Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের ছুটি পরবর্তী কর্মস্থলমুখী জনস্রোতে ঠাসা দক্ষিণাঞ্চলের নৌ টার্মিনাল

রেকর্ড সংখ্যক যানবাহন পারাপারের পড়েও ফেরি ঘাটে অপেক্ষমান ১২শ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২২, ৬:৪৭ পিএম

করোনা মহামারী সংকটের দুবছর পরে নিকটজনের সাথে ঈদ করতে এবার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ অনেকটা স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারলেও এখন কর্মস্থলমুখী জনস্রোতের চাপে বরিশাল নৌ বন্দর সহ ফেরি ঘাটগুলো বিপর্যস্তর অবস্থায়। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে রাজধানী সহ পদ্মার পূর্ব তীরের জেলা সমূহের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী ফেরি সেক্টরগুলোতে ২৪প ঘন্টায় রেকর্ড সংখ্যক ২১ হাজার ২৭৬টি যানবাহন পারাপারের পরেও শনিবার সকালে সাড়ে ১২শরও বেশী অপেক্ষমাণ ছিল।

ঈদের ছুটি শেষে শুক্রবার থেকেই ঢাকা এবং চাঁদপুর হয়ে কুমিল্লা,সিলেট ও চট্টগ্রামমুখী যাত্রীদের ভিড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরে তিল ধরার ঠাই নেই। শুক্র ও শনিবার প্রায় ২০টি করে নৌযানে প্রায় দু লাখ মানুষ বরিশাল বন্দর ত্যাগ করে। পটুয়াখালী ও ভোলা নদী বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলের আরো ৩০টি স্টেশন থেকেও আরো অর্ধ শতাধিক নৌযান ঢাকা ও চাঁদপুরের লক্ষাধিক যাত্রী পরিবহনের পরে শনিবারেও একই অবস্থা অব্যাহত ছিল।

শনিবারেও বরিশাল বন্দর থেকে দুটি ক্যাটামেরান সহ প্রায় ২০টি নৌযানে আরো প্রায় ১ লাখ যাত্রী ঢাকা এবং চাঁদপুর হয়ে সন্নিহিত বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেছে। জনস্রোতের চাপে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশী যাত্রী নিয়ে নৌযানগুলো বন্দর ত্যাগ করলেও বিআইডব্লিউটি এবং প্রশাসনের কিছু করার ছিলনা। এমনকি গত দুদিন বিশাল বন্দরের নৌ টার্মিনালে তিল ধরার ঠাই ছিলনা। একটি কেবিন টিকেটের জন্য গত পনের দিন ধরে মানুষ লঞ্চের এক অফিস থেকে আরেক অফিসে ধর্না দিলেও স্বাভাবিক সময়ের বেশী দামেও তা মিলছে না।

তবে কর্মস্থলমুখী এ জনস্রোত সামাল দিতেও রাষ্ট্রীয় নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র তেমন কোন তৎপরতা নেই। শুধুমাত্র ঈদের পরের ৩দিন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে বরিশাল-চাঁদপুর হয়ে ঢাকামুখী ৩দিন ১টি করে স্টিমার সার্ভিস পরিচালনের পরে সব দায়িত্ব শেষ করেছে সংস্থাটি।

এদিকে ঈদের আগের দুদিনের মত পড়ের দুদিনও এবার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে গাড়ীর জন্য ঘাটে ঘাটে ফেরি অপেক্ষা করলেও শুক্রবার দুপুরের আগে থেকেই পদ্মার পশ্চিম তীরে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। ফলে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে এযাবতকালের সর্বাধিক ২১ হাজার ২৭৬টি যানবাহন পারাপারের পরেও অপেক্ষমাণ ছিল ১ হাজার ২৬৭টি। এরমধ্যে পাটুরিয়া সেক্টরে ২৪টি ফেরির সাহায্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক, ১৩ হাজার ৭৮৩টি যানবাহন পারাপারের পরে অপেক্ষমাণ ছিল মাত্র ৩শটি গাড়ী। রাজধানীর সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া সেক্টরেও ১০টি ফেরির সাহায্যে ২৪ ঘন্টায় ৫ সহস্রাধিক যানবাহন পারাপারের পরে অপেক্ষমান ছিল ৬শ।

অপরদিকে চট্টগ্রাম,কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সংক্ষিপ্ত সড়কপথের চাঁদপুর-শরিয়তপুর সেক্টরে ১টি কে-টাইপ ফেরি বিকল থাকার পরেও ৬টি ফেরির সাহায্যে ২৪ ঘন্টায় প্রায় সাড়ে ১৩শ যানবাহন পারাপার হয়েছে। অপেক্ষমান ছিল ২শ। উপক’লীয় ৩টি বিভাগ, চট্টগ্রাম-বরিশাল-খুলনা মহাসড়কের ভোলা ও ল²ীপুরের মধ্যবর্তী ফেরি সেক্টরেও ৪টি মধ্যে ১টি ফেরি বিকল। ফলে ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ উপমহাদেশের সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের এ সেক্টরে ২৪ ঘন্টায় ৫১৭টি যানবাহন পারাপারের পরেও ৭৭টি অপেক্ষমাণ ছিল। একই মহাসড়কের ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তী লাহারহাট-ভেদুরিয়া সেক্টরেও এসময়ে সোয়া ৫শ যানবাহন পারাপার হলেও অপেক্ষমাণ ছিল ৯০টি।

বিআইডব্লিউটিসি ২৬ এপ্রিল থেকে গত ১২ দিনে বহরের ৫৪টি মধ্যে ৪৯টি ফেরির সাহায্যে দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে প্রায় পৌনে ২ লাখ যানবাহন পারাপার করেছে বলে জানা গেছে। এসময়ে ঊর্ধ্বে ২ হাজার থেকে সোমবার সকালে সর্বনিম্ন ৫৬২টি যানবাহন অপেক্ষমান থাকলেও শুক্রবার দুপরের পর থেকে ঘাটগুলোতে যানবাহনই চাপ বাড়ছে।

পদ্মা সেতু চালুর পূর্বের সম্ভবত শেষ ঈদের ভিড় সামাল দিতে বিআইডব্লিউটিসি’র কারিগরি, বাণিজ্য ও মেরিন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীগন এবার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সর্বকালের রেকর্ড সংখ্যক যানবাহন পারাপারে পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় নৌযান মজুত থাকার পরেও যাত্রী পরিবহনে সংস্থার বাণিজ্য পরিদপ্তরের সীমাহীন উদাসীনতাকে ‘রহস্যজনক’ মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল। বিষয়টি নিয়ে সংস্থার পরিচালক-বাণিজ্য-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি প্যাডেল জাহাজগুলো পুরনো এবং স্ক্রু-হুইল নতুন নৌযানে বিপুল পরিচালন ব্যায়ের কথা তুলে ধরে লোকসানের বিষয়টি জানান।

তবে সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি ফ্লাইটই স্বাভাবিক সময়ের তিনগুণ ভাড়াও ঈদের আগে এবং পড়ে ফুল লোড নিয়ে ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে যাত্রী পরিবহন করছে। এমনকি বিমান ও নভো এয়ারের বিশেষ ফ্লাইটে দ্বিগুণেরও বেশী ভাড়ায়ও টিকেট মিলছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ