বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ক্রমেই যেন অশান্ত হয়ে উঠছে
কক্সবাজারের শান্ত পরিবেশ। গত ১০ দিনে কক্সবাজার এর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সেই চিত্রই ফুটে ওঠে। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মানুষ এত নির্দয় নিষ্ঠুর হতে পরে? আধিপত্য বিস্তারের জন্য আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এভাবে অবনতি ঘটাতে পারে? এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল।
গত বুধবার শহরের কাছেই পিএমখালী রোজাদার মুর্শেদ বলীকে ইফতারের পূর্ব মূহুর্তে দুর্বৃত্তরা শত শত মানুষের সামনে যেভাবে জঙ্গলি কায়দায় মারধর করে হত্যা করেছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। 'আমি রোজাদার এখন আমাকে মেরো না। মারতে চাইলে ইফতারের পরে মারো'। এরকম আকুতির পরেও নাকি ওই দুর্বৃত্তরা তাকে রেহাই দেয়নি।
সর্বশেষ ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার চকরিয়ার হারবাং মোবাইলে গেম খেলা কে কেন্দ্র করে মোঃ ইউনুস নমের এক দিন মজুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৮ মার্চ কক্সবাজার শহরের সিটি কলেজের সামনে কিশোর গ্যাং এর হাতে নির্মমভাবে খুন হয় চট্টগ্রাম হাজী মহসিন কলেজের ছাত্র রিদুয়ান। বৃহষ্পতিবার টেকনাফে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পাড়ার মানুষ। সচেতন মহলের প্রশ্ন এগুলো কি হচ্ছে?
কক্সবাজার সদরের পিএম খালীতে প্রতিপক্ষের হামলায় মুর্শেদ আলী প্রকাশ মুর্শেদ বলী নামের এক ব্যক্তিকে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইফতারির পূর্বমুহুর্তে দুর্বৃত্তরা তার উপর হামলা করে মারাত্মকভাবে আহত করে। দ্রুত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুর্শেদ বলীর স্বজনদের দাবী এলাকায় সে যে কোন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করত। সম্প্রতি একটি স্কিম নিয়ে মুর্শেদ অন্যয্য কাজের প্রতিবাদ করায় প্রতিপক্ষের লোকজন তার উপর ক্ষিপ্ত হয়।
তারা আরো জানান, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনীত
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আলাল ও প্রাক্তন ছাত্র লীগ কমিটির নেতা আব্দুল মালেক এবং বিএনপি নেতা মাহমুদুল হক মেম্বারের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা মুর্শেদকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে খুন করে।
মুর্শেদ আলী (৩৮) কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের মাস্টার মৌলভী ওমর আলীর ১ম পুত্র। ৯ম শ্রেণী থেকে মুর্শেদ আলী সৌদি আরব চলে গিয়েছিলেন। প্রায় ২০ বছর পর দেশে আসেন। এই সুযোগে তার প্রচুর সহায় সম্পদ হয়েছে। সত্যবাদী ও প্রতিবাদী মুর্শেদকে এলাকার প্রভাবশালীরা বাগে আনতে নাপের তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে ঘটনার দিন মুর্শেদ আলী রোজাদার ছিলেন। ইফতারির জন্য পার্শ্ববর্তী চেরাংঘর বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। এসময় প্রথমে ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে লোকজন সরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ইফতারী নেয়ার সময় তার মাথায় আঘাত করে দুর্বৃত্তরা। তখন মুর্শেদ নাকি তাদের বলেছিলেন-'আমি রোজাদার এখন আমাকে মারনা।' মারতে হলে পরে মার'। কিন্তু না চোরে না শুনে ধর্মের কাহনী। তাকে ইচ্ছেমত পিটিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে বীর দর্পে চলে যায় সন্ত্রাসীরা।
এব্যাপার মুর্শেদের ভগ্নিপতি সিরাজুল হক জানান, তার শেলক মুর্শেদ একজন সত্যবাদী ও প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন। আওয়ামী লীগ-বিএপি ঘরানার কিছু লোক এলাকার মানুষকে জিম্মি করে নানা বিষয় নিয়ে অন্যায়ভাবে ফায়দা লুটছে। মুর্শেদ এর প্রতিবাদ করত। সম্প্রতি একটি পানি সেচ স্কিম নিয়ে বিরোধে ওই মহল ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে খুন করে।
সর্বশেষ এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দিদার আলম নামের এক ব্যক্তিসহ তিনজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানা গেছে।
গত ২৮ মার্চ কক্সবাজার সিটি কলেজ গেইটে কিশোর গ্যাং
সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে চট্রগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র রিদুয়ানকে খুন করে। ওই ঘটনা স্থলের খুব কাছেই অবস্থিত কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ি।
এবিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের দাবি, ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী পিটি স্কুল এলাকার সন্ত্রাসী ছোটনের নেতৃত্বে গরু হালদা এলাকার সন্ত্রাসী আহাদ, রাহাত ও সাকিবের নেতৃত্বে সশস্ত্র কিশোর গ্যাং
সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে রিদুয়ানকে। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যান। হত্যাকারী কিশোর গ্যাং সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কক্সবাজার শহরে। মাঝ মাঝে পুলিশের অভিযানে কিছু গ্রেপ্তার হলেও এখনো অক্ষত তাদের গ্যাং।
৮ এপ্রিল চকরিয়ায় মোবাইলে গেইম খেলার মত তুচ্ছ ঘটনার বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন পিঠিয়ে হত্যা করে মোঃ ইউনুস (৪০) নামে এক ব্যাক্তিকে। চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মইক্কাঘোনা গ্রামে ৮এপ্রিল সন্ধ্যায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত দিন মুজুর মোঃ ইউনুস ওই গ্রামের দিল মোহাম্মদের পুত্র।
এদিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই গ্রামবাসী। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে স্থানীয় মো. শফিক, সরোয়ার, বেলাল, সুলতান ও পুলিশের কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেলালের আবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফার ভাই সুলতান আহমদ তার ভাইয়ের প্রভাব খাটানোকে কেন্দ্র করে মৌলভী পাড়া ও পাহাড় পাড়া গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল। এর জের ধরে (শুক্রবার) বিকেলে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও ঘটনা সামাল দিতে না পেরে র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
হোয়াইক্যং ফাড়িঁর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহেদ বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের একজন সদস্য আহত হয়।
এদিকে কক্সবাজার শহরে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং দমনের দাবী জানিয়েছেন আমরা কক্সবাজারবাসীর পক্ষে নাজিম উদ্দীন। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং
যেন এখন একটি আতংকের নাম। বেপরোয়া কিশোর গ্যাংএর হাতে ইতিমধ্যে পুশিশসহ অনেকেই খুন হয়েছে। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছে অনেকেই। ধর্ষিত হয়েছেন অনেক নারী। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেও অনেকেই ভয় পায়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মা-বাবাও এর জন্য দায়ী বলে অখ্যায়িত করে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তিনি। নাজিম উদ্দীন আরো বলেন, অনেক মা-বাবা সন্ত্রাসী সন্তানদের ছিনতাইকৃত টাকায় সংসার চালায়। তাই ওই সমস্ত মা-বাবাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের মূলোৎপাটন করতে ব্যর্থ হলে কক্সবাজারে পর্যটক আসবেনা।
পর্যটন শহর কক্সবাজারকে বেপরোয়া কিশোরগ্যাংএর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে মুক্ত রাখতে এখনই শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহবান জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।