়িয়াল খাঁ নদীর শাখা কুমার নদের মুখে চর পড়ে শুকিয়ে শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে কুমার নদের জেগে ওঠা চরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একের পর এক নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করছে স্থানীয়রা। সেই সাথে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কুমার নদের তীরে পাঁচ শতাধিক দখলদার কুমার নদের ভরাটকৃত অংশে প্রায় ৫ একর জমি দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছে। ক্রমাগত দখলদারের সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না। মাদারীপুর শহর ঘেঁষা পুরানবাজারের রাস্তি এলাকায় চর দখল করে বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের সাথে জড়িত ১৬ জন প্রভাবশালী বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কতিপয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জোট গঠন করে গত শুকনো মৌসুমে বালি দ্বারা ভরাট অংশ উঁচু করে ভরাট করে তা দলিলবিহীন দখল দেখিয়ে বিক্রি করে স্থানীয়দের কাছে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা। স্থানীয়রা নদের যায়গায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস ও ব্যবসায় বাণিজ্য করছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমার নদের জমি দখল করে বাদল মোল্লা নামের এক দখলদার পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। বাদল মোল্লার দাবি সে এই জমি কিনে স্থাপনা নির্মাণ করছে। তবে সে জমি কেনার কোন দলিল বা কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। দু’জন প্রভাবশালীর কাছ থেকে সে দখল নিয়েছে বলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানায়। যেহেতু যারা বিক্রি করেছে তাদের কোন কাগজ বা দলিল নেই তাই তারা মৌখিকভাবে পজিশন জমি বিক্রি করেছে বলে জানায় বাদল মোল্লা। সরকারি জমিতে পাকা স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কারো অনুমতি নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেয়নি নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে দখলদার বাদল মোল্লা বলেন, আমাদের কেনা সম্পত্তি এখানে আছে। তারপরেও যদি সরকারি জমিতে ঘর করে থাকি, তাহলে সরকার চাইলে ভেঙে দিবো।
অনুসন্ধানের আরো জানা যায়, বাদল মোল্লা ছাড়াও বাদশা বেপারী, রুপাই, সুফিয়া বেগম, বাচ্চু বেপারী, আনোয়ারসহ অনেকে জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য করছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ১৬ জনের একটি গ্রুপের নেতৃত্বে নদী সিকস্তী জমি ভরাট করে বিভিন্ন লোকের কাছে দলিলবিহীন দখল দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ১৬ জনের ওই গ্রুপটি।
মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কুমার নদের তীরে পাঁচ শতাধিক দখলদার কুমার নদের ভরাটকৃত অংশে প্রায় ৫ একর জমি দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাস করছে। ক্রমাগত দখলদারের সংখ্যা বাড়লেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নজর দিচ্ছে না।
এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিকের হুকুম দখলকৃত ১৫ একর জমির মধ্যে অনুমোদিত ৮৪টি শিল্প-কারখানার মধ্যে ৭টি স’মিল যা ফার্নিচারের দোকান হিসেবে বরাদ্দ ও অনুমোদিত এর বাইরে নদের তীরে প্রায় ৫ একর জমিতে অবৈধভাবে ৭/৮টি স’মিল ও ট্রলি বসিয়ে ব্যবসা করে আসছে অবৈধ দখলদাররা। এছাড়াও বাড়িঘর দোকান-পাট ও আড়তঘর নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি জমিতে যার কোনো বৈধতা নেই।
মাদারীপুর বিসিক শিল্পনগরীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মাদারীপুর বিসিক সংলগ্ন কুমার নদের পাড়ের প্রায় ৫ একর জমি বিসিকের নামে বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব তোলায় তা নিয়ে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহলের তোপের মুখে পড়ে সে প্রস্তাব থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে। এখানের অবৈধ দখলদাররা রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আছে। যে কারণে প্রশাসনও বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে।
বিসিকের বৈধ শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ ও নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, বিসিক সংলগ্ন কুমার নদের রাস্তি ও মাদারীপুর মৌজার প্রায় ৫ একর নদী সিকস্তি জমির মালিক বাংলাদেশ সরকার তথা জেলা প্রশাসক। এসব জমিতে অবৈধভাবে বাড়িঘর, দোকানপাট, করাতকল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে বসবাস ও ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছে বেশকিছু অবৈধ দখলদার।
সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের বিষয়টি স্বীকার করে পৌর ভূমি কর্মকর্তা আলী আকবর চৌধুরী জানান, নদী তীরবর্তী খাস জমিতে অবৈধ দখলদার রয়েছে। প্রশাসন উচ্ছেদের ব্যাপারে যেভাবে নির্দেশনা দিবে সেভাবেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকাশ কুমার কুন্ড বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে নদী সিকস্তী ও খাস জমি কেউ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তা উচ্ছেদ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, শুধু বিসিক এর পাশে নয়, কুমার নদের দু’পাড়েই কিছু দখলদার বিভিন্ন সময় ধরেই এ স্থাপনাগুলো নির্মাণ করে আসছে। দখলকৃত জমিতে বেশ কিছু স’মিল, বাড়িঘর, আড়তঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। নদীর পাড় দখল করায় নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে জন্য যা করার সবই করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ