বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ইউনিয়নের মুছাপুর ক্লোজারের সামনে ৬০০ একর সরকারি খাস জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ফের দখল শুরু হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন রীতিমত অভিযান চালালেও কার্যত: নির্বিকার। তবে নানা কারণে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পাঁচ দিন পার না হতেই আবারও উচ্ছেদ করা খাস জমিতে ঘর নির্মাণ শুরু করেছে বেদখলকারীরা। ফলে সরকারের শত কোটি টাকার ভূমি বেহাত হবার উপক্রম হয়েছে।
জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল এসব অবৈধ ঘর উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশের উপস্থিতিতে ভূমি কার্যালয়ের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে বেদখলদাররা। এ ঘটনায় ভূমি অফিসের ৩ জন আহত হয়। একপর্যায়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-আমিন দুই ধাপে অভিযান চালিয়ে ঘরগুলো উচ্ছেদ করে। তবে হামলার ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন মামলা হয়নি। নতুন করে ৩৫-৪০টি ঘর নির্মাণের প্রায় ১৪দিন অতিবাহিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে নেয়নি কোন ব্যবস্থা।
অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আলী আজগর জাহাঙ্গীর ও তাঁর লোকজন মুছাপুর ইউনিয়নের এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে শত কোটির টাকার এ খাস জমি দখল বাণিজ্যের মিশনে নেমেছেন। এরই মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক মাটির ভিটা বানানো হয়েছে। ওই সব বসতভিটায় নতুন করে বানানো হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০টি জুবরি ঘর। একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলা প্রশাসনের একটি স্পর্শকাতর অংশ এবং শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশে এ খাসজমি দখলের মহোৎসব চলছে।
গতকাল ২৫ এপ্রিল সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনের কোন তদারকি না থাকায় কোন বাধা ছাড়াই ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীরের ভাই জালাল ও তাদের লোকজন খাস জমিতে ঘর নির্মাণ করছে। এমনকি এ বেদখলকারীরা জেগে উঠা চরে সামনের খালের মাঝখানে বাধ নির্মাণ করছে। সেখানে এসব তদারকি বেশ কয়েকজন মানুষ। গণমাধ্যম কর্মিদের সেখানে যাওয়া নিষেধ বলেও জানান তারা। পুনরায় এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ থেকে ৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় চর দরবেশ এলাকার আবদুস সোবহানের ছেলে কালাম জানান, গ্রামের স্থানীয় জনগণ এখানে ভিটা ভরাটের কাজ করছে। আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ পরিবার হবে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান, এ জায়গার মধ্যে বাড়ি হবে। স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর জানে। তাঁরা অর্ডার দিয়েছে। মেম্বারের ভাই জালাল সবাইকে বসিয়ে দিচ্ছে। আপনারা কি কাউকে টাকা দেওয়া লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা নিজেদের ভিটা নিজেরা বেঁধে নিচ্ছি। চার-পাঁচ হাজার টাকা খরচ যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর ফলে বেড়িবাঁধের মুখে ডাকাতিয়া নদী থেকে আনুমানিক ৭০০ একর নতুন চর জেগে উঠে। এক সময় বনবিভাগ ওই জায়গায় চারাগাছ রোপণ করে। নতুন জেগে উঠা চরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার ঘোষণা দিলে বনবিভাগ ২০১৮সালে তাদের চারা গাছ সরিয়ে নেয়। কিন্তু এখন স্থানীয় ইউপি সদস্য দুই শতাধিকের উপরে ভুয়া ভূমিহীন সাজিয়ে ৬০০ একর আবাদযোগ্য ও অনাবাদি খাস জমি দখল করে সেখানে বসত ঘর করার জন্য মাটির ভিটা বানাচ্ছে। প্রত্যেকটি ভিটার পরিমাণ হবে এক একর। অভিযোগ রয়েছে এরজন্য ভিটা প্রতি নেওয়া হচ্ছে ১লক্ষ টাকা থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আলী আজগর জাহাঙ্গীর অভিযোগ নাকচ করে বলেন, ওখানে টুকটাক কিছু ঘর হইছে। আরো ঘর নির্মাণের চেষ্টায় আছে। আমি আজ থেকে ১০-১২ দিন আগে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছি। এখানে ঘরের কাজ চলছে,এখন কি করা যায়। ইউএনও আমাকে বলেছে, দেখি আমরা আগামী সপ্তাহে অভিযান করতে পারি কিনা। মেম্বার আরও বলেন, এ ঘটনায় কয়েক দিন আগে তাকে উপজেলা প্রশাসন থেকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি ওই শোকজের জবাব দিয়েছেন। খালে বাধের বিষয়ে তিনি জানান, ওই বাধ ফেনীর সোনাগাজীর অংশে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আইয়ুব আলী বলেন,এ ঘটনায় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর এবং তাঁর লোকজন জড়িত নয়। ইউএনও আমাদের অভিভাবক। এ বিষয়ে ঊনার থেকে শুনেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ওই জায়গায় তিনবার অভিযান চালানো হয়েছে। কেউ যদি আবার অবৈধ ঘর নির্মাণ করে তাহলে আমরা আবার ব্যবস্থা নেব। তিনি আরো বলেন, ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ওপর হামলায় ঘটনায় যতদূর জানি মামলা হয়নি। যে হামলার শিকার হয়েছে তাকে বলা হয়েছে মামলা করার জন্য। সে আগ্রহী নয় বলে শুনেছি। মামলা হলোনা এত বড় একটা ঘটনা,তারা বার বার দখল করতেছে। এটাতে কি প্রশাসনিক কোন দূর্বলতাকে সুযোগ নিচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমরা অভিযান করছি,ব্যবস্থা নিচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।