Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

শেখ হাসিনার হাতে দেশ থাকলে অচিরে শ্রীলংকার মতো করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১:১৯ পিএম

সরকার পুরো দেশটাকেই এখন নরকপুরিতে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গ্যাস নাই, চুলা ঠান্ডা, রাস্তায় যানজট, বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং, পুতি-দুর্গন্ধময় ওয়াসার ময়লা পানি, বাজারে আগুন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সড়কে মৃত্যু, খুন, ডায়রিয়াসহ নিত্যপণ্যের দাম আওয়ামী সিন্ডিকেট লাগামহীন ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে দিয়েছে।বেশির ভাগ মানুষ চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শেখ হাসিনার হাতে দেশ থাকলে অচিরে শ্রীলংকার মতো করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

বুধবার (০৬ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সরকারের ব্যর্থতা আর ইচ্ছাকৃত অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি এখন চলছে গ্যাসশেডিং। বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এই আছে, এই নেই। লাইনে পানি আছে তো গ্যাস নেই। আবার গ্যাস থাকলে, পানি নেই। তীব্র গ্যাস সংকটে রোজা রেখে ইফতারিও তৈরি করতে পারছে না তারা। বাসায় যখন গ্যাস নেই, তখন তৈরি হয়েছে আরেক দুঃসংবাদ। ফের বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা মানুষের জন্য তৈরি করছে বাড়তি সংকট।
তিনি বলেন, রাজধানীর যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর থেকে বেরোলেই স্থবির হয়ে যায় জীবন। যানজটে অলিগলি, প্রধান সড়ক সর্বত্রই এখন স্থবিরতা। একে তো তীব্র গরম, তার ওপর অসহনীয় যানজট, জীবন যেন ওষ্ঠাগত। তীব্র যানজটের কারণে লোকজনকে এখন ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। যানজটের এখন আর সকাল বিকাল বা রাত নেই। গভীর রাত এমনকি ভোরেও রাজধানী জুড়ে যানজট। ফলে লোকজন ঠিকমত অফিসে বা কাজে যেতে পারছেন না, ফিরতে তাদের গাড়িতে বা রাস্তাতেই ইফতার করতে হচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এখন রাজধানীবাসীর আরেক আতঙ্কের নাম ডায়রিয়া। করোনা মহামারির প্রকোপ কমলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া। প্রতি মিনিটে ১ জন এবং প্রতিদিন হাজারেরও বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক মহল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসার দূষিত পানির কারণে এই ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ওয়াসার বেহায়া দুর্নীতিবাজ এমডি তাকসিম এ খান গতকাল মঙ্গলবার গর্ব করে বলেছেন, “আমার বাসার পানিতেও দুর্গন্ধ আছে”। এ কথা বলার পরেও তিনি নির্লজ্জভাবে চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন। ঢাকা ওয়াসায় লুটপাটের বিশাল সিন্ডিকেটের মাথার মনি করে তাকে ১৩ বছর যাবত এমডি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছেন, আর এই সময়ের মধ্যে নিজের বেতন ভাতা বাড়িয়েছেন ৪২১ শতাংশ। এখন এখন বেতন-ভাতা পান মাসে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে নজীরবিহীন। এই এমডির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে, তিনি পানির দাম ও নিজের বেতন পাল্লা দিয়ে বাড়াতে পারেন। কিন্তু দুষিত পানি বিশুদ্ধ করতে পারে
সরকারের সমালোচনা করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার বড় বড় কথা বলে, সারাক্ষণ সপ্তসুরে গলাবাজি করে। ছবিতে বড় বড় ফ্লাইওভার, উড়াল সেতু বড় বড় ব্রীজ, মেগা প্রকল্প, দোতলা-তিনতলা রাস্তার ছবি দেখান যে, উন্নয়নে ভেসে যাচ্ছে দেশ। একেবারে প্রবল উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ সয়লাব-এসব উন্নয়নের গল্প শুনতে শুনতে জনগণ ক্লান্ত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন, বর্তমান পথ না ছাড়লে বাংলাদেশের পরিণতিও একই হবে। কেবলই সময়ের অপেক্ষা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বিএনপি বিষয়ক এই দুই গবেষক ওবায়দুল কাদের ও হাসান মাহমুদ সাহেব এবং এদের সাথে মাঝে মাঝেই যুক্ত হন নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর কথিত আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা। দুই দিন আগে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ সংকটে নাকি দেশ অন্ধকারে ছিল। গ্রামে ৪/৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না, আর শহরে তো লোডশেডিং আছেই। একটি সরকার একটানা একযুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও নিজেদের কোনো কৃতিত্ব নেই। তাদেরকে এখনো বিএনপির সঙ্গে তুলনা করেই তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়।
রিজভী বলেন, এই উপদেষ্টা যখন তখন নানাভাবে আবির্ভূত হন তখনি জনগণের মনে ভয় ঢুকে, না জানি ভেতরে ভেতরে দেশের কোনো সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। মাসখানেক আগে নিশিরাতের সরকারের দুই মন্ত্রীর ফাঁস হওয়া কথোপকথনে শোনা গেছে, কথিত এই উপদেষ্টার শত কোটি টাকার ফাইল কোনো নিয়ম না মেনেই পাশ করে দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মানুষের ভরা ফসলের ক্ষেত-খামার, প্রতিরক্ষা বাঁধ, বাড়ী-ঘর-রাস্তাঘাট সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারতের মেঘালয়- চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে। কৃষকের চোখের সামনে সব ডুবলেও চোখের পানিতে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার নেই। কৃষকরা তাদের একমাত্র ফসল হারিয়ে সর্বশান্ত। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ ডুবিয়ে আশপাশের বিভিন্ন জেলায় অকাল বন্যা পরিস্থিতির বিস্তার ঘটছে। ভারত থেকে আসা পানির ঢলের কারণেই বাংলাদেশে অকাল বন্যায় লাখ লাখ একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, মানুষের ঘরবাড়ী ভেসে যাচ্ছে। এসব এলাকায় বাঁধ দেয়ার জন্য শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। হাওড় রক্ষা বাঁধ উঁচু ও টেকসই করে নির্মাণ করা হলে এবং সংস্কার কাজ যথাযথ হলে এতবড় ফসলহানির ঘটনা ঘটতে পারতো না। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের আত্মীয়স্বজন এবং তাদের দলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম ও লুটপাটের বিচার আর বছরে একটি মাত্র ফসল হারা কৃষকদের কান্নার দায় কার ?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ