দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মিযানুর রহমান জামীল
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হযরত হাছান বসরী (রহ.) বলেন, মানুষের মধ্যে একটি শ্রেণী (সাহাবায়ে কেরাম)-কে পেয়েছি যারা ঘরের লোকদের গুরুত্ব সহকারে বলে দিতেন যে, কোনো ভিক্ষুককে যেন ফেরত না দেয়া হয়। (কিতাবুল বির পৃ : ২১৬) অথচ আজ আমাদের সমাজ এমন এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে যে, কে ভিক্ষুক, কে ধোকাবাজ, তা চেনাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় রাস্তায়, নামাজ শেষ হলে মসজিদের দরজায় সর্বত্রই ভিক্ষুকের আনাগোনা। অবশ্য দুএকজন অঙ্গ বিকলাঙ্গ ছাড়া বাকি সবাই প্রত্যক্ষভাবে সুস্থ। তাদের ভেতরের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন। এরপরও কেউ তাদের খাঁটি মনে নেক নিয়তে সামান্য থেকে সামান্য দান করলেও এর প্রতিদান পাহাড় পরিমাণ হবে। একটু সচেতনতা ও সজাগ দৃষ্টির সাথে যাচাই-বাছাই করে দান করলেই হয়। শুধু শুধু একজনের হাত পাতার কারণে ভিক্ষুকের জাত ধরে অকথ্যভাষায় গালি-গালাজ করা অনুচিত। ঠিক তো নেই আগামীকাল আমিও ফকির হয়ে যেতে পারি। কবি তো সঠিক বলেছেনÑ ‘সকাল বেলার আমির রে তুই ফকির সন্ধ্যা বেলা।’ আজ আমি যে অর্থ-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, গাড়ি-বাড়ি আর নারী নিয়ে আমোদে লিপ্ত বলা তো যায় না একদিন যে আমাকেও তার মতো পথের ভিখারী হতে হবে। হযরত আমর ইবনে মাইমুন (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেনÑ পাঁচ জিনিসের আগে পাঁচ জিনিসকে মূল্যায়ন কর। ১. বার্ধক্যের আগে যৌবনের। ২. অসুস্থতার আগে সুস্থতার। ৩. দারিদ্র্যতার আগে সচ্ছলতার। ৪. ব্যস্ততার আগে অবসরের। ৫. মৃত্যুর আগে জীবনের। সুতরাং যৌবন, সুস্থতা, সচ্ছলতা, অবসরতা ও জীবন, এ পাঁচটির মূল্যায়ন করা চাই। দানের মাধ্যমে সচ্ছলতারও মূল্যায়ন সম্ভব। আর কেয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে এক পা এগিয়ে যেতে দেয়া হবে না। ১. জীবন কীভাবে ব্যয় হলো? ২. যৌবন কোন কাজে ব্যয় হলো? ৩. কীভাবে রোজগার করেছে? ৪. কোথায় কোন কাজে ব্যয় করেছে? ৫. ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? সুতরাং হালাল উপায়ে রোজগার তথা আয়ের মাধ্যমে আমাদের ব্যয়ের খাতও যদি দানের মধ্যে থাকে তবে পরকালে এর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে উত্তম বিনিময়। ‘নাহি পাই কাজ তাই ত্যাজি লাজ বেড়াই ভিক্ষা করি, হে দয়াল নবী দাও কিছু মোরে নইলে পরাণে মরি। আরবের নবী করুণার ছবি ভিখারীর পানে চাহি, কমল কণ্ঠে কহিলো তোমার ঘরে কি কিছুই নাহি?... নবীর শিক্ষা করনো না ভিক্ষা মেহনত করো সবে।’ রাসূলের জামানায় এক ফকির তাঁর কাছে ভিক্ষার জন্য এলে তিনি তাকে কুঠার কিনে বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আর কবি এটাকে চিত্রায়িত করেছেন চৌদ্দ’শ বছর পূর্বের ঘটনাটি কেন্দ্র করে। কারণ যারা কাজ করতে সক্ষম রাসূল (সা.) তাদের কাজের ব্যবস্থা করে দিতেন। সমাজের প্রতিটি অধ্যায়ে অনাথ-অভাবিদের প্রতি বিশেষ গুরুত্বদান অত্যাবশ্যক। এটাই রাসূলের শিক্ষা। কাজেই প্রকৃত অসহায়-অভাবিদের প্রতি কোরআন-হাদিসে দানের নির্দেশনা অনুযায়ী দানের হাত সম্প্রসারণ করার মধ্যে রয়েছে সফলতা। দুনিয়ার এ অর্থ-সম্পদ ব্যয় হোক সঠিক পথে সঠিক উপায়ে। সবার মাঝে তৈরি হোক অন্যের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টিভঙ্গি। একে একে অপরের জন্য এগিয়ে আসার মাধ্যমে বিশ্বপাড়া হয়ে উঠুক আরো সমৃদ্ধ। এটাই প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।