Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফেরিতে২৪ ঘন্টায় ১১ হাজারেরও বেশী যানবাহন পারাপার, অপেক্ষমান প্রায় দু হাজার

মেরমতাধীন ৭টি ফেরি পরিচালনে ফিরছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২২, ২:৩৫ পিএম

রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সহ উপক’লীয় ৩টি বিভাগের মহাসড়ক সমুহের ফেরি সেক্টরে রেকর্ড সংখ্যক যানবাহন পারাপারের পরেও আরো প্রায় দু হাজার অপেক্ষমান থাকছে। ফলে আগামী বুধবার থেকে ঈদের ঘরমুখি মানুষের যানবাহনের চাপ বাড়লে পরস্থিতি কেন দিকে যাবে, তা নিয়ে শংকিত ওয়াকিবাহাল মহল। তবে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য সংস্থা বিআইডব্লিউটসি’র দায়িত্বশীল মহল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। রোববার সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দেশের ফেরি সেক্টরে ১১ হাজার ১১০টি যানবাহন পারাপারের পরেও অপেক্ষমান ছিল আরো প্রায় ১ হাজার ৭শ যানবাহন। সোমবার থেকে যানবাহন পারাপারের সাথে অপেক্ষমানের সংখ্যাও বাড়বে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
এদিকে সংস্থাটির বহরের ৫৪টি বিভিন্ন ধরনের ফেরির ৪৪টি রোববারে বানিজ্যিক পরিচালনে থাকলেও ‘হজরত খাজা এনায়েতপুরী(রঃ)’ নামের ১টি রোরো ফেরি দূর্ঘটনায় ‘প্রপেলার স্যাফট’ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। মেরামতে থাকা অপর ৯টি ফেরির ৭টি চলতি সপ্তাহেই বানিজ্যিক পরিচালনে যুক্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী আবদুল গফুর সরকার। তার মতে, ‘এনায়েতপুরী (রঃ)’ বিকল হবার সাথে সাথে এক ইঞ্জিনে চালিয়ে নারায়নগঞ্জে সংস্থার ডকইয়ার্ডে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ইয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে, ফেরিটি ডকিং করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রপেলার ও স্যাফট মেরামত বা রিপ্লেস করা হবে’ বলেও জানান তিনি। তার মতে, ‘সব কিছু ঠিক থাকলে ফেরিটি সচল করতে তাদের ২৪ ঘন্টার বেশী সময় লাগবে না। তবে আসা যাওয়ায়ই যতটা সময় লাগবে’ বলে জানিয়ে ‘ঈদের আগে রো-রো ফেরি ‘হজরত শাহ আলী (রঃ)’ ও কে-টাইপ ফেরি ‘কস্তুরী’ মেরামত সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে অন্য ৭টি বানিজ্যিক পরিচালনে যুক্ত হবে বলেও জানান তিনি।
বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুর সহ দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে রাজধানী ঢাকা ও সন্নিহিত এলাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের সড়ক যোগাযোগ রক্ষায় পটুরিয়া ও মাওয়া সেক্টর সহ চাঁদপুরÑশরিয়তপুর, ভোলাÑলক্ষ্মীপুর এবং ভোলাÑবরিশালের মধ্য ফেরি সার্ভিসগুলো অনেকটা ‘চলন্ত সিড়ি’র কাজ করছে। রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডব্লিউটিসি তার বহরের রো-রো, কে-টাইপ, মিডিয়াম, ইউটিলিটি এবং স্মল টাইপের ৫৪টি ফেরির সাহায্যে দেশের ‘অর্থনীতির প্রাণ’, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে সচল রাখছে।
তবে পরিচালন ব্যবস্থা সহ নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির সাথে রুটিন মাফিক রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে নতুন ও পুরনো প্রায় সব ফেরিতেইে কারিগরি সমস্যা লেগে থাকে বছরের ১২ মাস। ফলে পর্যায়ক্রমে অন্তত ১০টি ফেরি বছর যুড়েই মেরামতে থাকছে। এর পরেও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ হাজার যানবাহন পারাপার হলেও আগামী বুধবার থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত যানবাহন পারপারের সংখ্যাটা ১৫ হাজার অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী দায়িত্বশীল মহল। ঈদের তিন দিন পর থেকে পরবর্তি সপ্তাহ যুড়েও একই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে।
রোববার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় শুধু পাটুরিয়া সেক্টরেই ২২টি ফেরির সাহায্যে দৌলতদিয়ার সাথে ৭ হাজার ৩৩৩টি যানবাহন পারাপারের পরেও সাড়ে ৮শ অপক্ষেমান ছিল। রোববার পাটুরিয়াতে রো-রো ফেরি ‘হজরত খাজা এনায়েতপুরী (রঃ)’ দূর্ঘটনার পরে ঐ সেক্টরে বিপত্তি বাড়বে বলে মনে করছেন যানবাহনের চালকগন। তবে সেখানে বিকল্প ফেরি মোতায়েন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন দায়িত্বশীল মহল। এসময়ে পাটুরিয়া সেক্টরের আরিচাÑকাজিরহাট রুটেও ৩২৯টি যানাবহান পারপারের পরেও ১১টি অপক্ষেমান ছিল।
এদিকে রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া সেক্টরে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় ভাড়ি যানবাহন পারপার বন্ধ থাকলেও ঐ সেক্টরের শিমুলিয়াÑবাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দীÑশিমুলিয়া রুটে ৭টি ফেরির সাহায্যে ১ হাজার ৯৭৭টি যানবাহন পারপার হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায়। তবে এসময়ে অপেক্ষমান ছিল আরো ৬শ যানবাহন। মাওয়া সেক্টরে ভাড়ি যানবাহন পারপার বন্ধ থাকায়ই পটুরিয়াÑদৌলতদিয়া রুটে যানবাহনের বাড়তি চাপ পাড়ছে। ফলে সর্বোচ্চ সংখ্যক ফেরি মোতায়েন করেও যানবাহনের ভীড় সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা দেশের সর্ব বৃহত পাটুরিয়া ফেরি সেক্টরে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের যানবাহনের একটি বড় অংশ পারাপার হচ্ছে চাঁদপুরÑশরিয়তপুর ফেরি সেক্টরে। এসেক্টরে ৮টি বিভিন্ন ধরনের ফেরির সাহায্যে গত ২৪ ঘন্টায় ৭৯১টি যানবাহন পারাপার হলেও অপেক্ষমান ছিল ২৩০টি। এ সেক্টরেও যানবাহনের চাপ প্রতিনিয়ত বাড়লেও ফেরি সংকটে বাড়তি চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
উপমহাদেশের সর্বোচ্চ দৈর্ঘের ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মধ্যবর্তি ইলিশাÑমজুচৌধুরীর হাট রুটে ২৪ ঘন্টায় ৪টি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে ৩৪৯টি যানবাহান পারাপারের অর্ধেকেরও বেশী, ১৮০টি অপক্ষেমান ছিল। চট্টগ্রামÑবরিশালÑখুলনা মহাসড়কের প্রায় ২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ সেক্টরে মাত্র ৪টি কে-টাইপ ফেরির সাহায্যে যানবাহন পারাপার নির্বিঘœ হচ্ছেনা। কিন্তু ২০০৭ সালে চালু হওয়া দেশের একমাত্র উপক’লীয় এ ফেরি সেক্টরের জন্য আজ পর্যন্ত আবহাওয়া উপযোগী ও নিরাপদ কোন ফেরি তৈরী না হওয়ায় যানযট এখানে নিত্যকার ঘটনা। আসন্ন ঈদের আগে-পড়ে এ সেক্টরে যানবাহনের চাপ প্রায় দ্বিগুন বাড়লেও পারাপারের সংখ্যা বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই।
ঐ একই মহাসড়কের ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তি লাহারহাটÑভেদুরিয়া সেক্টরেও মাত্র ৪টি ‘ইউটিলিটি টাইপÑ১’ ফেরির সাহায্যে রোবববার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় ৩৬৯টি যানবাহন পারপারের পরেও অপেক্ষমান ছিল ১১০টি। দেশের অন্যসব সেক্টরের মত এ সেক্টরেও ঈদের আগেÑপড়ে যানবাহনের চাপ প্রায় দ্বিগুন বাড়লেও বাড়তি যানবাহন পারপারের কোন সুযোগ নেই। কিন্তু এ সংকটময় সময়েও ১টি ইউেটিলিটি ফেরি পাটুরিয়া সেক্টরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে । ফলে ভোলাÑবরিশালের মধ্যে যানবাহান পারপার যথেষ্ঠ ব্যাহত হচ্ছে। অথচ সমগ্র চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগের এ মহাসড়কে ভোলাÑলক্ষ্মীপুর ও ভোলাÑবরিশাল ফেরি সেক্টরের ওপরই নির্ভরশীল।।।।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ