পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিভিন্ন দাবিতে কিছু দিন পরপরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তোয়াক্কা না করেই রাস্তায় নেমে আসে পোশাক শ্রমিকরা। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীর বিমানবন্দর-উত্তরা সড়ক অবরোধ করা যেন তাদের রুটিন ওয়ার্ক। শুধু তাই নয়, আন্দোলনের নামে শ্রমিকদের নৈরাজ্যে পুলিশও নিরবতা পালন করে। আর উত্তরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করলে ফার্মগেট, মিরপুর, বনানী, গুলশান, রামপুরা, বাড্ডা, মতিঝিল, মহাখালী, ধানমণ্ডি, কাওরান বাজার, শাহবাগসহ পুরো ঢাকাই যানজটে অচল হয়ে পড়ে। এমনকি বিমানবন্দরে আসা দেশি-বিদেশী যাত্রীরাও চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। তবে যানজটের ওই জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে চান রাজধানীবাসী।
গতকাল দুপুরে হঠাৎ করেই উত্তরার জসীমউদ্দিন-আজমপুর সড়ক অবরোধ করে পোশাক শ্রমিকরা। ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও বোনাস না পেয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। শুধু উত্তরাই নয়, একই দাবিতে মিরপুর এলাকায়ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এতে রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে মিরপুর ১১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। আর উত্তরায় অবস্থান নেন ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড এবং ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড নামে দুইটি গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। উত্তরার দুটি গার্মেন্টসের মালিক একই ব্যক্তি।
এদিকে সড়ক অবরোধের কারণে মিরপুর ১০ এবং এর আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। একইভাবে বিমানবন্দর-উত্তরা সড়কেও নড়ছে না যানবাহন। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা।
তবে মিরপুরের শ্রমিকরা জানান, এ গার্মেন্টসে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের কেউই চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসের বেতন পাননি। সব বকেয়া ও ঈদ বোনাস ২০ এপ্রিল দেওয়ার কথা ছিল। তবে মালিকপক্ষ টাকা দেয়নি। গার্মেন্টস মালিকও কারখানায় আসছেন না ২ সপ্তাহ ধরে। এ অবস্থায় রাস্তায় নামা ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না।
কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিক বোরহান উদ্দিন বলেন, গত ২৩ এপ্রিল একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিল পুলিশ। তবে দুই দিন ধরে তারা আর যোগাযোগ করেনি।
এদিকে ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড এবং ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা বলেন, তাদের গার্মেন্টস দুইটি একই মালিকের। তাদের কারও ২ মাসের বেতন বকেয়া, কারও ৩ মাসের বেতন, ওভারটাইম ও বোনাস পাওনা। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। পল্লবী থানার এসআই তোফায়েল আহমেদ বলেন, শ্রমিকেরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে এক পাশের রাস্তা বন্ধ থাকায় যানজট তৈরি হয়। মিরপুর মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলন করছে যার কারণে অত্র এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। আন্দোলনরত স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উত্তরা পূর্ব থানার ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণখান থানা এলাকায় অবস্থিত ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড এবং ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক ইলিয়াস পাটোয়ারি। সকাল ১১ টার দিকে শ্রমিকরা উত্তরার আজমপুরে জসীম উদ্দীন সড়ক সংযোগ পয়েন্টে বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে। শ্রমিকদের দাবি, তাদের কারও ২ মাসের বেতন বকেয়া, কারও ৩ মাসের বেতন, ওভারটাইম ও বোনাস পাওনা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সড়ক না ছাড়ার ঘোষণা দেয়। পরে ঘটনাস্থলে বিজিএমইএ’র একজন প্রতিনিধি উপস্থিত হয়। পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে দুপুর ১ টার দিকে শ্রমিকরা দক্ষিণখানে তাদের কারখানায় চলে যায়।
দক্ষিণখান থানার ওসি মামুনুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ভিতর পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) রেজানুল হককে আটক করে রাখে। পরে বিজিএমইএ’র একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কারখানা থেকে বলা হয় যে মঙ্গলবার বেতন সংক্রান্ত শ্রম মন্ত্রনালয়ে বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকের আগেই শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কারখানার কর্তৃপক্ষ।
উত্তরা ট্রাফিক জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে রাস্তায় অনেক যানজট তৈরি হয়। তিনি বলেন, এক দিকে ভিআইপি অন্যদিকে শ্রমিকদের আন্দোলন দুটো মিলিয়ে বেহাল অবস্থা। জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক-উত্তরা জোনের ডিসি মো. সাইফুল হক বলেন, শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে আমরা তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে দেই। এর চেয়ে বেশি কিছু করার আমাদের নেই। তবে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ গুরুত্বের সাথে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, উত্তরা ও মিরপুরের শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের প্রভাব পুরো রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানীর খিলক্ষেত, বনানী, গুলশান, মহাখলী, ফার্মগেট, বাংলামটর, শাহবাগ, মতিঝিল, জাহাঙ্গীর গেট, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, কারওয়ান বাজার, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, গুলিস্তান এলাকায় বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব পড়ে পাড়া-মহল্লার সড়কগুলোতেও।
যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তাগুলোতে একদিকে গাড়ির যানজট, অন্যদিকে এ স্থবির পরিস্থিতিতে যানবাহন চালকরাও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মানায় অবস্থা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। আর নিয়ম মেনে না চলার কারণে সৃষ্ট যানজট মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।
এছাড়াও কয়েক দিন পরপর উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে। সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন ও শৃঙ্খলা না মানা রাজধানীতে যানজটের একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।
বিমানবন্দর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মধ্যে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্য রওনা দেওয়া বহু মানুষকে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, তার ছেলে দুবাই প্রবাসী। ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। গতকাল ফের দুবাই চলে গেছেন। গতকাল বিকালে তার ফ্লাইট ছিল। তাই ফ্লাইটের নির্ধারিত সময় থেকে বেশি সময় হাতে নিয়েই বাসা থেকে বের হন তারা। কিন্তু সড়কে তীব্র যানজটের কারণে ফ্লাইট ছাড়ার মাত্র এক ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কয়েক দিন পর পরই শ্রমিকরা উত্তরা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এসে। এতে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এটা জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের অনুরোধ করেন তিনি।
বিমানবন্দর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বিমানবন্দর সড়কে নির্মাণ কাজ চলছে। তাই এমনিতেই সব সময় যানজট লেগে থাকে। কিন্তু শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করলে যানজটের ভয়বহতা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।