পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঈদকে সামনে রেখে ফুটপাথ ও মার্কেটে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজ গ্রুপ। চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। ফুটপাথের ব্যবসায়ী থেকে উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী সবাইকে গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা। যারা চাঁদা তোলেন, তাদেরকে বলা হয় লাইনম্যান। এ লাইনম্যানদের মাধ্যমে তোলা চাঁদার টাকা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, দুর্নীতিবাজ কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা এবং অদৃশ্য গডফাদারদের পকেটে। রাজধানীর মার্কেট ও ফুটপাথজুড়ে চাঁদাবাজি করে এমন দুই শতাধিক গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপে সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়শত। এদের টার্গেট দিনে ১০ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা। লক্ষ্য রমজান মাসে চারশ’ কোটি টাকা চাঁদাবাজি। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চাঁদাবাজরা ধরা পড়ে। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই জামিনে বেরিয়ে যায়। আবার শুরু করে চাঁদাবাজি। আর ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজরা অনেকটাই বেপরোয়া। তারা আরো বলছেন, চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। তবে চাঁদাবাজরা এখন মোবাইল ফোনের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবার, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যার কারণে অনেক সময় চাঁদা দেয়ার তথ্য প্রমাণ থাকছে না ব্যবসায়ীদের কাছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, ঈদের আগে চাঁদাবাজদের ধরতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। কোনো ব্যবসায়ীকে হয়রানি করা যাবে না, যদি কেউ হয়রানি হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় তাকে অভিযোগ করতে হবে। থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া আছে সে বিষয়ে তারা আইনগত পদক্ষেপ নিবে। ঈদের আগে রাজধানীতে কোনো প্রকার চাঁদাবাজদের আশ্রয় দেয়া হবে না।
মতিঝিলের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রমজানের শুরু থেকেই আশেপাশের অনেক পাতি নেতা থেকে শুরু করে কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা কৌশলে ইফতার পার্টি, সাহরী পার্টিসহ নানা কথা বলে সাহায্য সহযোগিতা চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে যা পারছি সেটাই তাদের দিচ্ছি। অনেকেই মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাঁদা দাবি করছে। আমরা এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নিতেও ভয় পাই বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে প্রকাশ্যে গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে। যতটুকু পারি সমযোতা করে ব্যবসা করছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মৌচাক মার্কেটের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, রোজায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় লোকজন আমার কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়েছে। মোটকথা এটাকে চাঁদা বলা যায়, তবে রমজান মাসের জন্য আমি ওই টাকাটা দান করেছি।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কিছু পাতি নেতা প্রায় প্রতিদিন আমার অফিসে আসে এবং বলে আমরা অসহায়দের মাঝে ইফতার বিতরণ করব, কেউ আবার বলে সাহরি বিতরণ করব এ উপলক্ষে আপনি আমাদের সঙ্গে কিছু শরিক হতে পারেন। কৌশলে তারা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। এদের সাথে থানা পুলিশের সখ্যতা রয়েছে। তাই কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মাহমুদ ইনকিলাবকে বলেন, চাঁদাবাজির কারণে বাড়ছে সবজির দাম। যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে ক্রেতার ওপর। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও অস্বাভাবিক মাত্রায় ঊর্ধ্বমুখী। সবজি বিক্রেতা হানিফ বলেন, কাওরান বাজার পাইকারি মার্কেট থেকে সবজি কিনে আগারগাঁও সঙ্গীত কলেজের সামনে ‘ভোরের বাজারে’ তুলতে পথেই তিন স্পটে গুনতে হয় চাঁদার টাকা। এরপর বাজারে বিক্রি শেষে লাইনম্যানদের দিতে হয় চাঁদা। চাঁদাবাজদের এমন দৌরাত্ম্য রাজধানীর সর্বত্র।
মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার সবজি বিক্রেতা হানিফ বলেন, আমি অস্থায়ীভাবে তিন বছর ধরে ব্যবসা করছি। ছাত্রলীগের এক নেতাকে নিয়মিত টাকা দিয়ে আসছি। এক কনস্টেবল এসে প্রতিদিন থানা খরচ নিয়ে যায়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় থানা পুলিশ ও পেশাদার চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা এখন অতিমাত্রায় সক্রিয়। তবে কিছু পুলিশ চাঁদাবাজির কৌশল পরিবর্তন করেছে তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজির কাজে ব্যবহার করছে। এরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন খাত থেকে নিত্যদিন চাঁদা তুলছে। এসব খাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ অস্থায়ী কাঁচাবাজার, অস্থায়ী খাবার দোকান, বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ যানবাহন, রাস্তা ও ফুটপাথ দখলে নিয়ে বসানো দোকানপাট। ঈদ সামনে রেখে এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা মুখোমুখি অবস্থান করছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ততম মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের গলি, দৈনিক বাংলার মোড়, দিলকুশা রোড, আইডিয়াল স্কুলের সামনে শত শত অবৈধ দোকানপাট। এসব দোকানপাট থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হচ্ছে। এসব দোকানপাটের কারণে তীব্র যানজটে আটকে যায় রাজধানী। মতিঝিল থানা পুলিশ বলছে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেনি। তবে চাঁদাবাজি রোধে আমরা যথেষ্ট সোচ্চার রয়েছি। অভিযোগ পেলে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছি। নিয়মিত কম বেশি চাঁদা দিলেও রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে চাঁদাবাজরা খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। তারা স্থানীয় কাউন্সিলরের নাম বলে সকাল-সন্ধ্যা চাঁদাবাজি করে। প্রায় ১০ বছর ধরে অত্র এলাকায় চাঁদাবাজি করছে তারা।
গত শুক্রবার সরেজমিন শান্তিনগর এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত চলে শান্তিনগর ভোরের বাজার। শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগ মোড় যেতে মূল সড়কের একাংশ ও ফুটপাথ দখল করে বসে কাঁচাবাজার। এই বাজারে মাছ, গোশত, ডিম থেকে শুরু করে সব ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। দুই ঘণ্টার এই বাজারে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। এ বাজারে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতে প্রতি দোকানদারকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয়। এই বাজার থেকে প্রতিদিন মোটা টাকা চাঁদা তোলা হয়। চাঁদার টাকা কতিপয় পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
তবে চাঁদাবাজির বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ অনেক ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের আগে ব্যবসায় অনেক লাভ হয় আর এই সময়ে মিডিয়ার সামনে এসব বললে চাঁদাবাজরা তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করে দিতে পারে এজন্য তারা কিছুই বলতে চান না।
যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ও পেছনে মহাসড়ক দখল করে কাঁচাবাজার বসে প্রতিদিন। আছে অবৈধ লেগুনা, ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড। এখান থেকে দৈনিক কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এছাড়া যাত্রাবাড়ী মাছ, ফল ও কাঁচাবাজারে ট্রাক-পিকআপে মাছ নিয়ে এলেই বেপারিদের গুনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বিভিন্ন নামে-বেনামে এসব চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দোকান ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, তুষারধারা, সাদ্দাম মার্কেট, মহাসড়কের ওপর ফুটপাথ দখল করে অবৈধ সিএনজি, ইজিবাইক ও অটোরিকশা, প্রাইভেট কার স্ট্যান্ড এবং সড়কের দুইপাশে দোকান বসিয়ে চলছে বেপরায়া চাঁদাবাজি। কতিপয় পুলিশ সদস্যের যোগসাজশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা নামধারীরা এখান থেকে চাঁদা তোলে। সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ও পেছনে হিউম্যান হলার ও লেগুনা পরিবহণ স্ট্যান্ড রয়েছে। মহাসড়কে লেগুনা পরিবহণ নিষিদ্ধ হলেও ২ শতাধিক লেগুনা মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ায়। প্রতি লেগুনা পরিবহণ থেকে জিপির নামে দৈনিক ৫৫০ টাকা, লাইনম্যানের নামে ২০ টাকা করে আদায় করা হয়। যাত্রাবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে সুফিয়া প্লাজা পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাথে ৩০টি দোকান বসিয়ে প্রতি দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা করে আদায় করেন জনৈক সোনামিয়া।
ডিসি মো. শাহ ইফতেখার আহম্মেদ বলেন, অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে অবৈধ দখল ও অব্যবস্থাপনা এখন বাস্তবতা। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহলের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন। তবে চাঁদাবাজির সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি অনেক সময় লাইনম্যানরা বলে বেড়ায়। তারপরও চাঁদাবাজির সঙ্গে কতিপয় অসাধু পুলিশ, রাজনীতিক ও প্রভাবশালী মহলের সমন্বয় থাকতে পারে। যদি কোনো পুলিশের সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগি কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামেও চাঁদা তোলা হচ্ছে। খিলগাঁওয়ের জিসান, মিরপুরের শাহাদাত ও লিটু, কারওয়ান বাজারের আশিক, বাড্ডার মেহেদী, মগবাজারের রনি, আদাবরের নবী, মোহাম্মদপুরের কালা মনির, শাহ আলীর গাজী সুমন, পল্লবীর মোক্তার, কাফরুলের শাহীন সিকদার, যাত্রাবাড়িতে ইটালি নাসির, জুরাইনের কচির নাম ব্যবহার করছে চাঁদাবাজ চক্র। বাড্ডা এলাকায় ডালিম, রবিন, ভাগ্নে ফারুক, আরিফ, মান্নান, রমজান, দুলাল, মানিক, শিপলু, রায়হান, রুবেল, রিয়াদ, রামপুরায় কালা পলাশ ও মুরাদ, গুলশান-বনানীতে টিপু, মহাখালীতে অপু, মিলন ও জামাই মুকুল, সাততলা বস্তিতে মনির ও লম্বু সেলিম, খিলগাঁওয়ে খালেদ ও মানিক, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদে জাহাঙ্গীর ও সায়েম আলী, হাজারীবাগে বুলু, লিংকন, তপু, জনি, রফিক, বিল্লু ও মুন্না, কলাবাগানে নাজিম বাবু ও ইমন, মোহাম্মদপুরে গালকাটা মোশারফ, লম্বা মোশারফ, চিকা জসিম, আহম্মদ, সাজ্জাদ, মোহন, পাভেল, লোটন, চায়নিজ তানভীর, রবিন, আদিত, মীম, খলিল ও হাজী আক্কাস এবং শাহ আলীতে বল্টু রাসেল, মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বরে কালাচান ও কিলার বুলবুল চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। শাপলা চত্বরে আরিফ চৌধুরী, পল্টনে দুলাল মিয়া ও তার সহযোগী, গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্স ও রাস্তায় আমিন মিয়া, সাহিদ ও লম্বা হারুন, জুতাপট্টিতে সালেক, গোলাপশাহ মাজারের পূর্ব-দক্ষিণ অংশে ঘাউড়া বাবুল ও শাহীন টাকা তুলছে। ঢাকা মেডিক্যাল চত্বরে ফুট দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলছে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিহ্নিত কর্মচারী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।