পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তীব্র যানজট ও গরমে স্থবির রাজধানী ঢাকা। যানজট দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চলাচলের জন্য শহরটি কার্যত অচল হয়ে পড়ছে। দিন যত যাচ্ছে যানজটের তীব্রতা তত বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে না। তীব্র যানজট ও গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী দুঃসহ যন্ত্রণা যেন ভাগ্যের লিখন হিসেবেই মেনে নিয়েছেন। যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পথচারীরা। রোজা রেখে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে, ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী এবং নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্যবসায়ী-ছাত্রদের মুখোমুখি অবস্থান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের কারণে আশাপাশের সড়কে থাকা যানবাহন আটকে যাওয়ায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো রাজধানীতে প্রভাব ফেলেছে। এর প্রভাব পড়েছে আশপাশের এলাকাগুলোতে। মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এই সংঘর্ষের জেরে কোনো কোনো সড়কে গণপরিবহন সংখ্যা কমে গেছে। অনেকে পায়ে হেঁটে বা অন্য কোনো উপায়ে গন্থব্যে যাচ্ছেন। নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকা দিয়েও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর এই চাপ গিয়ে পড়ছে বিজয় সরণি এলাকাসহ অন্য সড়কেও। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে কোন কোন জায়গায় আধা ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজারের দিকেও প্রায় একই অবস্থা দেখা গেছে। একে তো তীব্র গরম, এর ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থাকায় চরম অস্থির হয়ে পড়েন যাত্রীরা। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ সর্বত্র যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত এবং নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত রাস্তাটি বন্ধ থাকায় নিউমার্কেট ট্রাফিক জোন ডাইভারশনের ব্যবস্থা করেছে। ডাইভারশনে সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত হয়ে আজিমপুরগামী গাড়িগুলোকে সায়েন্সল্যাব-কাঁটাবন-নিউমার্কেট থানা-পলাশী হয়ে আজিমপুর যেতে হয়। একইভাবে আজিমপুর থেকে গাড়িগুলোকে বের হতে হয়। যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী বিমানবন্দর এলাকায়ও সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। রামপুরা রুটে চলাচলরত বাসগুলো নির্দিষ্ট স্থানে না দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপর থেকে যাত্রী পরিবহন করতেও দেখা গেছে। একারণে পেছনের বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকার কারণে রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট।
মহাখালী এলাকায় শিক্ষার্থী শরিফুল আলম কিরন বলেন, বিমানবন্দর থেকে মালিবাগ যাবো। রোজার মধ্যে গরমে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বাস যেন চলছেই না। প্রথম দিকে যখন বাসে উঠেছি তখন একটু একটু চলছে। কিন্তু এখন মহাখালী এসে একেবারেই বসে আছি। গরমের জন্য বাস থেকে নামছি না। অনেকে পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। বাসের চালকদেরও বলতে পারছি না। সামনে রাস্তার কোন অংশেই খালি নেই।
রামপুরা এলাকায় কাইয়ুম নামের এক যাত্রী বলেন, দিনের পর দিন যানজটের প্রভাব বাড়ছেই। কোনভাবেই কমছে না। আমরা যারা নিয়মিত বাসে যাতায়াত করি তারা বলতে পারবো যানজটে পড়ে থাকলে কত কষ্ট হয়। আর রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেতো কোন কিছুই ঠিকমতো করতে পানিনি যানজটের কারণে। বাস তো চলছেই না। আর বাসে বসে থাকলেও কষ্ট হচ্ছে।
গুলিস্তান এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে আমরা কজ করে যাচ্ছি। অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি উল্টো পথে এসে যানজট সৃষ্টি করে। আবার যাত্রীবাহী বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক গাড়ির বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। যাতায়াতের জন্য মানসম্পন্ন বাসের মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যানজট কমাতে সড়কের পাশাপাশি নৌপথের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদাবাজির কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। রাজধানীর সকল সড়কের ফুটপাথ, রাস্তা হকার ও অবৈধ পার্কিং মুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিস্কার রাখা ও ছোট যানবাহন বিশেষ করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বলেছেন, রাজধানীর অসহনীয় যানজট নিরসনে আগামী দিনগুলোর জন্য বিশেষ কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে ঢাকার যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ঢাকা শহরে অনেকগুলো উন্নয়নকাজ চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারগুলোর কারণে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এগুলোও যানজটের একটি বড় কারণ। এছাড়া দীর্ঘদিন পর কোভিড-১৯ মহামারি কাটিয়ে সবকিছু খুলেছে। আবার ঈদও এসে গেছে। সবাই এখন মার্কেটমুখী। ঘর থেকে বের হয়ে সবাই মার্কেট-শপিংসেন্টারগুলোর দিকে যাতায়াত করছেন। এসব কারণেও বাড়তি যানজট হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ বিভাগ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আগামী সাতদিনে তারা কী করবেন, এর একটি কর্মপদ্ধতিও বের করেছেন। আশা করি দু-একদিনের মধ্যে যানজট কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে যানজট নিরসনে পর্যায়ক্রমে ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে, এটিও আমাদের সিদ্ধান্তে এসেছিল। আমাদের বড় বড় শিল্পগুলো একসঙ্গে শ্রমিকদের ছুটি না দিয়ে পর্যায়ক্রমে কীভাবে দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তার জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। ঈদ উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশের টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, উন্নয়নের প্রভাবেই সারাদেশে যানজট হয়। আমাদের এত প্রবৃদ্ধি যে, এর প্রভাব সব জায়গায় পড়েছে। আবহমান কাল থেকেই ঈদের সময় ভিড় হয়। যখন মানুষ হেঁটে বাড়িতে যেত তখনও এরকম অবস্থা ছিল। যখন খেয়া পার হতো, তখনও এরকম ছিল। আমি ৪০ বছর আগে যখন চট্টগ্রামের ডিসি ছিলাম, তখন চার ঘণ্টায় যেতাম।
তিনি বলেন, তখন শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী দিয়ে দুটি ফেরি পার হয়ে যেতাম। এখন সেই জায়গায় স্মুথ রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সময় বেশি লাগছে। ৪০ বছর আগে সরু রাস্তা দিয়ে যেতাম। আর এখন বিশাল সড়ক থাকার পরও তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হলো বেশি গাড়ি-ঘোড়া রাস্তায় উঠেছে। কারণ হলো প্রবৃদ্ধি। কারণটা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন। আমাদের মেট্রোরেল যখন হয়ে যাবে, তখন যানজট অনেকটা কমে যাবে।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।