Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আলুতে স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের কৃষক

রফতানি হচ্ছে ১০ দেশে

হালিম আনছারী, রংপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

রংপুরে আলুর ফলন ভালো এবং বিদেশে রফতানি শুরু হওয়ায় আলু চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। আলুতেই তারা এখন স্বপ্ন দেখছেন। অথচ কিছুদিন আগেও আলু নিয়ে মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ছিলেন এ অঞ্চলের চাষিরা। ফলন ভালো এবং বাজারমূল্য ভালো থাকায় আলু নিয়ে সবাই এখন ফুরফুরে মেজাজে ক্ষেত থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মওসুমের মাঝামাঝি সময়ে এ অঞ্চলে আগাম ভারি বৃষ্টি হওয়ায় অনেক আলু ক্ষেতে পানি জমে আলুর বেশ ক্ষতি হয়। এ সময় আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এ অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু পরবর্তীতে মওসুমের শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং সঠিক পরিচর্যা করায় সর্বত্রই আলুর বাম্পার ফলন হয়। পাশাপাশি মওসুমের শুরুতে নিম্নমুখী বাজারমূল্য অনেকটা উর্দ্ধমুখী হয়ে উঠে। এতে করে আলু চাষিগণ খুশি হয়ে যায়। এরই মাঝে আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে সরকারের উদ্যোগ কৃষক এবং রফতানিকারকদের আশান্বিত করে তোলে। গত ১৫ মার্চ পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন থেকে এবং ১৯ মার্চ মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলু রফতানি শুরু হয়। মিঠাপুকুরে আলু রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি কর্মসূচির উপদেষ্টা মাহমুদ হোসেন, বিএডিসির সদস্য পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। উদ্বোধনী দিনে ৪ ট্রাক আলু রফতানির উদ্দেশে রংপুর ছেড়ে যায়। নিজের জমির উৎপাদিত আলু বিদেশে রফতানির সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি হয়ে পড়েন এ অঞ্চলের কৃষকরা। সবাই নতুন উদ্যমে আলুর বাড়তি পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে এ অঞ্চলের সর্বত্রই আলু তোলার ধুম পড়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই আলু তোলা শেষ হলে পুরোদমে চলবে বস্তাবন্দি আলুর ষ্টোর যাত্রা এবং সেসাথে বিদেশযাত্রা।
জানা গেছে, জেলার পীরগাছা উপজেলা থেকে গত বছর সাড়ে ৬শ’ মেট্রিক টন আলু বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। এ বছর এই টার্গেট বাড়িয়ে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। এ উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকই রফতানিযোগ্য আলু উৎপাদন করেছেন। সান্তা, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, কুমারিকা, কুম্ভিকা, দেশি সাদা এবং শিল আলুসহ বিভিন্ন জাতের আলু উৎপাদিত হয়েছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, আলুচাষিরা শ্রমিক দিয়ে অতি যত্নে আলু তুলে উন্নতমানের বস্তায় ভরিয়ে রাখছেন। বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে আলু রফতানিতে আশার আলো দেখছেন কৃষকেরা। এছাড়া স্থানীয় বাজারেও দাম বেশ ভালো মিলছে। বর্তমানে জমি থেকেই প্রতি কেজি আলু ১২-১৬ টাকা দরে বিক্রি করছেন চাষিরা। যা গত বছর ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত ছিল। বিভিন্ন স্থানে আলু চাষিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতি বছর আলুর ফলন ভালো হওয়ায় আলুর ন্যায্য মূল্য তারা পান না। এ অঞ্চলের আলু সারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি হলে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন বলে আশাবাদি। তাদের মতে, রফতানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি চুক্তি হলে আলুর ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাবে নিশ্চিত।
কৃষি বিভাগের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতের আলুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে অনেক জাতের আলু চাষে সহায়তা দিচ্ছে সরকারের কৃষি বিভাগ। এবার রংপুর জেলার ৪শ’ আলুচাষিকে উন্নত আলু চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সঙ্গে উন্নত জাতের আলু বীজও সরবরাহ করা হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানির অর্ডার পাওয়া গেছে। সৌদিআরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে সাদা আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার কথা বিবেচনা করে সান্তা, ডায়মন্ড, কুমারিকা, গ্রানুলা, কুম্বিকা এলুয়েট, এস্টারিকস, সানসাইনসহ বিভিন্ন জাতের সাদা আলু উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের আলু বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সাদা আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও পাশের নেপাল, শ্রীলংকা ও ভূটানে লাল আলুর চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে উন্নত জাতের লাল আলুর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি রাশিয়াও বাংলাদেশ থেকে আলু কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অচিরেই এ ব্যাপারে চুক্তি হবে। এটা হলে রংপুর থেকেই প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানি করা সম্ভব হবে।
রংপুর বিএডিসি’র উপ-পরিচালক আব্দুল হাই জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে রংপুর ছাড়াও নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন আলু রফতানি করা হয়েছে। এছাড়া বিএডিসিও এ বছর আলু রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর কিছুদিন পরে আলু উত্তোলন শেষ হলে তারা সরাসরি বিদেশে পাঠাবে। রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও জয়পুরহাট জেলা থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বিদেশে গ্রানুলা, বারি-৭, ইউবিটা জাতীয় আলু রফতানি করতে শুরু করেছেন। বিএডিসি এবার মলয়েশিয়ায় আলু পাঠাবে। এ লক্ষ্যে অন্যন্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। গত বছর বিএডিসি বিদেশে আলু পাঠিয়েছিল। আলুর মান ভালো থাকায় এবারও বিদেশের বাজারে রংপুরের আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর জেলায় রেকর্ড ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। সূত্র মতে, রংপুরে যে আলু চাষ হয়, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে এ আলুর চাহিদা তেমন নেই। কারণ এখানে উৎপাদিত আলুর বেশির ভাগ আকারে ছোট। এ কারণে বিএডিসি উন্নত জাতের বীজ সরবারহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বর্তমানে যেভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে এ অঞ্চলের আলু কেনার চাহিদা আসছে, তাতে করে এবার রংপুর থেকে আলু রফতানির পরিমাণ ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি দেশে রংপুরের আলু রফতানি হচ্ছে।
এভাবে অন্যান্য ফসলও বিদেশে রফতানি হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ