পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কে বলে রাজধানী ঢাকা শুধু ইট-পাথর আর কংক্রিটের নগর! উন্নয়ন আর আধুনিকতার যাঁতাকলে প্রকৃতি বিধ্বস্ত!! দেখার চোখ থাকলে হাজার হাজার সুউচ্চ দালান-কোঠার মধ্যেই প্রকৃতিকে খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলা সিনেমার একটি গান ‘আমাকে দেখার সেই চোখ তোমার কইগো’। প্রকৃতিকে বুঝতে সত্যিই চোখ লাগে; সে চোখ কবিদের থাকলেও হয়তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নেই। গ্রীষ্মের এই দাবদাহে ধূসর মহানগরী ঢাকার ভাঁজে ভাঁজে ডানা মেলেছে আগুনঝরা পুষ্পবৃক্ষ কৃষ্ণচূড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, পুরান ঢাকার বদলা গার্ডেন, সংসদ ভবন এলাকা, ক্রিসেন্ট লেক, রমনাপার্ক কালিমন্দির, বাহাদুরশাহ পার্ক, ডেমরার বাউলাবাজার, মোহাম্মদপুরের বেঁড়িবাধ এলাকায় কৃষ্ণচূড়া প্রাকৃতির সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়েছে। কংক্রিটের ঢাকায় সৌন্দর্য বিলাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া। অথচ আমাদের দেখার চোখ নেই; বুঝার হৃদয় নেই?
কৃষ্ণচূড়ার আগুনমাখা সৌন্দর্য দেখেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘রেশমি চুড়ির তালে কৃষ্ণচূড়ার ডালে/পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা ডেকে ওঠে পাপিয়া।’ কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছেন, ‘বসুধা নিজ কুন্তলে/পরেছিল কুতূহলে/এ উজ্জ্বল মণি,/রাগে তারে গালি দিয়া,/লয়েছি আমি কাড়িয়া/মোর কৃষ্ণচূড়া কেনে পরিবে ধরণী?’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মতো উড়ে তোমার উত্তরী/কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী।’
বৈশাখের গুমট গরম আর ধুলা-দূষণের এই শূন্যগর্ভা ঢাকা শহরে সীমিত উদ্যান, পার্ক ও প্রধান সড়ক। সেগুলোর দুইপাশে এখন সৌন্দর্য বিলাচ্ছে জারুল, স্বর্ণাভ সোনালু, মধুমঞ্জরী, নীলাভ জ্যাকারান্ডা, কাঠগোলাপের মতো পরিচিত-অপরিচিত হাজারো ফুল। এগুলোকে ছাড়িয়ে দূরভেদী কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উদ্ভাসের কাছে মøান হয়ে গেছে সব ফুল-রঙ।
রাজধানী ঢাকার পথে পথে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়ার ফুল নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের উচ্ছ্বাসের সীমা পরিসীমার শেষ নেই। কেউ কেউ বেড়াতে বেড়িয়ে এই ফুলের ছবির সঙ্গে পছন্দসই পদ্যের দু’চারটি চরণ জুড়ে দিচ্ছেন ফেসবুকের পাতায়। আবার কারও কারও ফেসবুকের দেয়াল ভরে উঠতে দেখা যাচ্ছে গাছতলা ছেয়ে থাকা ঝরা ফুল ও সবুজ পাতার ঐশ্বর্যে।
ঈদের ছুটিতে প্রায় কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন ঈদ উদযাপনে। ফাঁকা ঢাকা দেখতে বেরিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালিমন্দিরের পাশে চোখ যেতেই ধরা দিল আগুনঝরা কৃষ্ণচূড়া। আহা কি সুন্দর! রমনা পার্কের অস্তাচল গেট, ওসমানী উদ্যানের নগরভবনের সামনের দিকের প্রবেশপথেও দেখা মিলল এই মনোহর ফুল।
বৈশাখের এই গরমে প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে রাজধানীর বুকে কৃষ্ণচূড়ার সবচেয়ে বড় আসন বসিয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের ক্রিসেন্ট লেক সংলগ্ন সড়কে। এর ওপারে চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতরের তাকালেই চোখে পড়ে অসংখ্য ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া। শেরেবাংলা নগরেও এখানে-ওখানে কৃষ্ণচূড়ার আধিক্য চোখে পড়ার মতো। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মলচত্ত্বর কৃষ্ণচূড়ার যেন কৃষ্ণচূড়ার আরেক জগত। কলাভবনের সামনে এবং গুরুদুয়ারা নানকশাহীর পেছনের কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো এ বছর ফুলের ডালা বেশিই সাজিয়েছে।
রাজধানীতে কৃষ্ণচূড়া ফুলের আরেক জগত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত মিরপুরের এ উদ্যানের ভেতরের গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফুটেছে রক্তাভ কৃষ্ণচূড়া। এছাড়াও পুরান ঢাকার রাজধানী সুপার মার্কেটের পাশে বলধা গার্ডেন, জনন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে বাহাদুরশাহ পার্কেও ফুটেছে এই ফুল। রাজধানী ঢাকার অদুরে ডেমরার বালুনদীর ধারে বাউলাবাজারে কৃষ্ণচূড়া রঙ ছড়াচ্ছে। বালু নদী দিয়ে নৌকায় যারা যাতায়াত করেন ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া দেখে তারা মোহিত হন। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কাছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের সামনেও ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া দেখা মিলছে। আর হলুদ কৃষ্ণচূড়া চোখে পড়ে হেয়ার রোড, সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের সড়ক ও ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভেতরে গেলেই। রাজধানী ঢাকার এই সব এলাকায় ছাতার মতো মেলে থাকা কৃষ্ণচূড়ার ডালপালাজুড়ে এখন অগুনতি ফুলের অবারিত উচ্ছ্বাস। শাখাগুলো দেখাচ্ছে একেকটি সুবিন্যস্ত পুষ্পস্তবকের মতো।
কৃষ্ণচূড়া নিয়ে এক নাম না জানা কবি লিখেছেন ‘এই শহরের রাজপথগুলো যেন মরুভূমি/ পিতলের থালার উপর দাঁড়িয়ে দেখি চকচকে আলো.. / রেসের ঘোড়ার মতো ছুটে চলে কোমল মরীচিকা.. / কাজলমাখা চোখগুলো ঘামে জুবুথুবু/ একুয়ারিয়ামের পাশে রাখা ফুলদানির নেতিয়ে পড়া গোলাপ/ এই শহরে কৃষ্ণচূড়া মাত্রই প্রেমের অসুখ’! সৌম্যকান্তি চক্রবর্তী নামের এক কবি লিখেছেন ‘কৃষ্ণচূড়ার রঙ লেগেছে/ মনের গভীর কোনে/তাইতো ভাবি তোমায় এত / পড়ছে কেন মনে?’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।