Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এযাবতকালের সর্বাধিক জমিতে সুমিষ্ট তরমুজের আবাদ

উৎপাদন ৩০ লাখ টন অতিক্রম করলেও কৃষকরা ভাল দাম পাচ্ছে না

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২২, ৭:৫১ এএম

দেশে এ যাবতকালের সর্বাধীক পরিমান তরমুজের আবাদেও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না এবার। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৪৬ হাজার সহ দেশে প্রথমবারের মত প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সুমিষ্ট তরমুজের আবাদ হয়েছে। যা থেকে অন্তত ৩০ লাখ টন সুমিষ্ট তরমুজ উৎপাদন হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভাল। গত বছর আবাদ ছিল ৪২ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। তবে এবার ফসল বাজারে ওঠার মূল সময়টিতেই রোজা শুরু হওয়ায় বাজারে চাহিদা কিছুটা কম থাকায় কৃষকরা মাঠে দাম পাচ্ছেন না। ফরিয়ারা মাঠে প্রতিটি তরমুজ গড়ে মাত্র ৯০ টাকায় কিনলেও দু হাত ঘুরে বাজারে এসে তা ৩Ñ৪শ টাকার ওপরে বিক্রী হচ্ছে। ফলে কৃষক ও ক্রেতারা ঠকলেও লাভবান হচ্ছে ফরিয়াররা।
গত বছর সারাদেশে আবাদকৃত প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর মধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে রসালো তরমুজের আবাদ হয় বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই জানিয়েছে। যদিও গত বছর দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের আবাদ ছিল আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর কম। আর এবছর তা প্রায় দ্বিগুনে উন্নীত হয়েছে।
ডিএই’র মতে ২০২০ সালে দেশে ৩৮ হজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। ২০২১ সালে তা ৪২ হাজার হেক্টরে উন্নীত হবার পরে চলতি রবি মৌসুমে দেশে তরমুজের আবাদ প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টরে উন্নীত হল। যার মধ্যে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায়ই আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টরে । বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ছাড়াও পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর নদী তীরবর্তী জমিতে এখন চোখ রাখলেই সারি সারি তরমুজ চোখে পড়ছে। পাইকাররা পুরো জমির তরমুজ কিনে কৃষি শ্রমিকদের দিয়ে তা পাশর্^বর্তি খাল ও নদীতে রাখা নৌকায় করে দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন নদী খালেও এখন তরমুজ বোঝাই যন্ত্র চালিত নৌকা চোখে পড়ছে।
গত বছর দেশে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হলেও আবাদ বৃদ্ধির ফলে এবার উৎপাদন ৩০ লাখ টন অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এরমধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই এবার প্রায় ২০ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিÑঅর্থনীতিতে তরমুজ ইতোমধ্যে একটি বড় জায়গা করে নিয়েছে। তবে বিগত দুটি বছর করোনা মহামারীর মূল সময়ে কুমড়া পরিবারের সুমিষ্ট রসালো ফল তরমুজ বাজারে আসায় ক্রেতার অভাবে কৃষকরা ভাল দাম পায়নি। এবার সে পরিস্থিতি না থাকলেও রোজা শুরু হওয়ায় বাজারে ক্রেতার সংকট রয়েছে।
তরমুজ তার উৎপত্তিস্থল আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়িয়ে বহু আগেই বাংলাদেশ সহ দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া সহ বিশ্বের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। অত্যন্ত জনপ্রিয় এ ফল মূলত মৌমাছির সাহায্যে পরাগায়িত হয়ে উৎপাদন নিশ্চিত হয়। বর্ষজীবী, দিবস দৈর্ঘ নিরপেক্ষ ও লতানো প্রকৃতির তরমুজের গাছ বেলে দো-আঁশ থেকে এটেল দো-আঁশ পর্যন্ত সব ধরনের মাটিতে আবাদ হচ্ছে। দক্ষিনাঞ্চলের নদ-নদীবহুল নোনা পানিমূক্ত চরাঞ্চলের পলি মাটিতেও তরমুজের ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
মুলত ৫.৫ থেকে ৭.০ পিএইচ মাত্রার জমি সুমিষ্ট এ রসালো ফল আবাদের উপযোগী হলেও তরমুজের গাছ কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত লবনাক্ততা সহ্য করতে পারেনা। খরা প্রতিরোধক এ ফসল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে। যথেষ্ট পরিমান ভিটামিন-এ, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন ও পেপটিন সমৃদ্ধ রসালো এ ফল চীনা ভেষজবীদদের মতে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। পাকা তরমুজের রসালো শাস স্বাদে-গন্ধে যেমনি সমৃদ্ধ, তেমনি তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ঞা নিবারক। উন্নত বিশ্বে তরমুজ দিয়ে নানা ধরনের সরবত, জ্যাম, সিরাপ, গুড় ছাড়াও এ্যালকহল পর্যন্ত তৈরী হচ্ছে। এমনকি সাইট্রেন শ্রেণীর তরমুজ দিয়ে উন্নতমানের জেলীও তৈরী হয়।
কিন্তু আমাদের দেশ এখনো তরমুজ প্রক্রিয়াজাত করে কোন ধরনের খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতের উদ্যোগ নেই। কৃষি অর্থনীতিবীদদের মতে, ‘রসালো এ ফল প্রক্রিয়াজাত সম্ভব হলে তা দেশের কৃষক ও কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারত’। এমনকি দক্ষিনাঞ্চলে উৎপাদিত সারা দেশের ৬৫ ভাগ তরমুজ ছাড়াও পেয়ারা ও আমড়া সহ ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করার লক্ষে একটি ‘রপ্তানী প্রক্রিয়াকরন অঞ্চল’ স্থাপনের দীর্ঘ দিনের। ২০০৩ সালে ইপিজেড-এর চেয়ারম্যান সহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এ লক্ষ্যে বরিশাল সফর করে সর্বস্তরের মানুষের সাথে বৈঠক করলেও পরে আর কিছুই হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ