Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সই

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সই ওমিক্রণের তুলনায় ১০ গুণ বেশি সংক্রমণশীল। এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের ফলে চীনের বাণিজ্যিক নগরী সাংহাইয়ে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। লকডাউন দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি ভারতেও এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এটি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রথম বৃটেনে শনাক্ত হয়। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মাত্র ৬০০ টিরও মতো নমুনায় পাওয়া গেছে। তবে আমাদের দেশে সম্প্রতি ওমিক্রনের সংক্রমণ পার করেছে। তাই একই প্রজাতির হওয়ায় এটি শনাক্ত হলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনের উপ-ধরন বিএ.২’র চেয়ে নতুন রূপান্তরিত এক্সই ভ্যারিয়েন্টটি ১০ শতাংশ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, প্রাথমিকভাবে বিএ.২ উপ-ধরনের তুলনায় এক্সই ভ্যারিয়েন্টটি ১০ শতাংশ বেশি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে বিএ.২ উপ-প্রজাতিটি সারা বিশ্বে সর্বাধিক ছড়িয়ে পড়ছে। যা গত এক মাসে সমস্ত ওমিক্রন সংক্রমণের প্রায় ৯৪ শতাংশের জন্য দায়ী। বিএ.১ উপ -প্রজাতির প্রকোপও তীব্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে।

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এক্সই ভ্যারিয়েন্টটি অতিসংক্রামক ধরন ওমিক্রনের বিএ.১ এবং বিএ.২ প্রজাতির সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ডা. মোহাম্ম আতিকুর রহমান বলেছেন, সম্প্রতি ভারতে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সই। মুম্ব^াইয়ের একজনের শরীরে কোভিড-১৯-এর নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের এই রূপটি ওমিক্রনের বিএ.২ উপপ্রজাতির তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। তাই সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।

ভাইরাসবিদরা বলছেন, ওমিক্রন প্রজাতি গত বছর সনাক্ত হয়েছিল, বর্তমানে ৯০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের জন্য দায়ী। এর দুটি বিশিষ্ট উপ-প্রজাতি রয়েছে, যার নাম বিএ.১ এবং বিএ.২। একটি বিএ.৩ নামে আরেকটি উপ-প্রজাতিও রয়েছে, তবে এটি পরিচিত নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে, বিএ.১ উপ-প্রজাতি ছিল সবচেয়ে ব্যাপক। বাংলাদেশে বিএ.২ তৃতীয় ঢেউয়ের সময় সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ছিল। বিএ.২ কে বিএ.১ এর থেকে কিছুটা বেশি সংক্রমণযোগ্য বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। যদিও এটি বেশি বিপজ্জনক ছিল না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রন) প্রফেসর ডা. নজমুল ইসলাম বলেন, করোনার এক্সই ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমণশীল হিসাবে প্রমান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। তবে এখনো তেমনটি লক্ষ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, তবে আমরা এ বিষয়ে নজর রাখছি, দেশে এই ভ্যারিয়েণ্ট শনাক্ত হলে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এক্সই প্রজাতি যে ওমিক্রনের অন্যান্য জাতের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা, তার কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। যা লক্ষ্য করা গেছে তা হল এক্সই প্রজাতি প্রভাবশালী বিএ.২ প্রজাতির তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ বেশি সংক্রমণযোগ্য হতে পারে। তিন মাস আগে সনাক্তকরণের পর থেকে এক্সই প্রজাতির সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কোথাও বাড়েনি। যা প্রমাণ করে এটি বর্তমানে বড় উদ্বেগের বিষয় নয়। এছাড়াও এটির মধ্যে বিএ.১ বা বিএ.২-র থেকে আলাদা কোনও কিছু পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্র্রতি বলেছে, বিশ্বব্যাপী বর্তমান উচ্চ স্তরের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রিকম্বি^ন্যান্টসহ আরও প্রজাতি সম্ভবত আবির্ভূত হতে থাকবে। করোনাভাইরাসগুলির মধ্যে পুনর্মিলন সাধারণ এবং এটি একটি প্রত্যাশিত মিউটেশনাল ইভেন্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। এক্সই প্রজাতিকে ‘রিকম্বি^ন্যান্ট’ বলা হয়। এর মানে এটিতে ওমিক্রনের বিএ.১ এবং বিএ.২-র মিউটেশন রয়েছে। রিকম্বি^ন্যান্ট প্রজাতি অস্বাভাবিক নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটি বা ততোধিক পরিচিত প্রজাতির মিউটেশন বৈশিষ্ট্য থাকা এমন রূপগুলির সর্বদা বিকাশ ঘটে। প্রকৃতপক্ষে, ডেল্টা এবং ওমিক্রনের বৈশিষ্ট্যগত মিউটেশন ধারণ করে এমন রূপগুলিও চিহ্নিত করা হয়েছে। ভাইরাস এবং অন্যান্য জীবের জেনেটিক মিউটেশনের এলোমেলো প্রক্রিয়া ক্রমাগত ঘটতে থাকে। কিন্তু এই মিউটেশনের একটি ছোট অংশই ভাইরাসের সংক্রমন বা গুরুতর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে।

এদিকে গত বুধবার ভারতের মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ঘোষণা করেছে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে ৫০ বছরের এক নারী করোনাভাইরাসের সদ্য আবিষ্কৃত এক্সই প্রজাতির সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় স্পষ্ট করেছে ভারতে এখনও কোনও রোগীর শরীরে এক্সই প্রজাতির সংক্রমণ সনাক্ত হয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের যেকোন ভ্যারিয়েন্টর সংক্রমণ আসতে পারে, এমন ধারনা উড়িয়ে দেয়া যায় ন। কারণ করোনাভাইরাস নির্মূল হয়ে যায়নি। এটি মিউটেশনের মধ্য দিয়ে চলছে। একটি নতুন প্রজাতি অনেক সময় অনেক বেশি সংক্রমণযোগ্য হতে পারে, পূর্বের সংক্রমণ থেকে অর্জিত অনাক্রম্যতাকে এড়াতে পারে বা আরও গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। তবে একই প্রজাতি থেকে পুনরায় সংক্রমণ সাধারণত খুব কমই হয়ে থাকে।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ