Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুরে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ : একজনের মৃত্যু

আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

ফরিদপুরে বেড়েই চলছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১১৩ জন করে আক্রান্ত হয়েছে এবং একজনের মৃত হয়েছে। শয্যা বাড়িয়েও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালের কক্ষের মেঝে ও বারান্দায় রোগী রেখে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। মৃত্যু ব্যক্তির নাম মো. জামাল মন্ডল, পিতা: ইলিয়াসিন মন্ডল, গ্রাম: বুকাইল, বাখুন্ডা, সদর থানা: ফরিদপুর।

জামাল মন্ডল ডায়রিয়া মারা যাওয়ার বিষয় মৃত্যের মেয়ে রিকতা এবং মেয়ের জামাই ইকবল ইনকিলাবকে জানান, আমরা গত রোববার রাত ১১টায় ডায়রিয়া নিয়ে বাবাকে সদর হাসপাতালে বারান্দায় ভর্তি করি চিকিৎসা সেবা অবস্থায় গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে দশটায় মারা যান। রিকতারা ৬ বোন ১ ভাই আছে বলে প্রতিনিধিকে জানা। এ নিয়ে, গত ৭ দিনে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে মোট ৮১৪ জন মানুষ ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত ভর্তি হয়েছেন।
গতকাল সোমবার নতুন করে ৮৪ জন ব্যক্তি উপস্থিত চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। গত ৭২ ঘণ্টায় হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে ৭৩ জন পুরুষ ৪৮ জন নারী এবং ৫ শিশু বাচ্চা ডায়রিয়ায় আক্রান্তের অবস্থায় ছিল ভয়াবহ। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সরেজমিন উপস্থিত থেকে হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সদের চিকিৎসা সেবায় কোন অবহেলা দেখতে পাননি। তবে প্রচন্ড জনবল আয়া ও ক্লিনারের অভাব দেখতে পেয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোতে জনবলসহ ক্লিনার ও আয়ায় বাড়ানো খুবই জরুরি। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার জন্য একজন ক্লিনার ও একজন মাত্র আয়া আছে। বর্তমান অবস্থা এমন হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতার ১০০ গুন রোগী আসার কারণে নার্সরাও সেবা দিতে হাপিয়ে উঠছেন। নার্সদের দাবি ডায়রিয়া ওয়ার্ডেই নার্স এবং তিনজন ক্লিনার ও আয়া খুবই জরুরি।
হাসপাতালে বেড না থাকার কারণে শিশু কিশোর বৃদ্ব আবার বনিতা, নারী পুরুষ ফ্লোরে, বারান্দায় গাছতলায় শুয়ে বসে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। অপরদিকে, মাত্র ২৩ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিতে রোগীর পরিমাণ এতটাই বেশি যে, নারীর পাশে পুরুষ, পুরুষের পাশে নারী, শিশু বৃদ্ব এক বেডে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিছানার চাদর, বেড কাভার স্যালাইন ঝুলানো লোহার ষ্টান্ড না থাকার কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে ফ্লোরে শোয়ায়ে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্যালাইন হাতে ধরে স্বজনদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। চিকিৎসা নিতে আসা সকলেই গণমমাধ্যমকে বলছেন, ফরিদপুরে প্রচন্ড গরমে হঠাৎ করে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। জেনারেল হাসপাতালের ১০ শয্যার বিপরীতে ১০০ জন রোগীকে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। সিনিয়র/জুনিয়র নার্সরা চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে। প্রতি ঘন্টায় ৫/১০ জন করে নতুন নতুন আক্রান্ত রোগী/ রোগীনি, শিশু কিশোর বৃদ্ব আবাল বনিতা এসে ভর্তি হচ্ছে।
জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাপি বেগম বলেন, ‘আমরা এখন সাপ্তাহিক ছুটি না নিয়েও দিন রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছি। রোগী আসছে প্রচুর, জায়গা দিতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে অনেকেই ফ্লোর, বারান্দা আবার অনেকেই গাছতলায় সেবা নিচ্ছেন। জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. গণেশ কুমার আগরওয়ালা গণমমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১১৩ জন রোগী। তবে ভর্তি রোগী বেশি দিন থাকছে না, ভাল হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান এ চিকিৎসক।
ফরিদপুরের সির্ভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান গনমমাধ্যম কে জানান, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি না নেওয়ায় চাপ বেড়েছে জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা মাত্র ১০টি । বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০০। এই বিপুল সংখ্যাক রোগী সেবা দিতে নার্স ও চিকিৎসকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালে সকল রোগীদের দাবি ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পাশে অলস জায়গায় দ্রুত একটি ভবন নির্মাণ করে রোগীদের ভোগান্তি কমাতে বিনয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট জোড় দাবি জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ