Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘দুই কৃষক নলকূপের সামনে আত্মহত্যা করেন নি’ ক্ষোভ বেড়েই চলেছে।

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ৪:৩৬ পিএম

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার পর গ্রেপ্তার গভীর নলকূপের চাকরিচ্যুত অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, ওই দুই কৃষক তাঁর নলকূপের সামনে আত্মহত্যা করেননি।

কারাফটকে করা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এ কথা বলেন তিনি। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান বলছে, নিজের নলকূপের সামনে থেকে অভিনাথের মরদেহ ভ্যানে করে তিনিই বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন।

গত ৬ ও ৭ এপ্রিল কারাফটকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন সাখাওয়াত। এ সময় অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি সাখাওয়াত। গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে এ তথ্য জানান।


গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে হওয়া আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দুটি তদন্ত করছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাফুজুল হক। আদালতে আসামিকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়ে তিনি দুদিন তাঁকে জেরা করেছেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সাখাওয়াত দাবি করেন, কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি কোথায় বিষপান করেছেন, তা তিনি জানেন না। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গোদাগাড়ী পরিদর্শনের সময় স্থানীয় এক ভ্যানচালক কমিটিকে বলেছিলেন, গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন অভিনাথ। তখন অপারেটর সাখাওয়াতই তাঁকে ভ্যান নিয়ে যেতে দেখে ডাকেন। এর পর তাঁরা দুজন মিলে অভিনাথকে নলকূপের সামনে থেকে ভ্যানে তুলে তাঁর বাড়িতে এনে নামিয়ে দেন। আর রবি একাই নলকূপের সামনে থেকে হেঁটে বাড়ি এসেছিলেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানান তাঁর ভাই সুশীল মারান্ডি।

জেরার সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে কৃষকদের পানিবণ্টনে অনিয়ম, সিরিয়াল না মানা, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সাখাওয়াত কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি।

তদন্ত কর্মকর্তা জানতে চেয়েছিলেন পানি কোন কৃষককে কত দিন পর দেওয়া হচ্ছে, তা খাতায় লেখা হয় কি-না এবং একজন কৃষককে যে সিরিয়াল অনুযায়ীই পানি দেওয়া হয়েছে, তার নিশ্চয়তা কি? জবাবে সাখাওয়াত জানান, ‘খাতায় কিছু লিখিত নেই।’ তবে সিরিয়াল কীভাবে নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে সাখাওয়াত কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
ওসি জানান, ঘটনা তদন্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে এলে বিএমডিএ কর্মকর্তারা জানান, ২১৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষের জন্য ওই গভীর নলকূপ। বাস্তবে চাষ হয়েছে ২৬৫ বিঘা। সাখাওয়াত ও বিএমডিএর হিসাব কেন মিলছে না, সে প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেননি চাকরিচ্যুত এই অপারেটর। প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি বিষপান করেন। এতে তাঁদের মৃত্যু হয়।

পরিবারের দাবি, বোরো ধানের জমিতে পানি না দেওয়ার কারণে তাঁরা দুজন বিষপান করেন। এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে অপারেটর সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে দুটি আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করা হয়। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে দুদিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
এদিকে ঘটনা তদন্তে বিএমডিএ আলাদা একটি কমিটি করেছিল। কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বিএমডিএর তদন্ত প্রতিবেদনে সাখাওয়াতের নানা অনিয়ম উঠে এসেছে। তাই গ্রেপ্তারের দিনই সাখাওয়াতকে চাকরিচ্যুত করে বিএমডিএ। নলকূপে পানি নিয়ে হয়রানির কথা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এলেও কেন দুই কৃষক বিষপান করেছেন, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তাই দুই কৃষকের পরিবারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ