Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সবচেয়ে কম দামে টিকা দিয়েছে বাংলাদেশ

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা ক্রয়ে খরচ ২০ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম দামে জনগণকে নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে টিকা দিয়েছি বলে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয়। উল্টো আমরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে জনগণকে টিকা দিয়েছি। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য দিয়ে থাকলেও সেটা সঠিক নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত টিকা কার্যক্রমে মোট খরচ হয়েছে আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের খরচ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা এবং বিনামূল্যে পাওয়া টিকার দাম প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার টিকা।
গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী মনে করেন, শুধুমাত্র জনগণের কাছে ভুল তথ্য এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই টিআইবি টিকা সম্পর্কিত এ প্রতিবেদন দিয়েছে। টিআইবির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটা সংস্থা তাদের মতামত প্রকাশ করতেই পারে। যেহেতু এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ইতিমধ্যে ১৩ কোটি প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ ১১ কোটি ৬০ লাখ এবং বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষকে। ভারত থেকে যে দামে টিকা কেনা হয়েছিল, অন্যান্য দেশ থেকেও কাছাকাছি দামে টিকা কেনা হয়েছে বলে জানান জাহিদ মালেক
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের টিকা কেনা এবং আনা-নেয়ার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর বাকি টিকার দাম ২০ হাজার কোটি টাকার মতো, যেগুলো সরকার বিনামূল্যে পেয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে। তাই টিকা বাবদ খরচ নিয়ে টিআইবির তথ্য সঠিক নয়।
টিআইবি করোনার দুই বছরের সার্ভে করেনি। তারা শেষ ৮ মাসের সার্ভে করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো হাসপাতাল নেই যেখানে অক্সিজেন নেই। অক্সিজেন না পেয়ে মানুষ মারা গেছে- টিআইবির প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত তথ্যও সঠিক নয়। তিনি বলেন, তারা সার্ভে করেছে ১০৫টি টিকা কেন্দ্রকে ভিত্তি করে। যেখানে টিকা কেন্দ্র ছিল ১ লাখের ওপরে। ১ হাজার ৮০০ লোকের মধ্যে সার্ভে হয়েছে। যেখানে ১২ কোটির ওপরে মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। তাদের সার্ভের সাইজ এত ছোট যেটা সঠিক নয়। দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ যে আর আসবে না সেটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। তাই সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে বলে জানান জাহিদ মালেক। ভারতে আবার করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, তাই সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সূত্র মতে, দেশে করোনা প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমের খরচের বিষয়ে সরকারের দেয়া হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের অভিযোগ তুলে ধরেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, এক্ষেত্রে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে।
টিআইবি প্রতিবেদনের অসংলগ্ন তথ্যগুলি তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিআইবি বলেছে দেশের ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ করোনায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ মানে তো দেড় লাখ মানুষ। দেশে করোনায় ৩০ হাজারের কম মানুষ মারা গেছে অথচ তারা বলছেন ৭ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ মারা গেছেন বিনা চিকিৎসায়। টিকা ব্যবস্থাপনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। আমরা কেবল নিজেদের কেনা ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছি। এর সাথে সাড়ে ৯ কোটি ডোজ টিকা যেগুলি সরকার বিনামূল্যে পেয়েছে সেগুলির মূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ক্রয়কৃত ও উপহার হিসেবে পাওয়া টিকার মূল্য ধরেই ৪০ হাজার কোটি টাকা বলা হয়েছে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, ৪০ লাখের বেশি ষার্টোর্ধ ব্যক্তি টিকা পায়নি। এটিও সঠিক তথ্য নয়। দেশে বর্তমানে ষাটোর্ধ ব্যক্তি আছে ১ কোটি ২০ লাখের মত। সরকার সবার আগে বয়স্ক ব্যক্তিদের টিকা দিয়েছে। তারপর অন্যান্য মানুষকে দেয়া হয়েছে। কোথাও ষাটোর্ধ ব্যক্তি টিকা পায়নি এমন কথা জানা যায়নি। এরমধ্যে যারা নেয়নি তারা ইচ্ছে করেই নেয়নি। তবে টিকাদানে সরকারের স্বদিচ্ছার কোন ঘাটতি ছিল না। টিকাদানে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোন কোন জায়গায় ৬৬-৬৭ টাকা করে ঘুষ দিয়ে টিকা নিতে হয়েছে। ৬৬-৬৭ টাকা আজকাল কাউকে এমনি এমনি দিলেও নিতে চায় না। অথচ এটি প্রচার করা হলো দুর্নীতি হিসেবে। ল্যাব সংখ্যা কম, চিকিৎসা সেবা পায়নি মানুষ। অক্সিজেন ঘাটতি ছিল, ওষুধ সঙ্কটসহ আরো নানা বিষয়ে জরিপে বলা হয়েছে, যার কোনটিই সত্যি নয়। দেশে কোথাও অক্সিজেন ঘাটতি হয়নি। আমেরিকার রেমডিসিভির ওষুধ সবার আগে বাংলাদেশে চলে এসেছে, সেটিও সরকার বিনামূল্যে দিয়েছে। এরপরও টিআইবি বলছে, দেশে ওষুধের ঘাটতি ছিল। মূলতঃ টিআইবি স্বাস্থ্যখাতের অর্জনকে ম্লান করে দিতেই এই রিপোর্ট করেছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যখন দেশে বিদেশে সবাই প্রশংসা করছে তখন তারা এরকম মনগড়া ও ভীত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি পড়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশকেই ইনট্রান্সপ্যারেন্ট মনে হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত টিআইবির এই প্রতিবেদন টোটালি প্রত্যাখান করছে।
ব্রিফিংকালে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ