Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ঘূর্ণিঝড় ‘অশণি’ নিয়ে শংকিত দক্ষিণ উপকুলবাসী

আড়াই লক্ষাধিক হেক্টরের বোরো ধান মাঠে থাকার মধ্যেই প্রবল বর্ষণের সতর্ক বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২২, ৫:২৮ পিএম | আপডেট : ৬:০৮ পিএম, ৯ মে, ২০২২

ঘূর্ণিঝড় ‘ ইয়াশ’এ ফসল ও উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ব্যাপক ক্ষতির এক বছরের মাথায়ই মাঠে থাকা বোরো ধান সহ রবি ফসলের জন্য আরেক প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ে ‘অশণি’ দক্ষিনাঞ্চলবাসীর দড়জায় কড়া নাড়ছে। ৭০ভাগ আধাপাকা ও পাকা বোরোধান এখনো মাঠে। ফলে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলার সাড়ে ১০ লাখ কৃষক সহ গৃহস্থ্য পরিবারগুলোর এখন দুঃশ্চিন্তার শেষ নেই।

বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকেও ২ নম্বর দুরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সোমবার শেষরাত থেকেই সমগ্র দক্ষিণ উপক’লীয় এলাকার আকাশে অশণি’তে ভর করে মেঘের ঘনঘটার সাথে হালকা ও মাঝারী বৃষ্টিপাত কৃষকের দুঃশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘অশণি’ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি চুড়ান্ত করা হয়েছে ইতোমধ্যে। রেড ক্রিসেন্টের ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র ৭০১টি ইউনিটের প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছা সেবককে উপক’লের ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলায় সার্বক্ষনিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেকোন পরিস্থিতিতে ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে স্বল্পতম সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতেও প্রস্তুত রয়েছেন তারা। ৪ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষিত না হলে উপকুলে কোন ধরনের বিপদ সংকেতের পতাকা উত্তোলন বা মাইক-মেগাফোন থেকে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছেনা। তবে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি রয়েছে বলে সিপিপি সূত্র জানিয়েছে।
গত বছর ২০ মের পরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ‘ইয়াশ’ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ক্রমান্বয়ে গভীর নি¤œচাপে পরিনত হয়ে ভারেতর উড়িশ্যা উপকূলে ২৭ মে আঘাত হানে। কিন্তু তার প্রভাবে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে প্রায় ১শ কোটি টাকার ফসলহানি সহ কয়েকশ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ ছাড়াও বিশাল উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও নদী তীর রক্ষা বাঁধের ক্ষতির পরিমানও ছিল প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। ইয়াশ-এর ছোবলে উপক’লীয় অবকাঠামোর সে ক্ষতির মেরামত ও পূণর্বাসন এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এমনকি গত বছর ইয়াশ-এ ভড় করে প্রবল বর্ষনে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার নুতন আশায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে আবাদ করেছেন কৃষকগন। কিন্তু সে ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার বার্তা দিচ্ছে এ বছরের একই সময়ের আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘অশণি’।
সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে বরিশাল ও ফরিদপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও এপর্যন্ত মাত্র ৩০% জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ফলে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধান থেকে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫২০ টন চাল পাবার লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে উৎপাদন ১৬ লাখ টনে উন্নীত হবার সম্ভবনা থাকলেও, ‘অশণি’ পরিস্থিতিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যায়, তা নিয়ে শংকিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগনও।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বরিশাল সহ উপক’লীয় এলাকায় মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভবনার কথা বলা হয়েছে। এমনকি পরবর্তি ৩ দিনেও বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, নি¤œচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে
অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’অশণি’তে পরিণত হয়েছে। যা শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন
এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গত বছরের ‘ ইয়াশ’এর মত আরো উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের অন্ধ্র ও উড়িশ্যা উপক’লে আঘাত হানার সম্ভবনা বেশী হলেও একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ফলে অশণি’র প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চল সহ দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় আগামী ৩-৪দিন প্রবল বৃষ্টিপাতের আশংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। সোমবার শেষ রাত থেকেই দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি হচ্ছে।
তবে ‘অশণি’ কোন কারণে তার গতি পরিবর্তন করে সোজা উত্তরে অগ্রসর হলে তা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মর্ধবর্তি সুন্দরবন উপক’লেও আঘাত হানার ক্ষিন সম্ভবনা রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি হতে পারে আরো ভয়াবহ। কিন্তু অশণি বাংলাদেশ উপক’লে সরাসরি আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে আগামী ৩-৪ দিন দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় মাঝারী থেকে ভাড়ী বর্ষণের বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন আবহাওয়াবীদগন। কিন্তু ভারতীয়আবহাওয়অ বিভাগ এ ঘূর্ণিঝড়টি উড়িশ্যা উপক’লে পৌছার আগে শক্তি ধরে রাখতে না পাড়ে বলেও মনে করছেন। তবে এসব কিছু বুুঝতে আরো ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে।
ফলে দক্ষিনাঞ্চলের মাঠে থাকা আড়াই লক্ষাধিক হেক্টরের বোরো ধানের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। তবে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র তরফ থেকে যত দ্রুত সম্ভব মাঠে থাকা পাকা ধান কেটে ফেলতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখতে ব্লক সুপারভাইজার সহ মাঠ কর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছে। তবে এত বিপুল পরিমান ধান দ্রুত কর্তনের মত কৃষি শ্রমিক নেই এ অঞ্চলে।



 

Show all comments
  • রিজাউল ইসলাম ৯ মে, ২০২২, ৫:৫১ পিএম says : 0
    খবর চাই
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ