পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মার্চ মাসে ময়মনসিংহ বিভাগে বেশি মামলা হয়েছে; তবে সবচেয়ে কম মামলা হয় সিলেটে
অপরাধীদের আইনের আওতায় শাস্তি দিতে হবে : অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান
অভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরাধ বাড়ছে : অধ্যাপক ড. নেহাল করিম
দেশে যে অপরাধ ঘটে তার বেশির ভাগ ঘটনা মামলা পর্যন্ত গড়ায় না। ভুক্তোভোগীরা মামলা করে আবার ঝামেলায় জড়াতে চান না। কারণ বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর ধারণা মামলা করে প্রতিকার পাওয়া যাবে না। তারপরও কিছু ঘটনার পর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এতে দেখা যায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বেড়েছে খুন, ধর্ষণ, মাদক কারবার, চুরি, চোরাচালান, ডাকাতি ও সাইবার অপরাধসহ নানা ধরনের অপরাধ। গত ফেব্রæয়ারিতে অপরাধের সংখ্যা কম হলেও মার্চ মাসে দেশের প্রতিটি এলাকায় অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। আর সবচেয়ে কম অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সিলেটে। তাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কার্যক্রমের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে অপরাধ রোধে আইনি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেশি কার্যকর বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
জানা যায়, গত ১০ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সারা দেশের অপরাধ সংক্রান্ত মামলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে জানা যায়, গত মার্চ মাসে সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ২ হাজার ৩০১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে গত ফেব্রæয়ারি মাসে মামলার সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৯৪টি। গত ফেব্রæয়ারির চেয়ে মার্চ মাসে ৪০৭টি মামলা বেশি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্ক ঈদের আগে অপরাধের ঘটনা বাড়তে পারে। বিশেষ করে চুরি ছিনতাই, ডাকাতি, জাল টাকার কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।
জানতে চাইলে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন কারণে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তবে অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে বেশি অপরাধ বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক লোভের কারণেই বেশির ভাগ মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তবে অপরাধীদের আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। সভা সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগে অপরাধ সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ২৩২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা গত ফেব্রæয়ারি মাসে ছিল ১৫৮টি। এক মাসে ওই বিভাগে ৭৪টি মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সবচেয়ে কম মামলা দায়ের করা হয়েছে আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত সিলেটে। ওই বিভাগে গত মার্চ মাসে ১০৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফেব্রæয়ারি মাসে ওই বিভাগে মামলা ছিল ১০৪টি। এক মাসে মাত্র তিনটি মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ওই বিভাগে মার্চ মাসে ২৯৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফেব্রæয়ারি মাসে ওই বিভাগে ২২৮টি মামলা ছিল। এক মাসে ওই বিভাগে ৬৮টি মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ওই বিভাগে গত মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ২৭৩টি। যা গত ফেব্রæয়ারি মাসে ছিল ২২০টি। চতুর্থ স্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। ওই বিভাগে গত মার্চ মাসে ১৮৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যা গত ফেব্রæয়ারি মাসে ছিল ১৫৭টি। মোট ৩২টি মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পঞ্চম স্থানে রয়েছে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগে। ওই দুই বিভাগে মার্চ মাসে ২৯টি করে মামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকায় মার্চ মাসে ৪০৬টি মামলা হয়েছে। যা গত ফেব্রæয়ারি মাসে ৩৭৭টি মামলা হয়েছিল। আর বরিশাল বিভাগে গত মার্চ মাসে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৪৩টি। যা গত ফেব্রæয়ারি মাসে ছিল ১১৪টি। ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। ওই বিভাগে মার্চ মাসে মামলা হয়েছে ২৩৬টি। যা গত ফেব্রæয়ারি মাসে ছিল ২১৪টি।
এদিকে জেলা শহরের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতেও অপরাধ জড়িত মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে গত ফেব্রæয়ারি মাসে মামলার সংখ্যা ছিল ৩২২টি। গত মার্চ মাসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪১৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে দেশে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে। গত মার্চ মাসে সারাদেশে চোরাচালানবিরোধী টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৭৫৭টি। ওই অভিযানে মোট ২৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৩০ টাকা মূলের মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গত ফেব্রæয়ারি মাসে সারাদেশে ৬৭০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। ওইসব অভিযানে ৭ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৭৫০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। ওই বিভাগে ২১৫টি অভিযান পরিচালনা করে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। আর সবচেয়ে কম অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সিলেটে। ওই বিভাগে মাত্র ৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৫৬ হাজার ৪০০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯১টি অভিযান পরিচালনা করে ২৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫২ হাজার ১০০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। ওই বিভাগে ১৩৩টি অভিযান পরিচালনা করে ২৮ লাখ ৭ হাজার ২২০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ঢাকা ও রংপুর বিভাগ। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭৮টি অভিযান পরিচলানা করে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়। রংপুর বিভাগেও ৭৮টি অভিযান পরিচালনা করে ৮৫ হাজার ৬১০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৪৭টি অভিযান পরিচালনা করে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০০ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়। তবে বরিশাল বিভাগে ৮টি অভিযান পারিচালনা করা হলেও কোনো মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ইনকিলাবকে বলেন, আগে অপরাধ হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মানুষ আসত না। কিন্তু এখন অপরাধ সংগঠিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সবাই আসে। থানায় গিয়ে মামলা দেয়া হয়। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আগের চেয়ে অনেক বেশি মামলা লিপিবদ্ধ করছে। এছাড়াও থানায় অভিযোগ নিয়ে না আসলেও গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ জানাজানি হয়ে যাচ্ছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আর বসে থাকার সুযোগ নেই। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
এদিকে, ঈদ সামনে রেখে চুরি-ছিনতাই ও জাল টাকার কারবারিদের দৌরাত্ম্য বাড়তে পারে; এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তালিকা ধরে এসব অপরাধীকে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গত সোমবার ডিএমপি সদর দফতরে গত মার্চ মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এই নির্দেশ দেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শুধু পাহারা দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না, অপরাধীদের গ্রেফতার করে অপরাধ প্রতিরোধ করতে হবে। তাই অপরাধ প্রতিরোধে সামনের দিনগুলোতে ডিএমপির সব কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কমিশনার বলেন, ১৫ রোজা শেষ হয়ে গেছে। এখন মার্কেটগুলোতে ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকবে। এ সময় মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। এ জন্য থানার টহল আরো জোরদার করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ দল করে এদের গ্রেফতার করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম ইনকিলাবকে বলেন, করোনার মহামারির সময় অনেকের চাকরি চলে গেছে। এখন পর্যন্ত অনেকেই চাকরি পাচ্ছেন না। চাকরি না থাকায় অনেকেই নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এছাড়া দেশে আগের চেয়ে এখন অভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা সীমাবদ্ধতা ও নজরদারির অভাবে দেশে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও সাধারণ মানুষের শতভাগ চাকরি নিশ্চিত করতে পারলেই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।