কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চার খুনের ঘটনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ মে) রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। থানার (ইবি) ওসি মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আস্তানগর বাজারে কেরামত আলীর সমর্থক আব্দুর রহিম মালিথার সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কেরামত উল্লাহর লোকজনের সাথে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের ও ফজলুল হকের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষ হয় ।

এতে দুপক্ষের চারজন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এদিকে নিহত সংঘর্ষে নিহত মতিয়ার মন্ডলের ভাই আশরাফুল মন্ডল বাদী হয়ে ঝাউদিয়া ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান কেরামত উল্লাহকে প্রধান আসামিসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরদিকে নিহত রহিম মালিথার ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ ইউপি মেম্বর আনিসকে প্রধান আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করেন।

এদিকে সামাজিক দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ২ মে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বিবদমান দুই গ্রুপের হামলা-সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় আস্তানগর গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আটককৃতদের নাম প্রকাশ করছে না।

এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গ্রেফতার এড়াতে হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। ফলে সাঁড়াশি অভিযান সত্ত্বেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

আধিপত্য বিস্তারসহ সামাজিক দ্বন্দ্বের জের ধরে ২ মে সন্ধ্যায় দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত কেরামতের ৪০/৫০ জন সংঘবদ্ধ লোকজন প্রতিপক্ষ ফজলু সমর্থকদের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দুপক্ষের তুমুল সংঘর্ষে আস্তানগর গ্রামের লাল্টু (৪০), মতিয়ার মন্ডল (৪৫), কাশেম মন্ডল (৫৫) ও রহিম মালিথা (৬০)। নিহতদের মধ্যে রহিম মালিথা কেরামত উল্লাহর সমর্থক ও অপর তিনজন ফজলু সমর্থক। গত ৩ মে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওমি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খাইরুল আলম জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না। আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের সোপর্দ করার জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।