বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মসজিদের বারান্দায় সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন মুসল্লিরা। করছেন জিকির-আজকার, দোয়া, মোনাজাত। খাদেমরা তাদের সামনে রেখে যাচ্ছেন ইফতার সামগ্রি। সাইরেন বাজতেই সবাই মুখে তুলে নেন খেজুর, শরবত। এক কাতারে বসে এভাবে ইফতার সারেন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মুসল্লি।
এমন দৃশ্য নগরীর ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের। মাহে রমজানের প্রথম দিন থেকে এ মসজিদে আয়োজন করা হচ্ছে সম্মিলিত ইফতারের। আয়োজকরা জানান, শুরুর দিকে প্রতিদিন দেড় হাজার রোজাদার ইফতার করতেন। এখন করছেন দুই হাজারের মত। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা আড়াই থেকে তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ইফতারের জন্য মুসল্লিদের সারি বারান্দা ছাড়িয়ে এখন মসজিদ পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে। এ মসজিদের মত নগরীর ঐতিহ্যবাহী জমিয়তুল ফালাহ, চকবাজারের প্রাচীন অলিখাঁ জামে মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, ধনিয়ালাপাড়া বায়তুশ শরফ জামে মসজিদসহ নগরীর বেশিরভাগ মসজিদে প্রতিবারের মত এবারও মুসল্লিদের জন্য ইফতারির আয়োজন করা হয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে এ আয়োজনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটলেও এবার চিরচেনা রূপে এসব মসজিদে ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি সম্মিলিত ইফতারে সামিল হচ্ছেন শত শত মুসল্লি।
মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, ধনী গরীব নির্বিশেষে নানা শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ ইফতারে সামিল হচ্ছেন। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতির পাশে বসে ইফতার সারছেন ফুটপাতের হকার, দিনমজুর, ভিক্ষুক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, আলেম-ওলামা, শ্রমজীবী এবং চাকরিজীবীরা। সবার জন্য আয়োজনও সমান। অনেকে এ ইফতারিতে সামিল হতে দূর দূরান্ত থেকে আসছেন। বাসা বাড়ির বিলাসী আয়োজন ফেলে সওয়াবের আশায় ছুটছেন মসজিদের ইফতার আয়োজনে।
আছরের জামাতের পর মসজিদের বারান্দায় কাতারবন্দি হয়ে বসে যান মুসল্লিরা। এ সময় সেখানে চলে মাহে রমজানের ফজিলত নিয়ে আলোচনা। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে মুসল্লিরা মশগুল হল তাসবিহ-তাহলীলে। মহান আল্লাহর দরবারে রহমত কামনা করে করা হয় মোনাজাত। এরপর ইফতারের সময় হতেই একসাথে সবাই ইফতার করা শুরু করেন। এক অন্যরকম দৃশ্য। মসজিদ কমিটির কর্মকর্তারা জানান, কমিটির ব্যবস্থাপনায় মসজিদগুলোতে ইফতারির আয়োজন চলে। মহানগরীর ধনাঢ্য ব্যক্তি, শিল্প উদ্যোক্তারা ইফতারির জন্য অকাতরে দান, খয়রাত করেন। অনেকে নীরবেই ইফতারির জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে যান। কেউ আবার ইফতার তৈরির বিভিন্ন সামগ্রি সরবরাহ করেন। অনেকে বাসা বাড়িতে তৈরি ইফতার নিয়ে মসজিদের ইফতারে সামিল হন। মুসল্লিদের অনেকে ইফতার তৈরি ও বিলি বণ্টনে সহায়তা করেন।
আয়োজকরা জানান, ইফতার করার সামর্থ্য নেই এমন অনেকেই মসজিদে ইফতার করতে আসেন। তবে বেশিরভাগই আসেন অধিক সওয়াবের আশায়। পবিত্র মসজিদে বসে ইফতার আগমুহূর্তে ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি সকলের সাথে মিলে ইফতার করার আনন্দই যেন আলাদা। আর এজন্য অনেকে বাসা থেকে তৈরি ইফতার নিয়ে সামিল হন এ আয়োজনে। অনেক মুসল্লি জোহরের পর থেকেই মসজিদে অবস্থান করেন। কোরআন তেলাওয়াত করে সময় কাটান। আছরের নামাজের পর কিছুটা সময় দোয়া দরূদ পড়ে ইফতারির আয়োজনে হাত মেলান। ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ। এরপর এশা এবং তারাবির নামাজ শেষে বাড়ি ফেরেন অনেকে। ইফতারির আয়োজনের ফলে নগরীর বেশিরভাগ মসজিদ এখন সরগরম।
বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে পবিত্র মাহে রমজানে ভিন্ন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মসজিদে সম্মিলিত ইফতারির আয়োজন এতে যোগ করে এক নতুন মাত্রা। এমন আয়োজনের ফলে এক কাতারে বসে ইফতার করার সওয়াব যেমন মিলছে তেমনি মানুষে মানুষে সংযোগও বাড়ছে। পাড়া মহল্লার সবাই মিলে একসাথে জামাতে নামাজ আদায় এবং ইফতার সারার অন্যরকম এক আনন্দ। ধনী গরীব এক কাতারে বসে ইফতার সারছেন। ইসলামী সংস্কৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য্য ফুটে উঠছে তাতে।
চট্টগ্রামে পবিত্র রমজান মাসে প্রতিবেশীদের বাসা বাড়িতে ইফতার সামগ্রি পাঠানোর পাশাপাশি মসজিদেও ইফতার পাঠানোর রেওয়াজ অনেক পুরনো। এসব ইফতার সামগ্রি বিলি বণ্টন হয় মুসল্লিদের মাঝে। সম্মিলিত ইফতারের আয়োজনে সামিল হতে পেরে খুশি অনেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।