Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি শুরু হচ্ছে , মাথা গুনে জনশুমারি এটাই শেষ- পরিকল্পনামন্ত্রী

১৫ থেকে ২১ জুন দেশব্যাপী এ কার্যক্রম চলবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ৬:২১ পিএম | আপডেট : ৭:০৩ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, দশ বছর পর পর শুমারির জন্য অপেক্ষায় না থেকে প্রতি বছর জনসংখ্যার হালনাগাদ তথ্য চাই। আর তাই এবারের জনশুমারিই মাথা গোনার মাধ্যমে করা শেষ জনশুমারি।

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ সামনে রেখে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বুধবার (১৩ এপ্রিল) তিনি এ কথা বলেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, শুমারি প্রকল্পের পরিচালক দিলদার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ড. দীপঙ্কর রায়।

স্বাধীন বাংলাদেশে এই প্রথম ডিজিটালি শুমারি হচ্ছে। শুমারিতে দেশের সকল মানুষ যাতে তাদের তথ্য দিতে পারেন সে জন্য প্রচার-প্রচারণায় অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই স্বল্প সময়ে সঠিক তথ্য উঠে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন দেশব্যাপী জনগণকে গণণা করা হবে। এজন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী মাঠ পর্যায়ে একযোগে সাতদিন তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যদিও এই শুমারি শুরুর কথা ছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, তবে করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। শুমারির কাজ পরিচালনা করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো- বিবিএস।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, শুমারি শুরু করতে আমরা দেড় বছর পিছিয়ে রয়েছি। এর সঙ্গত কারণও ছিল। প্রথমে করোনার কারণে এবং পরে ক্রয় নিয়ে কিছু জটিলতায় এটা পিছিয়েছে। তবে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে ক্রয় থেকে সার্বিক কার্যক্রম করা হয়েছে। নিজেও বিভিন্ন দফতরে গিয়েছি। কিছুটা দেরি হলেও ডিজিটাল মাধ্যমে শুমারির কার্যক্রম হওয়ায় বেশ নিখুঁত হবে, বেশি বিশুদ্ধ হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ৫ বছর বা স্বল্প সময়ে জনশুমারি সম্পন্ন করে। আমরা কেন ১০ বছর অপেক্ষা করব, কেন সময়মতো প্রধানমন্ত্রী দেশের জনসংখ্যার সঠিক তথ্য পাবেন না। আমাদের হাতের কাছে নানা টেকনোলজি আছে। স্বল্প সময়ে জনশুমারির জন্য সমসাময়িক এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। আমার মনে হয়, ১০ বছর অন্তর অন্তর এইভাবে মাথাগুণার আয়োজনের দরকার নেই, এবারই শেষ। দেশ এগিয়ে গেছে, জ্ঞান বিজ্ঞান আরও প্রসারিত হয়েছে, সংস্কৃতি বাড়ছে, স্মার্টফোনের সংখ্যা প্রায় সর্বোত্র চলে গেছে। ফলে কেন ১০ বছরের পরিবর্তে স্বল্প সময়ে শুমারি করতে পারব না? শুমারি কাজ রিয়েল টাইমে কর, অনেক দেশ এগুলো করছে। দশ বছর পরে মহাযজ্ঞ করে না গিয়ে টাইম টু টাইম জনশুমারি করতে হবে।

এম এ মান্নান বলেন, পরিসংখ্যান বিভাগকে বলেছি অবাধ তথ্যপ্রবাহ সৃষ্টি করতে হবে। আমরা এমন কোনো ক্লাসিফাইড তথ্য ডিল করছি না যে সবার কাছে শেয়ার করা যাবে না। সাংবাদিকেরা সব সময় শুমারি নিয়ে সচেতন থাকবে। অন্যদিকে আমরাও সঠিক উত্তর দিতে প্রস্তুত থাকব।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এবারের জনশুমারি অনুষ্ঠিত হবে ডিজিটালি। দেশ ডিজিটাল হয়েছে এটাই প্রমাণ। জনশুমারি ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে জনসংখ্যা রেজিষ্টার করা হবে। যাতে ১০ বছর নয়, প্রতি ৫ বছর অন্তর এই রেজিষ্টার ব্যবহার করে তথ্য হালনাগাদ করা যায়।আমার বিশ্বাস আমরা সফল হতে পারব।

শাহনাজ আরেফিন বলেন, সবার সহযোগিতায় একটা সঠিক, স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ ডিজিটাল শুমারি সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করি। এর মাধ্যমে দেশে কি পরিমান বিদেশী মানুষ কাজ করে সেই তথ্যও উঠে আসবে। একই সঙ্গে জিআইএস ম্যাপ ব্যবহার করে নির্ভূল শুমারি করতে চাই।

তাজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে সঠিক তথ্যেও বিকল্প নেই। তাই সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে জনশুমারিটি করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

কর্মশালার মূল প্রবন্ধে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ১৫-২১ জুনকে বলা হয় শুমারি সপ্তাহ। ১৪ জুন রাত ১২টাকে শুমারি রেফারেন্স পয়েন্ট বা সময় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আগামী ১৪ জুন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সময় ও যুগের চাহিদা বিবেচনা করে সময়োপযোগী এবং নির্ভূল তথ্য সংগ্রহের জন্য এবারই প্রথম ডিজিটাল শুমারি পরিচালনা করা হবে। এই শুমারিতে জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) বেইজ ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সিএপিআই (কম্পিউটার এ্যাসিসটেড পার্সোনাল ইন্টারভিউয়িং) পদ্ধতিতে ডিজিটাল ডিভাইস ‘ট্যাবলেট’ এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কর্মশালায় জানানো হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানাবেষ্টিত অঞ্চলের সব গৃহ, সাধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক ও বস্তি খানা (পরিবার), ভাসমান জনগোষ্ঠী, খানায় বসবাসরত সকল সদস্যের জনমিতিক ও আর্থ-সামাজিক তথ্য তুলে আনা হবে। যেমনÑ গৃহের সংখ্যা ও ধরন, বাসস্থানের মালিকানা, খাবার পানির প্রধান উৎস, টয়লেটের সুবিধা, বিদ্যুৎ সুবিধা, রান্নার জ¦ালানির প্রধান উৎস, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, বৈদেশিক রেমিট্যান্স, খানা সদস্যের বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, প্রতিবন্ধিতা, শিক্ষা, কর্ম, প্রশিক্ষণ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, জাতীয়তা, নিজ জেলা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেটের মাধ্যমে একযোগে দেশের সকল খানা, গৃহ ও ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হবে। মাঠপর্যায়ে মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন, ২০২২ সালে পরিচালিত হবে। এই সময়ে সাময়িকভাবে নিযুক্ত তথ্যসংগ্রহকারী (প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার) যারা স্থানীয় শিক্ষিত যুবক, যুব মহিলা, তারা নির্ধারিত গণনা এলাকার তথ্য ট্যাবলেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। ডিজিটাল এ শুমারি বাস্তবায়ন সারাদেশে একযোগে তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত হবে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট। এর পাশাপাশি আইটি সাপোর্ট যেমনÑ সিএ পিআই এ্যাপ, ক্লাউড সার্ভার, ওরাকল এক্সডাটা সার্ভার, লোড ব্যালেন্সার, ১০জিবিপিএস ইন্টারনেট, ফাইবার অপটিক্যার ক্যাবল ইত্যাদি প্রস্তুত ও ইনস্টল করার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাবলেটগুলো এমডিএম (মোবাইল ডিভাইস ম্যানেজমেন্ট) সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে নিযন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা তথ্য সংরক্ষণ এবং নিরাপত্ত নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানী লিমিটেড (বিডিসিসিএল) এর টিআর আইভি সিকিউরিটি সমৃদ্ধ ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা হবে। মাঠ পর্যায় থেকে বিডিসিসিএল হয়ে বিবিএস সার্ভারে আসার আগে পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা অবস্থায় থাকবে, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করা হচ্ছে। শুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমের অগ্রগতি মনিটর করার জন্য শুমারি পর্যবেক্ষণ অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দৈনন্দিন তথ্য সংগ্রহের পরিমাণ যেকোন পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করা যাবে যা নিভূল তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ফলে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ সহজ হবে এবং স্বল্পতম সময়ে শুমারির রিপোর্ট প্রকাশ সম্ভব হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পনামন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ