Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

লিজ নেয়া জমি দেখিয়ে তিনশ’ কোটি টাকা ঋণ

প্রতারণা করে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ, অভিযুক্ত জিয়াউদ্দিন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে-বিদেশে ৪২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তার
২০০৯ সালে প্রবাসে অবস্থানকালে টাইলস ব্যবসায় হাতেখড়ি ঘটে জিয়া উদ্দিনের। এরপর দেশে এসে সিরামিক কোম্পানি গড়েন। প্রতারণার মাধ্যমে সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শত কোটির অধিক টাকা আত্মসাৎ এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগে সোমবার রাতে জিয়া উদ্দিন জামানকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সিরামিক কোম্পানিসহ নামসর্বস্ব ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পর সেই টাকায় প্রায় ১৩০ বিঘা জমি লিজ নেন জিয়া উদ্দিন। সেই জমি দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৩০০ কোটি টাকার ঋণ। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ৩৯টি ও বিদেশের তিনটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার।

গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন থানায় ১৮টির বেশি মামলা রয়েছে জিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি নিজেকে ১২টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডি দাবি করেন। এ ধরনের তথ্য সম্বলিত বিজনেস কার্ডও তৈরি করেছেন। এছাড়াও তার অস্ট্রেলিয়া, চীন, হংকং, ওমান ও দুবাইয়ে বিবিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে বলে প্রচারণা চালান, যার সবই মিথ্যা। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তিকে কৌশলে প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িক পার্টনার বানানোর নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর অভিযানে উত্তরা থেকে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া উদ্দিন জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৭টি চেক বই, ছয় বোতল বিদেশি মদ, ৯৯ হাজার টাকার জালনোট, ছয় হাজার জাল ইউএস ডলার, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ফোসান সিরামিক প্ল্যান্ট এবং জিয়া টাওয়ারের কাঠামোগত ভবিষ্যত পরিকল্পনা, ওমানে অর্থ পাচারের তথ্যাদি, প্রতারণামূলক কার্যকলাপের জন্য ‘জাপানে তৈরি’ স্টিকার, পাঁচ ধরনের আইডি এবং বিজনেস কার্ড, দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০০ কোটি টাকা নেয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সংক্রান্ত নথিপত্র জব্দ করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রতারণায় হাতেখড়ি তার। ২০০৯ সালে প্রবাসে থাকা অবস্থায় টাইলস ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারণা পান। বিদেশি দুটি দেশের মাফিয়াদের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা এক দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করেন। এতে অর্থপাচার চক্রের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়। ২০১৪ সাল থেকে ফোসান সিরামিক, হাইটেক সিরামিক লি. এর নামে আমদানির ক্ষেত্রে ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে টাইলস আমদানি দেখাতেন। পরবর্তীতে ওইসব দেশে ৬ শতাংশ কোম্পানি ও ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ নিজে গ্রহণ করতেন। আর এভাবেই ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, প্রতারণার কৌশল হিসেবে জিয়া ব্যবসায়ীদের দামি এবং আকর্ষণীয় উপহার পাঠাতেন। পরবর্তীতে তাদেরকে বিদেশে তার কথিত মালিকানাধীন টাইলস ফ্যাক্টরিতে ভ্রমণের ব্যবস্থা করতেন। ফ্যাক্টরির অফিসের পরিদর্শনযোগ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থ প্রদান করতেন। তিনি শিগগিরই বাংলাদেশে এ ধরনের ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে যাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীদের প্রলুব্ধ করতেন। প্রলুব্ধ করে ব্যবসায়িদের বিনিয়োগের টাকা আত্মসাৎ করেন। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে বলে প্রচার চালাতেন জিয়া। বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে কয়েকশ একর জমি লিজ নিয়ে নিজের বলে প্রচার চালাতেন। টাইলসসহ বেশকিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে- এরকম ধারণা দিতে সাময়িক দোকান ভাড়া করে প্রদর্শন করতেন। পরবর্তীতে তিনি দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের সেখানে পরিদর্শন করিয়ে বিনিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে ফোসান সিরামিক লি. স্যানিটারি প্যাড, হাইলেডি স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ নানাবিধ পণ্যের আকর্ষণীয় টিভিসির মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে প্রতারিত করতেন। ব্যবসায়িক অংশীদার বানানোর লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছে কয়েকশ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ব্যবসায়িক অংশীদারির প্রস্তাব দিয়ে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মূলত ভুয়া আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, ভুয়া কোম্পানির ওয়েবসাইট, বিদেশে সাজানো ফ্যাক্টরি এবং অফিস পরিদর্শন, সাজানো বিপণন কেন্দ্র এবং কৃষি খামার দেখে ব্যবসায়ীরা তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হতেন। জিয়া উদ্দিন চারটি ব্রান্ডের সিরামিকস ব্যবসার আড়ালে বিভিন্নভাবে মানুষদের প্রতারিত করেছেন। প্রতারণার অর্থ থেকে প্রায় ১৩০ বিঘা জমি লিজ নেন। যার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণও বাগিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, তার (জিয়া) বাবা একটি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ চাকরি করতেন। পারিবারিকভাবে খুব অর্থবিত্ত ছিল না। জিয়া ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়া যান ডিপ্লোমা করতে। সেখানেই তার প্রতারণার হাতেখড়ি। জাল টাকা ও ডলার সম্পর্কে খন্দকার মঈন বলেন, প্রতারণার কাজে তিনি জাল টাকা ও ডলার ব্যবহার করতেন। জাল টাকা তৈরি করতেন কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকারীরা নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখবেন।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ