Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

উপকূলভাগে দূর্যোগ মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌ যোগাযোগ অনুপস্থিত স্বাধীনতার

৫১ বছরেও নিরাপদ উপকূলীয় নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত হয়নি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১:৩৯ পিএম

দেশের উপক’লভাগ জুড়ে দুর্যোগপূর্ণ মৌসুম শুরু হলেও নিরাপদ নৌযোগাযোগ ব্যাবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। এমনকি স্বাধীনতার ৫১ বছরেও উপক’লভাগের বিশাল জনগোষ্ঠীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। ইতোমধ্যে কয়েকটি নৌ দূর্ঘটনায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মেঘনার শাখা গজারিয়া নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবিতে ইতোমধ্যে নারী ও শিশু সহ ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিনিয়তই অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশু জীবনকে হাতের মুঠোয় করে ভাটি মেঘনা মোহনা থেকে উপক’লের প্রতিটি নদ-নদী ও মোহনা পাড়ি দিচ্ছে। এমনকি সাগর বক্ষের বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরা থেকে ২৪ ঘন্টায় মাত্র একবার ভোলার মূল ভ’খন্ডে পাড়াপাড়ের সুযোগ রয়েছে ইজারা দেয়া সরকারী সী-ট্রাক ‘এসটি শেখ কামাল’এর মাধ্যমে।

অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপক’লভাগে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্টের ১২ নম্বর আদেশে রাষ্ট্রীয় নৌ বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি গঠন করা হয়েছিল। এমনকি উপক’লীয় নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করতে সরকারী অর্থায়নে ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৯ সালে ১২টি নতুন সী-ট্রাক সংগ্রহ করে সংস্থাটি। এছাড়াও বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে বিদ্যমান ৪টি উপক’লীয় নৌযানের দুটির পূণর্বাশন সহ ২০০২ সালে চীনা ঋনে আরো ১টি এবং গত বছর সরকারের নিজস্ব তহবিলে আরো দুটি উপক’লীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করে সংস্থাটি। উপরন্তু বিশ^ ব্যাংকের সুপারিশে উপক’লীয় নৌপথে যাত্রী পরিবহনে পরিচালন ব্যায়ের ওপর ভতর্’কি হিসেবে সরকার প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটিকে ৫০ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করে আসছে।

কিন্তু এরপরেও ২০১১ সালের মধ্যভাগ থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপক’লীয় নৌপথে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি বন্ধ রয়েছে। অথচ ২০০৯ সালে সরকারী প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ রুটের দুটি নৌযান পূণর্বাশন করা হয়। ইতোমধ্যে চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট লাইনে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১টি নতুন উপক’লীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহ করার পরে দু দফায় মেরামত ও পূণর্বাশনে আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। উপরন্তু প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে গত বছর আরো দুটি নতুন উপক’লীয় নৌযান সংগ্রহ করা হয়েছে। বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটের কথা বলেই সরকারী অর্থে ৩টি নতুন নৌযান সংগ্রহ সহ অরো দুটির পূণর্বাশন করে বিআইডব্লিউটিসি। এমনকি এসব নৌযানের পেছনে বিপুল অর্থব্যায় হলেও ২০১১ সালে পরে আর বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে যাত্রী পরিবহন পূণর্বহাল করেনি সংস্থাটি।

এদিকে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সুপারিশে সরকার প্রতিবছর ১৬ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের উপক’লকে ‘ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এলাকা’ হিসেবে ঘোষনা করেছে। এসময়ে ‘উপক’লীয় নৌযান হিসেবে বিশেষ কারিগরি ব্যাবস্থা সম্বলিত’ নিবন্ধিত ছাড়া অন্য কোন নৌযান উপক’লভাগে চলাচল নিষিদ্ধ। ফলে ইতোমধ্যে উপক’লভাগে নৌযানের চলাচল সিমিত হয়ে গেছে। তবে অনেক এলকাতেই সরকারী বিধি বিধান উপক্ষো করে অবৈধ নৌযানও চলছে।
অপরদিকে বন্ধ হয়ে গেছে বরিশালÑভোলাÑল²ীপুর এবং ভোলা ও ল²ীপুরের মধ্যবর্তি মির্জাকালু Ñ চর আলেকজান্ডার রুটের সীÑট্রাক সার্ভিস দুটিও। বরগুনার চর দোয়ানীর সাথে পিরোজপুরের বড়মাছুয়া হয়ে বাগেরহাটের সণ্যাশী পর্যন্ত সীÑট্রাক সার্ভিসের মাধ্যমে অবহেলিত উপক’লীয় এলাকাটির সাথে রাজধানীর নিরাপদ নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার দাবীও দীর্ঘদিনের।

তবে সংস্থাটির ১৪টি সী-ট্রাকের ৪টি বিক্রীর ব্যবস্থা চুড়ান্ত হয়েছে। অপর ১০টির মধ্যে ‘এসটি খিজির-৫’ ও ‘এসটি-খিজির-৮’ ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে লক্ষ্ণীপুরের মজু চৌধুরীর হাট রুটে ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় চলছে। অভিযোগ রয়েছে খিজির-৮ সীÑট্রাকটি বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্ণীপুর রুটের জন্য ইজারা নিয়ে সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে তা বরিশালের পরিবর্তে ভোলার ইলিশা থেকে ল²ীপুর রুটে চালাচ্ছে ইজারাদার। এছাড়া ‘এসটি শেখ মণি’ হাতিয়াÑবয়ার চর রুটে ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় যাত্রী পরিবহন করছে বলে জানা গেছে।
এর বাইরে ‘এসটি-ভাষা শহিদ জব্বার’ চট্টগ্রামের কর্ণফ’লী ডকইয়ার্ডে মেরামতে রয়েছে দীর্ঘদিন। ‘এসটি-খিজির-৭’ ২০২০ সালের ১৪ আগষ্ট থেকে ভোলার একটি বেসরকারী নৌ কারাখানায় মেরামতের নামে পড়ে আছে। ‘এসটি শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত’ পাটুরিয়া ঘাটে গত ১০ ফেব্রæয়ারী থেকে পড়ে থাকার পরে অতি সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ রুটে যাত্রী পরিবহনে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ‘এসটি ভাষা শহিদ সালাম’ ও ‘এসটি সুকান্ত বাবু’ নামের দুটি সী-ট্রাকও ইজারাদারের ব্যবস্থাপনায় এতদিন টেকনাফÑসেন্টমার্টিন রুটে চলাচলের পরে কক্সবাজার ও টেকনাফে পড়েছিল। এ দুটি সীÑট্রাকও সংস্থার হিসেবে ইলিশা-মজু চৌধুরীর হাট রুটে যাত্রী পরিবহনের কথা রয়েছে।

ওয়াকিবাহল মহলের মতে, জনগনের অর্থে সংগ্রহ করা এসব সী-ট্রাকগুলো যথাযথ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালন করলে তা উপক’লীয় নৌ যোগাযোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারত।
এসব বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র একাধীক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি উপক’লীয় নৌযোগাযোগ আরো নিরাপদ করতে। ইচ্ছে থাকলেও নানা কারণে অনেক এলাকাতেই সংস্থার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক সার্ভিস পরিচালন সম্ভব নয়’ বলেও মত প্রকাশ করেন ঐসব কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ