পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কয়েকটি নৌপথ সচল রাখা হলেও জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত (শুষ্ক মৌসুম) এসব নদীতে পানির প্রবাহ ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ইতোমধ্যেই নদীতে পানি না থাকায় কৃষক সেচের জন্য পানি পাচ্ছে না। এই সময়টাতে নদী, খাল-বিলে পানি থাকার কথা থাকলেও পরিস্থিতি একেবারেই উল্টো। নদীগুলোতে চর পড়ে গেছে। প্রবাহ নেই। খাল-বিলের মাটি ফেটে চৌচির। দেখে মনে হয় যেন চৈত্র মাস। পানি নিয়ে কৃষকের মধ্যে চলছে হাহাকার। ভারতের সাথে ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি থাকলেও শর্ত অনুযায়ী পানির ন্যায্য হিস্যা পায় না বাংলাদেশ।
আর তিস্তাসহ অভিন্ন অন্য ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার চেষ্টা চলছে বছরের পর বছর। এক সময় ভারতের পক্ষ থেকেই বলা হতো, বাংলাদেশ পানির ব্যবহার করতে জানে না। যেটুকু পানি পায় তাও তো চলে যায় বঙ্গোপসাগরে। সেই বাংলাদেশ যখন বর্ষার পানি ধরে রাখতে ‘গঙ্গা ব্যারাজ’ বানানোর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এনেছে; তখন ভারতের আপত্তির মুখেই তা আটকে আছে। বাংলাদেশ চায় ভারতকে সাথে নিয়েই এই ব্যারাজ নির্মাণ করতে। আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যাবেন। এই সফরে তিস্তার পানি ভাগাভাগি চুক্তি ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ প্রসঙ্গে ভারতের ইতিবাচক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা।
গঙ্গা নিয়ে ভারতের সাথে ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তি থাকলেও গত বছর শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ স্মরণকালের সর্বনি¤œ পানি পেয়েছে। গত বছর শুষ্ক মৌসুমের শেষ দশ দিনেও (২১ থেকে ৩১ মে) বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সর্বনি¤œ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশের পাওয়ার কথা। আর চুক্তির ২-এর ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী এই দশ দিনে পাওয়ার কথা ৪১ হাজার ৮৫৪ কিউসেক। কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে এই পরিমাণ পানি দেয়নি। এই দশ দিনে বাংলাদেশ পানি পেয়েছে ২৯ হাজার ৪৮৯ কিউসেক। একইভাবে ১১ থেকে ২০ মে এই দশ দিনে বাংলাদেশের পানি পাওয়ার কথা ৩৫ হাজার কিউসেক। কিন্তু পেয়েছে ২৬ হাজার ১৫৫ কিউসেক। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ স্মরণকালের সর্বনি¤œ পানি পায় ২১ থেকে ৩১ মার্চ এই দশ দিনে। এ সময়ে মাত্র ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে ভারত। এরপর ১ থেকে ১০ মে বাংলাদেশকে দেয়া হয় দ্বিতীয় সর্বনি¤œ পানি, যার পরিমাণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৬৪৮ কিউসেক। আর ১১ থেকে ২০ এপ্রিল ভারত বাংলাদেশকে তৃতীয় সর্বনি¤œ পানি দেয়। যার পরিমাণ হচ্ছে ১৮ হাজার ২৮২ কিউসেক।
চুক্তির পর থেকে বাংলাদেশ গঙ্গার পানি নিয়ে এত ভয়াবহ ভোগান্তির কবলে আর পড়েনি। ভারতের সাথে ত্রিশ বছর মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই উভয় দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি হয়। এ বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু না হতেই পানি নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। পদ্মা অববাহিকাজুড়েই পানির জন্য চলছে হাহাকার। গেল বছর পানি কম পাওয়া নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির মাধমে প্রতিবাদও জানানো হয়েছে। জবাবে ভারত বলেছে, উজানে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় তাদের পক্ষে এর চেয়ে বেশি পানি দেয়া সম্ভব নয়। যে পরিমাণ পানি ফারাক্কা পয়েন্টে জমা হচ্ছে তাই ভাগাভাগি করে নিচ্ছে দুই দেশ। ভারতের এমন জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি বাংলাদেশ। এরপরও বন্ধুপ্রতিম ভারতকে তাগিদ দিয়েছে চুক্তির সব শর্ত মেনে চলতে। এ প্রসঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, গঙ্গা চুক্তির ৮ নম্বর ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছেÑ প্রয়োজনে পানির প্রবাহ বাড়াতে উভয় দেশ মিলে পদক্ষেপ নেবে। এক্ষেত্রে নেপালের কুশি ও গন্ধকী নদীতে জলাধার নির্মাণ করে গঙ্গায় পানি প্রবাহ বাড়ানোর একাধিক প্রস্তাব বাংলাদেশ দিয়েছে। কিন্তু ভারত নেপালে জলাধার নির্মাণে বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক নয়। এতে করে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে। এবারের শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি নিয়ে আরো করুণ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির এখন একমাত্র পন্থা হচ্ছে বৃষ্টিপাত। বাংলাদেশের মানুষ বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। দেশের অনেক এলাকায় বৃষ্টির গান কৃষকের গলায় ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে...’।
শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই পানির অভাবে পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর মতো তিস্তার অবস্থাও খুবই করুণ। পানি না থাকায় মুহুরি সেচ প্রকল্প, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, জিকে সেচ প্রকল্প, রাজশাহী সেচ প্রকল্প, তিস্তা সেচ প্রকল্পের বেশিরভাগ জমি সেচের আওতায় নেয়া সম্ভব হবে কি নাÑ তা নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত বছর অনেক সেচ প্রকল্পে রেশনিং করে পানি দেয়া হয়েছে। এবার কিভাবে কৃষককে পানি দেয়া হবে সেই পদ্ধতি নির্ধারণেরও কাজ চলছে। তবে বছরের পর বছর পানি নিয়ে ভোগান্তির কারণে এসব নদী অববাহিকার কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুম এলেই পানির জন্য তাদের হাহাকার লেগেই থাকে। বৃষ্টির দেখা না মিললে এবার বোরো আবাদ মার খাওয়ার আশঙ্কা কৃষকের মনে। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কৃষক জমিতে ঠিকমতো সেচের পানি না পেলে চলতি বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
অন্যদিকে, তিস্তার পানি শুষ্ক মৌসুমের আগেই এতটা কমে গেছে যে, পানির প্রবাহ ৬শ’ কিউসেকে এসে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবাহ আরো কমে যেতে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়ায় কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী জানান। তার মতে, তিস্তা সেচ প্রকল্পে পানির অভাবে আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
সরকার তিস্তার নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারতের সাথে সব ধরনের আলোচনাই চালিয়ে গেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কারণে এই তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, তিস্তা চুক্তি সই নিয়ে খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ সরকার। তাই এ বিষয়ে নতুন করে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি সই নিয়ে বল এখন ভারতের কোর্টে। চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। চুক্তিটি নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হবে না। ওই খসড়ার ভিত্তিতেই দ্রুত চুক্তি সই হবে বলে আমরা আশা করছি।
এদিকে বছরের পর বছর পলি জমে ভরাট হয়ে সঙ্কুচিত হচ্ছে বিল নদীর আয়তন। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের দুই শতাধিক নদী, শাখা নদী, উপ-নদী ও সহ¯্রাধিক বিল ভরাট হয়ে আবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। এতে শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই নদী-বিলনির্ভর প্রায় পাঁচ লাখ হেক্টর বোরো জমিতে সেচ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিল-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বিলুপ্তির পথে এ অঞ্চলের দেশী প্রজাতির মাছ।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের এক সময়ের খড়¯্রােতা নন্দকুজা, ভদ্রাবতী, সরস্বতী, ইছামতি, গুমানী, আত্রাই, গুড়নদী, করতোয়া, ফুলঝোর, তুলসী, চেঁচুয়া, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গা, ঝরঝরিয়া, কাকন, কানেশ্বরী, মুক্তাহার, কাকেশ্বরী, সুতিখালি, গোহালা, গাড়াদহ, স্বতী, ভেটেশ্বর, ধরলা, দুধকুমার, সানিয়াজান, তিস্তা, ঘাঘট, ছোট যমুনা, নীলকুমার, বাঙ্গালী, বড়াই, মানস, কুমলাই, সোনাভরা, হলহলিয়া, জিঞ্জিরাম, বুড়িতিস্তা, যমুনেশ্বরী, মহানন্দা, টাঙ্গান, কুমারী, রতœাই, পুনর্ভবা, ত্রিমোহনী, তালমা, ঢেপা, কুরুম, কুলফি, বালাম, ভেরসা, ঘোড়ামারা, মালদহ, চারালকাঁটা, পিছলাসহ দুই শতাধিক নদী, শাখা নদী ও উপনদী নাব্যতা হারিয়ে মরা নদীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
এছাড়া পাবনা, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার ঘুঘুদহ বিল, গাজনার বিল, শিকর বিল, কাজলকুড়ার বিলসহ সহ¯্রাধিক বিল শুকিয়ে জেগে উঠেছে সমতল ভূমি। এক সময় এসব বিলে সারা বছরই পানি থাকত। আর এখন বছরের নয় মাসই পানি থাকে না। ফলে কৃষকরা নানা রকম ফসলের আবাদ করছেন। কুড়িগ্রামের ১৮২টি বিলের মধ্যে দীঘলাছড়ার বিল, বোছাগাড়ির বিল, ইউসুফ খাঁর বিল, নাওখোয়া বিল, চুবাছরির বিল, কুশ্বার বিল, মেরমেরিয়ার বিল, চাছিয়ার বিল, হবিছরি বিল, পেদিখাওয়া বিল, কয়রার বিলসহ বেশির ভাগ বিলে ফসলের আবাদ হচ্ছে। অন্য বিলগুলোতে বছরের আট মাসের বেশি সময় পানি থাকে না। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট জেলার বিলগুলোর একই অবস্থা। চলনবিলে এক হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে বেঁচে আছে ৩৬৮ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে মাত্র ৮৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সারা বছর পানি থাকে। পানি সরে গেলে বিলগুলো ফসলি জমিতে রূপান্তরিত হয়।
নদী-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাঁচ লাখ হেক্টর বোরোর জমিতে সেচ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিকাজ হয়ে পড়েছে গভীর-অগভীর নলকূপনির্ভর। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। খনন ও সংস্কারের অভাব, অপরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ, বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও বিল রক্ষায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ না নেয়ায় উত্তরাঞ্চল থেকে নদী-বিলের অস্তিত্ব এক এক করে মুছে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদী-বিল শুকিয়ে জেগে উঠেছে দিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ। কৃষকরা মাঠে ধান, পাট, সরিষা, রসুন, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ফসল আবাদ করছেন।
রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে দুই শতাধিক নদী ও সহ¯্রাধিক বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ভূউপরিস্থিত পানির অভাবে প্রায় ১২ লাখ হেক্টর এক ফসলি জমি তিন ফসলিতে পরিণত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে পাবনা জেলায় এক লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর, সিরাজগঞ্জে ৯১ হাজার হেক্টর, রাজশাহী জেলায় ৯০ হাজার হেক্টর, নওগাঁ জেলায় এক লাখ ২০ হাজার হেক্টর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৮৭ হাজার হেক্টর, নাটোর জেলায় ৬৬ হাজার হেক্টর, বগুড়া জেলায় ৩১ হাজার হেক্টর, জয়পুরহাট জেলায় ১৪ হাজার হেক্টর, গাইবান্ধায় ৬৯ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টর, নীলফামারী জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টর, লালমনিরহাট জেলায় ৫১ হাজার হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় এক লাখ হেক্টর, দিনাজপুর জেলায় এক লাখ ২৫ হাজার হেক্টর, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬৩ হাজার হেক্টর এবং পঞ্চগড় জেলায় ৭৯ হাজার হেক্টর এক ফসলি জমি সেচের পানির অভাবে তিন ফসলিতে রূপান্তর করা যাচ্ছে না।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমতার এক জরিপ প্রতিবেদনে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলে বিলের সংখ্যা এক হাজার ৫৬১টি। এর মধ্যে সহ¯্রাধিক বিলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। পলি জমে বিলের মুখ ভরাট হয়ে যাওয়া এবং পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় এসব বিল শুকনা থাকে। বছরের পর বছর বিলগুলোতে পলি জমছে। গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। পরিণত হচ্ছে নিচু সমতল ভূমিতে। দীর্ঘদিন সংস্কার ও খননের উদ্যোগ না নেয়ায় বিলের পানির নির্দিষ্ট ধারাটিও হারিয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. মো: রেদওয়ানুর রহমানের প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, ২৬ বছর আগেও চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদী, ৩৯টি বিল ও ২২টি খাড়িতে বছরজুড়েই ৬ থেকে ১২ ফুট পানির গভীরতা থাকত। ফলে সারা বছরই নৌচলাচল করত। কিন্তু বছরের পর বছর পলি জমে এসব নদী, বিল ও খাড়ি ভরাট হয়ে গেছে।
ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ, ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে এবং ১৯৮০-এর দশকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বড়ালের (পদ্মা) উৎসমুখে স্লুইস গেট নির্মাণের ফলে চলনবিলের বিভিন্ন নদী, বিল, জলাশয় ও খাড়িগুলোয় পলি জমে ক্রমে ভরাট হয়ে গেছে। তাছাড়া বিলের মাঝ দিয়ে যথেচ্ছভাবে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ভূমি দখল করে বসতি ও দোকানপাট স্থাপন করায় নদী, বিল ও খাড়িগুলো সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, তিস্তা চুক্তি হতেই হবে। আর পাংশায় বিকল্প গঙ্গা ব্যারাজ আমরা ভারতকে সাথে নিয়েই করতে চাই। তাদের কারিগরি টিম এসেছিল। তারা সাইট দেখেছে। আসা করি গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতের সহযোগিতা পাব। তিনি বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ থেকে বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশই উপকৃত হবে। এই ব্যারাজ নির্মাণ হলে শুষ্ক মৌসুমে পানি নিয়ে বাংলাদেশের হাহাকার আর থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।