Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘাট ফাঁকা থাকলেও সড়কের ওপর পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি

আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট

শাহজাহান বিশ্বাস, আরিচা থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরিতে পারাপারে কোনো শৃঙ্খলা নেই বলে অভিযোগ করেছেন যানবাহন শ্রমিকরা। এ নৌপথে ফেরি সংকট এবং সিরিয়াল ভঙ্গ করে ফেরি লোড-আনলোডে, আরিচাতে দুইবার করে নেওয়া হচ্ছে টার্মিনাল চার্জ এবং পণ্যবাহী ট্রাকগুলো রাখা হচ্ছে রাস্তার উপর। এতে ট্রাক শ্রমিকরা একদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অপরদিকে বিলম্বসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয়দের চলাচলে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ভীষণ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে চান ভুক্তভোগীরা।
গতকাল শনিবার সকালে আরিচা ঘাটে টার্মিনাল এলাকা থেকে থানার মোড় পর্যন্ত রাস্তার উপর পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সাড়ি এবং অনুরূপ নদীর ওই পারে পাবনার কাজিরহাটে কাজিরহাট-পাবনা সড়কের তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি ছিল বলে জানা গেছে।
একাধিক ট্রাক শ্রমিকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু হবার পর থেকে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তারা এ নৌরুট ব্যবহার করছেন। এক বছর অতিবাহিত হলেও ফেরি সার্ভিসের কোনো উন্নতি হয়নি বরং অবনতিই হয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বেগম সুফিয়া কামাল ও বেগম রোকেয়া এই দু’টি নতুন ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। খুব অল্প সময়েই পারাপার হওয়া যেতো ওই ফেরি দিয়ে। কিন্তু বেশ কিছু দিন চলার পর কর্তৃপক্ষ কি কারণে ওই ফেরি দু’টিকে অন্যত্র নিয়ে যায় তা তাদের জানা নেই বলে জানান যানবাহন শ্রমিকরা।
এর মধ্যে আবার ঘাটে নেই কোন শৃঙ্খলা। বিধায় এখানে ফেরিতে যানবাহন লোড-আনলোডে কোনো সিয়াল মানা হচ্ছে না। এরপর রয়েছে দালালদের উৎপাত। এসব দালালরা চালকদের নিকট থেকে বাড়তি টাকা নিয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু লোকদের যোগসাজসে সিরিয়াল ভঙ্গ করে বুকিং দিয়ে গাড়ি পার করে দিচ্ছে। এতে কেউ আগে এসে সিরিয়ালে বসে থাকছে, আবার কেউ পরে এসে সিরিয়াল ভঙ্গ করে আগে ফেরি পার হয়ে যাচ্ছে।
এরপর রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র টার্মিনালে গাড়ি পার্কিং চার্জ বিড়ম্বনা। আরিচা ঘাটে দুইবার করে দিতে হচ্ছে টার্মিনাল চার্জ। বিআইডব্লিউটিএ’র লোকজন ৭৫ টাকার টার্মিনাল পার্কিং চার্জ নিচ্ছেন। ১শ’ টাকা করে। এটা গাড়ি টার্মিনালে থাকলেও নিচ্ছে না থাকলেও নিচ্ছে। এছাড়া গাড়িগুলো টার্মিনালে রাখলে বিআইডব্লিউটিএ’র দেওয়া ইজাদার কর্তৃপক্ষ টার্মিনাল চার্জ হিসেবে ৫০ টাকা করে আদায় করছে। টার্মিনালে রাখা গাড়িগুলোকে পাহারার জন্য দেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা করে। এসব কারণে ট্রাকচালকরা আরিচা ঘাটে ফেরি পার হতে আসা গাড়িগুলোকে সড়কের উপর রাখছে। চলাচলের রাস্তা আটকিয়ে সড়কের উপর গাড়ি রাখা ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিরাপদ। এসময় গাড়ি থেকে মালামাল চুড়ি হয়ে যেতে পারে। গাড়ি চালকদের ঘুমানো, খাবার-দাবার ও পয়ঃনিস্কাশনসহ নানা ধরণের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া রাস্তার পাশে স্থানীয় দোকানদারদের ব্যবসা-বাণিজ্য অসুবিধা হচ্ছে।
ট্রাকচালক সেলিম মিয়া জানান, আরিচা ঘাটের টার্মিনালে গাড়ি রাখলে দুইবার করে টার্মিনাল পার্কিং চার্জ দিতে হয়। একবার বিআইডব্লিউটিএ’র ৭৫ টাকার পার্কিং চার্জ ১শ’ টাকা ও ইজাদারের ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়া পাহাদারের জন্য ২০ টাক করে দিতে হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নির্মল কুমার সাহা জানান, রাস্তার উপর গাড়ি রাখাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে অসুবিধা হচ্ছে। কাস্টমাররা আমাদের দোকানে আসা যাওয়া করতে পারছে না। টার্মিনাল ফাঁকা থাক সত্ত্বেও যে কি কারণে রাস্তার উপর গাড়িগুলো রাখা হয় তা তার বোধগম্য নয়।
এব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরির সংকট রয়েছে। তবে ঈদের আগে আরো একটি ফেরি যুক্ত হবে। টার্মিনাল ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও রাস্তার উপর গাড়ি রাখার ব্যাপারে তিনি বলেন, ফেরি পারাপার করা হচ্ছে আমাদের কাজ। গাড়ি টার্মিনালে রাখা না রাখা এবং সিরিয়াল মেইনটেন করার দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএর।
বিআইডব্লিউটিএ’র ভারপ্রাপ্ত পোর্ট অফিসার মো. শাহ আলম জানান, আমাদের কাজ বন্দরের ব্যবস্থাপনা করা। রাস্তার উপর গাড়ি থাকলে ওটা দেখাশোনা করবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। গাড়ি টার্মিনালে রাখা না রাখা ওটা আমাদের কাজ না। দুইবার করে টার্মিনাল চার্জ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা একটা দৈত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু আরিচাতে ফেরি সার্ভস চালু হওয়ার আগে আমাদের উদ্ধোর্ধতন কর্তৃপক্ষ ইজারা দিয়েছে এটাতো আমি বাতিল করতে পারি না।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আবুল বাশার জানান, রাস্তায় গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখছে কি না, শৃঙ্খলা ঠিক রাখা আমাদের দায়িত্ব। গাড়ি কোথায় থাকবে না থাকবে এটা আমাদের দায়িত্ব না।
শিবালয় থানার ওসি মো. শাহিন জানান, টার্মিনাল ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও রাস্তার উপর গাড়ি রাখার বিষয়টি আসলে আমাদের সবারই দেখা উচিত। কারণ এতে স্থানীয়দের চালাচলে অসুবিধা হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে গাড়ি রাখার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ