বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করেনা মহামারীর দুটি বছর পার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের বেশীরভাগই এবার নিকটজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলোর হেলদোল নেই। তবে বেসরকারী সড়ক, আকাশ ও নৌ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো কর্ম পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে টিকেট বিক্রীও প্রায় শেষ করেছে। রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটসি হাত গুটিয়ে থাকার মধ্যে বেসরকারী নৌযানগুলোতে একটি কেবিন টিকেটের জন্য মানুষ হন্যে হয়ে ঘুরছে। কোন কোন নৌযানের টিকেট কালো বাজারে বিক্রীরও অভিযোগ উঠেছে এর মধ্যে।
অপরদিকে ঈদের আগের ৩দিন ঢাকা-বরিশাল ৬১ এ্যারোনটিক্যাল মাইলের আকাশ পথের বেসরকারী ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সে একটি টিকেট বিক্রী হচ্ছে ১০ হাজার ৪শ টাকায়। নভো এয়ারে ৮ হাজার টাকায়। ঈদের পরেও একই দামে টিকেট বিক্রী করছে এ দুটি বেসরকারী এয়ারলাইন্স। অথচ করোনা মহামারীর আগে ঢাকাÑব্যাংককÑঢাকার ৩ হাজার ১শ কিলোমিটার আকাশ পথে টিকেট বিক্রী হত সাড়ে ১২ হাজার টাকায়। এমনকি রাজধানীর সাথে বরিশাল সেক্টরে বেসরকারী দুটি এয়ারলাইন্স বিদ্যমান ফ্লাইট দ্বিগুনে উন্নীত করার কথা জানালেও রাষ্ট্রীয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর তরফ থেকে এখনো কোন কর্ম পরিকল্পনা নেই। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রস্তাবনা দেয়ার কথা বলেছে বিমান-এর বরিশাল সেলস অফিস। তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এ বিষয়ে কোন ইতিবাচক খবর পাওয়া যায়নি।
আপরদিকে গত মাসের শেষ ভাগ থেকে কার্যকর গ্রীষ্মকালীন সময়সূচীতে বিমান বরিশাল সেক্টরে সকালের পরিবর্তে দুপুরে যে সময়সূচী নির্ধারন করেছে তা যাত্রী বান্ধব নয় বিধায় ইতোমধ্যে রাষ্ট্রীয় এ আকাশ পরিবহন সংস্থার প্রতি যাত্রীদের নেতিবাচক মনোভাব তৈরী করেছে।
এবার শুধু বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল নৌপথেই প্রায় ২৭টি বেসরকারী নৌযান ঈদের আগে ও পড়ে যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেসরকারী সব নৌযানে কেবিন বুকিং নিয়ে টিকেট বিক্রীও প্রায় শেষ করেছে। এমনকি ঈদের আগের ৪ দিন ও পরবর্তী ৫দিনই দুটি করে ট্রিপে যাত্রী পরিবহনের পরিকল্পনা রয়েছে বেসরকারী নৌযান মালিকদের। করোনা মাহামারী পূর্ববর্তি প্রতি বছরই ঈদ ও কোরবানীর সময় রাজধানী সহ সারা দেশ থেকে দশ লক্ষাধীক মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে নিজ ঘরে ফিরতেন প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে। গত দুটি বছর সে সুযোগ না হওয়ায় এবার ঘরমুখি মানুষের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদী পরিবহন ব্যাবসায়ীগন। বরিশাল ছাড়াও পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী থেকেও প্রতিদিন আরো অন্তত ৫০টি নৌযান রাজধানীর সাথে যাত্রী পরিবহন করবে বলে জানা গেছে।
তবে বরিশাল-ঢাকা রুটের অন্যতম বৃহত বেসরকারী যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯’এ সম্প্রতি রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ফলে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও দ্রততম সময়ে নৌযানটি সংস্কার ও পূণর্বাশন করে যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ঈদের আগে নৌযানটি যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এমনকি ইতোমধ্যে বরিশাল ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোর সাথেও ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সড়ক পথে ঘরমুখো যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বেসরকারী বাস মালিকগন। প্রায় প্রতিটি সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানই ডবল ট্রিপে ঈদের আগে ও পড়ে যাত্রী পরিবহনের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। ঈদের আগের আগাম টিকেট বিক্রীও প্রায় শেষ। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাড়তি দামে টিকেট বিক্রীর অভিযোগ উঠেলেও তারা তা অস্বীকার করছে। অপরদিকে সচল বাসের অভাবে এ জরুরী প্রয়োজনের মুহূর্তেও রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থা-বিআরটিসি বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চল থেকে কোন বিশেষ বাস সার্ভিস পরিচালনা করছে না। সংস্থাটির বরিশাল ডিপোতে বিদ্যমান বাসগুলো দিয়েই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানীমুখি সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া ছাড়াও রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, খুলনা ও সাতক্ষীরা সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করা হবে বলে জানা গেছে।
তবে অত্যন্ত করুন অবস্থা রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান, বিআইডবিøউটিসি’র। বিগত দুটি বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি’র অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন ব্যাবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। দুটি পরিচালন ব্যায়বহুল স্ক্রু-হুইল নৌযান সপ্তাহে মাত্র দুদিন করে চালিয়ে গত দু বছরে সংস্থাটি কয়েক কোটি টাকা লোকশান গুনেছে। এমনকি ২০১৪ ও ’১৫ সালে প্রায় ৫৭ কোটি টাকায় সংগ্রহ করা ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের দুটি নৌযানে গত ৭/৮ বছরে সংস্থাটি অন্তত ৫০ কোটি টাকা লোকশান গুনলেও ব্যায় সাশ্রয়ী ও যাত্রী বান্ধব ৪টি প্যাডেল হুইল জাহাজগুলো বসিয়ে রাখছে। এমনকি প্রায় দুবছর পরে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে মেরামত শেষে ‘পিএস মাহসুদ’ মার্চের শেষভাগে ঢাকাÑচাঁদপুরÑবরিশাল হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করলেও পুনরায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সংস্থাটির অপর প্যাডল হুইল জাহাজ ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দেয়ায় তা যাত্রী পরিবহনের বাইরে গত ৫ বছর। ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ নামের অপর দুটি প্যাডেল হুইল যাত্রীবাহী নৌযানও দীর্ঘদিন বসিয়ে রোখ এখন ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া চুড়ান্ত। ১৯৯৬ সালে এসব নৌযান পূণর্বাশন সহ মূল ইঞ্জিন ও প্যাডেল ওভারহলিং-এর পরে আর কোন সংস্কার হয়নি। অথচ এসব প্যাডেল হুইল নৌযান পূণর্বাশন করলে তা আরো অন্তত ২০ বছর নির্বিঘেœ যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারিগড়ি বিশেষজ্ঞগন।
এমনকি আসন্ন ঈদের আগে ৪দিন ও পড়ের ৩দিন ব্যায়বহুল দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান দিয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে দৈনিক যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হয়েছে সংস্থাটির তরফ থেকে। তবে এসব ব্যাপারে সংস্থাটির পরিচালক-বানিজ্য মোঃ আশিকুজ্জামান-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজ দুটি বেসরকারী খাতে ইজারার দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান। নিকট অতীতের দৈনিক রকেট স্টিমার সার্ভিসটির পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারেন নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।