Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিদায়ের পথে করোনা

টিকা সাফল্য সাড়ে ১১ কোটি দ্বিতীয় ডোজ, বুস্টার পেয়েছেন ১ কোটি সাড়ে ৪ লাখ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৭ এএম

দেশে করোনা মহামারির বিপর্যস্ততা কাটিয়ে টিকা ও চিকিৎসায় সাফল্যের মুখ দেখছে দেশ। গত কিছুদিন ধরে দেশে করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী মারা যায়নি। গতকাল নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার শূন্য দশমিক ৭৭ শতাংশ। টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ শতাংশ মানুষ এরমধ্যেই টিকার আওতায় এসেছে। ফলে অনেক দেশ এখনো করোনাভাইরাসের থাবায় আক্রান্ত থাকলেও বাংলাদেশ অদৃশ্য ওই ভাইরাস মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মোকাবিলায় টিকা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার কারণে ‘লকডাউন’ দীর্ঘস্থায়ী করতে হয়নি। এতে দেশের অর্থনীতি তেমন বাঁধার মুখে পড়েনি।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনার সংক্রমণে বেহাল চিকিৎসাসেবা, ভুয়া টেস্ট বাণিজ্য, দুর্নীতি, রদবদল, মেয়াদোত্তীর্ণ হাসপাতাল-ক্লিনিক ঘিরে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। যা অনেকটাই কেটে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ ব্যাপক রদবদল, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পরিবর্তন, পরিচালক প্রশাসনের পরিবর্তনসহ বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপে দীর্ঘদিন পর স্বাস্থ্য খাতে মানুষের আস্থা ফিরেছে। অথচ কিছুদিন করোনাভাইরাস মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করেছিল। করোনায় মারা যাওয়া প্রিয়জনকে শেষবার ছুঁয়ে দেখতে পারেননি সন্তানরা। আবার অনেকে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ফেলে রেখে গেছেন পরিবারের মানুষকে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলিয়েছে, করোনা নিয়ে এখন আর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বা হাহাকার নেই। সচেতনতা ও চিকিৎসক-নার্স-টেকনোলজিস্টসহ চিকিৎসা খাতের সফলতা এবং করোনা প্রতিরোধে অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার প্রয়াসে দীর্ঘদিন পর মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। এরই মধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করা হয়েছে। সাফল্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের যে সাফল্য, তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তার কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্বের এক নম্বর দেশ। এর জন্য কৃতিত্বের দাবিদার চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সর্বস্তরের জনগণ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, করোনার সময় আমাদের চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরলসভাবে মানুষের সেবা করে গেছেন। দুই শতাধিকের বেশি চিকিৎসক করোনায় মারা গেছেন। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিকসহ যারা মারা গেছেন; সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি বলেন, করোনা কী জানতাম না আমরা। আলাদা কোনো বেড ছিল না, সেখানে আমরা ১৮ হাজার বেড তৈরি করেছি। ১২০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছি। কয়েক হাজার বেডের সঙ্গে অক্সিজেন সংযোগ দিতে পেরেছি। একটি পিসিআর ল্যাব ছিল, বর্তমানে সারা দেশে ৮৭৯ ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে সরকার এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায়। মন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস পরিশ্রম এবং প্রধানমন্ত্রীর দুরদর্শী সিদ্ধান্তে ‘লকডাউন’ দীর্ঘস্থায়ী করা হয়নি। যে কারণে অন্যান্য দেশ যখন লকডাউনে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, বাংলাদেশে তখন স্বাভাবিক ছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রম থেকে মানুষের জীবনযাত্রা। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও চিকিৎসা খাতের এ সাফল্যের ভাগিদার সবাই বলে উল্লেখ করেন জাহিদ মালেক

এদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট এক্সই শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি অমিক্রনের বিএ.২ সাব-ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ভয়াবহ। যুক্তরাজ্যেও করোনাভাইরাসের নতুন এই প্রজাতি চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাবিষয়ক এজেন্সি জানায়, এখন পর্যন্ত অনেকের শরীরে এ নতুন ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদিকে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছেÑ চীনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক নগরী সাংহাইয়ের করোনা পরিস্থিতি। লকডাউন দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। অবশ্য নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

সূত্র মতে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের আওতায় এসেছে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি মানুষ। যা টিকা প্রয়োগে টার্গেটকৃত জনসংখ্যার প্রায় ৯৭ শতাংশ এবং মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ। হত বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য অধিফতর থেকে পাঠানো করোনার টিকাদান বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন ১২ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার ৮৭১ জন। এছাড়াও দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ১১ কোটি ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার ৬৬১ জন এবং বুস্টার ডোজ টিকা পেয়েছেন এক কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২২৬ জন মানুষ। এগুলো দেয়া হয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম, ফাইজার, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপানসহ কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন দেশের টিকা সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে ১২-১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩০ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৯৪৬ জনকে। প্রথম ডোজ পাওয়াদের মধ্যে এখনও দ্বিতীয় ডোজ টিকা পায়নি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৪ জন শিক্ষার্থী। এদিকে, গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৩৭১ জন শিক্ষার্থীকে। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ২১ হাজার ৪৯ জনকে। অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে এ পর্যন্ত ২ লাখ ১১ হাজার ৯৭৯ জন ভাসমান জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় এসেছেন। তাদের জনসন অ্যান্ড জনসনের সিঙ্গেল ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের সাফল্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও এমিরেটাস প্রফেসর ডা. এবিএম আবদুুল্লাহ বলেন, করোনা মহামারির শুরুর দিকে ভয়, আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। অর্থনীতি, স্বাস্থ্য খাত, জনজীবন পড়েছিল হুমকির মুখে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছি। দেশে সফলভাবে চলছে টিকাদান। সবার সম্মিলিত প্রয়াসেই এ সাফল্য। কিন্তু সুস্থ থাকতে এবং দেশকে সুস্থ রাখতে এখনও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে উল্লেখ করেন দেশবরেণ্য এ চিকিৎসক।

প্রসঙ্গত, দেশে করোনা টিকার নিবন্ধন শুরু হয় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি। ওই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। ১২-১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীসহ দেশে ১৮ বছর বয়সি যে কোনো মানুষ এখন টিকা নিতে পারছেন। টিকার আওতায় অধিকাংশ মানুষ আসায় দেশে এখন করোনায় মৃত্যু নেই বললেই চলে। গতকাল শুক্রবারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় কোনো মৃত্যু নেই। পাশাপাশি করোনায় নতুন শনাক্ত মাত্র ৪৮ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ