Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংস্কৃতির জনপদ কুষ্টিয়ায় উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমি ভবন

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রির্পোটার | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৩৮ পিএম

সংস্কৃতির জনপদ কুষ্টিয়ায় আজ (বুধবার) উদ্ধোধন হতে যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকলা একাডেমি ভবন। এর মধ্য দিয়েই এ জেলায় সাংস্কৃতিক চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বেলা ১১টায় গণভবন থেকে উদ্ধোধন করবেন এটি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরচালক লিয়াকত আলী লাকী, উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। প্রধানমন্ত্রী একই সাথে জেলায় নবনির্মিত শিল্পকলা উদ্ধোধন করবেন।

এক একর জায়গার ওপর প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করেছে। চারতলা বিশিষ্ট একাডেমিতে রয়েছে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স। রয়েছে অত্যাধুনিক তিনটি অডিটোরিয়াম। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ফিক্স অডিটোরিয়াম, মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম, ৫০ আসনের একটি কনফারেন্স রুম এবং মুক্ত মঞ্চ। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একাডেমির কর্মকর্তারা জানান ঢাকার পরেই কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান।

নির্মাণের প্রতিটি মুহুর্তেই এটির তত্বাবধান করেছেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের (সদর) সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। রাষ্ট্রীয় কাজে বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।

হানিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই শুভক্ষণে কুষ্টিয়া বাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন কুষ্টিয়া বাসীর আরো একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি কুষ্টিয়াবাসীকে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে এসে উন্নয়নের রাজনীতির প্রতি সমর্থন জানানোর আহবান জানান।

কুষ্টিয়া অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন জেলাগুলির একটি। হেমিলটনস গেজেটিয়ারে বর্ণিত এই পাললিক ভূ-খন্ডটি সময়ের পরিক্রমায় অতিক্রম করছে ৭৫ বছরের নানামুখী ইতিহাস ; বয়ে নিয়ে চলেছে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। বিভিন্নভাবে সর্ম্পকযুক্ত এসব বিষয়াবলী কুষ্টিয়াকে দিয়েছে ইতিহাসের একটি অত্যুজ্জল ঐতিহ্যগত মাত্রা যেখানে জেলাটির রয়েছে নানামুখী অবদান যার মধ্যে দেশের মুল ধারার সংস্কৃতির ধীর-স্থির ও সুস্থ্য বিকাশ অন্যতম। বহুকাল পূর্ব থেকেই বাংলাদেশের মুল সংস্কৃতির ধারাকে নানাভাবে প্রতিনিধিত্ব, প্রভাবিত ও সমৃদ্ধ করে আসছে এই জেলা। ইতোমধ্যে জেলাটি দেশ ও দেশের বাইরে ‘সংস্কৃতির জনপদ (বহুল ব্যবহৃত শব্দ সংস্কৃতির রাজধানী) নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। আরো মুল্যবান যে বিষয়টি তা হলো দেশের শুদ্ধ ভাষাতাত্বিক যে লোকজ ঐতিহ্য সেই মুলধারায় কুষ্টিয়ার অবদান সর্বকালের জন্য স্বীকৃত। জেলাটি তার শাখায় আরও যে গৌরবময় পালক বহন করে তা হলো এটি দেশের দারিদ্র্যসীমার বাইরে রয়েছে।

কুষ্টিয়া বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান নির্মাতা রবীন্দ্রনাথের ‘যৌবন ও প্রৌঢ় বয়সের সাহিত্য রস-সাধনার তীর্থস্থান’, সুসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘বাংলাদেশের হৃদয়’, লালন শাহের ‘আরশিনগর’। ঊনবিংশ শতাব্দিতে গ্রামীণ জাগৃতির জনক লেখক-সম্পাদক-সমাজসংস্কারক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারকে ঘিরে ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, পল্লীচিত্রকর ও গোয়েন্দা কাহিনির লেখক দীনেন্দ্রকুমার রায়, তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব, ভ্রমণকাহিনির প্রবাদপুরুষ জলধর সেন প্রমুখকে নিয়ে ‘কাঙালমন্ডলী’র যে আসর জমেছিল, সেখান থেকে আধুনিক সাহিত্য-সংগীত তথা বাঙালি সংস্কৃতির গতিপ্রকৃতি সুনির্দিষ্ট হয়। সমসময়ে ছিলেন ললিত বাংলা গদ্য ও বিদ্রোহাত্মক নাটকের দিকপাল মীর মশাররফ হোসেন। পরবর্তীকালে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি মুসলিম গীতিকারদের পথিকৃৎদের একজন দাদ আলী।বাঙালি মুসলিম মহিলার মধ্যে প্রথম সনেট ও আধুনিক আঙ্গিকের কবিতা রচয়িতা মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার পৈতৃকনিবাসও এই কুষ্টিয়া। বাংলা সাহিত্য সাংস্কৃতিক জগতের এমন অনেকের নামই উঠে আসবে এমনভাবে যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই কুষ্টিয়ায়। স্বর্ণপ্রসবিনী এই অঞ্চলে এখনও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় কৃতী ব্যক্তিত্ব জন্ম নিচ্ছেন, বহমান রয়েছে বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মূলধারাটি। ইউনেস্কো যে বাউল সংগীতকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করেছে তার কেন্দ্রভূমিও কুষ্টিয়া। গগন হরকরার রচিত এই মাটির গানের সুরেই তো রবীন্দ্রনাথের বাণী বসানো সংগীতটি আজ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। সর্বোপরি এ-অঞ্চলের কথ্যভাষা ‘আ মরি বাংলা ভাষা’র সবচেয়ে স্বাদু স্বর হিসেবে স্বীকৃত এবং প্রমিত রূপ হিসেবে গৃহীত। এসব কারণে পূর্ব থেকে দেশের সব অঞ্চলের মানুষের কাছে কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত।

কুষ্টিয়ায় এ ধরনের উচ্চ মার্গের একটি শিল্পকলা একাডেমি স্থাপনকে কুষ্টিয়ার জন্য ঐতিহাসিক একটি ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন অনেকে।

কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম কুষ্টিয়াবাসীকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করেন এ ধরনের একটি অত্যাধুনিক মানের শিল্পকলা একাডেমি ভবনের জন্য। তিনি বলেন কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম একাডেমি ভবন। তিনি বলেন কুষ্টিয়ার শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন এই শিল্পকলার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে এর মধ্যে। তিনি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের (সদর) সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন এটা অত্যন্ত শুভ একটি ক্ষণ। এটি কুষ্টিয়ার শিল্প-সংস্কৃতির জন্য বর্তমান সরকারের একটি বড় ম্যুল্যায়ন। তিনি কুষ্টিয়ার সংস্কৃতির আরো ধীর-স্থির বিকাশ ঘটবে বলে প্রত্যাশা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ